বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ সফল ভারতের চেয়ে

নোবেলজয়ীর এ প্রশংসা তাৎপর্যপূর্ণ
নতুনধারা
  ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের বিভিন্ন সাফল্যের প্রশংসা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী 'দ্য নিউইয়র্কার'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে গড় আয়ু ও নারী, শিক্ষা, জাতিগত সহাবস্থানসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে বেশি সফল বলে মন্তব্য করেছেন। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরে এসে আর্থ-সামাজিক নানান বিষয়ে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে বাংলাদেশ। এ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গণ্য করছে। অপরদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নানান সূচকে এগিয়ে আছে এমন তথ্যও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। সুতরাং বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে যখন একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন, তখন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ-ভারত তুলনামূলক আলোচনায় তিনি আরও বলেছেন, ভারতের সমাজে হিন্দুত্ববাদী চিন্তার সংকীর্ণতা যেভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র সেদিক থেকে অনেকটাই ভিন্ন। জাতিগত সহাবস্থান বাংলাদেশের জন্য অনেক সুফল বয়ে এনেছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। আমরাও মনে করি অমর্ত্য সেনের এই মন্তব্য বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। বলাই বাহুল্য, বহুজাতিকতাকে ভারতকেও সফলতা এনে দিচ্ছিল। তবে এক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে এই জাতিগত সহাবস্থানকে ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু হয় বলে এই অর্থনীতিবিদ যে মন্তব্য করেছেন তাও প্রণিধানযোগ্য। উলেস্নখ্য, বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে ভারতে জোরদার হিন্দুপন্থী আন্দোলন হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) মহাত্মা গান্ধীজিকে খুন করে। এ বিষয়টি তুলে ধরে বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ওপর তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি- বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেছেন, বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো উদার নন মোদি। ভারতের গণতন্ত্রে তুমুল সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ভারতে গণতন্ত্র নিয়ে মানুষ মুখ খুলতেও এখন ভয় পান। আগে কখনো এমন অবস্থা দেখিনি। এমনকি ফোনেও তারা এ বিষয়ে আলাপ করতে চান না। বলেন, সাক্ষাতে বলব। এটা গণতন্ত্রের পরিবেশ নয়, পন্থা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে হবে। সেটাই গণতন্ত্র। এ ছাড়াও জন স্টুয়ার্ট মিলের বক্তব্যের উলেস্নখ করে তিনি বলেছেন, 'আমরা তার কাছ থেকে জেনেছি, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোট যেভাবেই গোনো, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে তুমি গণতন্ত্র পাবে না।' গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়াই দুষ্কর। এরপর তিনি প্রচন্ড আশাবাদের সঙ্গে বলেছেন, সব কিছুই হারিয়ে যায়নি। এখনও সাহসী কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দুয়েকটা টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু।

আমরা মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ একটি রাষ্ট্র ভারত। ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রও। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক অন্য যে কোনো সময়ের চেয়েও সুদৃঢ় ও সংহত। দুই দেশ অভিন্ন উন্নয়নের পথ ধরে, পারস্পরিক সহযোগিতায় হাত ধরাধরি করেই এগিয়ে চলেছে। এ ঘটনা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা জনি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং নেতারা বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইতিমধ্যে। এবার ভারতের প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদও বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন। স্মর্তব্য যে, নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ আগেও বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন।

সর্বোপরি মনে করি, সম্প্রতি বহুমুখী আত্মপরিচয়ের সহাবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ব্যাপক প্রশংসা করেছেন অমর্ত্য সেন, তা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। তবে মাঝেমধ্যে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের সামনে আসে, যা এই সম্প্রীতি রক্ষায় নেতিবাচক। সুতরাং প্রত্যাশা থাকবে, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি আমলে নিয়ে এমন উদ্যোগ জারি রাখুক, যাতে কোনো চক্র দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে। সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক- এমনইটিই আমাদের চাওয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70373 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1