শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্ররাজনীতি

সংস্কারের দাবি যৌক্তিক
নতুনধারা
  ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানান অহিতকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে 'ছাত্র রাজনীতি'তে পচন ধরেছে এমন কথা উচ্চারিত হচ্ছে সর্বত্র। যে ছাত্র রাজনীতির অতীত উজ্জ্বল, তা বর্তমান সময়ে এসে কেন লক্ষ্যভ্রষ্ট, কেন ব্যর্থ- তা অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া সঙ্গত। দেশের বিশিষ্টজনরাও মন্তব্য করেছেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয়, সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিশিষ্টজনের এ মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য এ কারণে যে, ছাত্র রাজনীতির অতীত অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা নব্বইয়ের গণ-অভু্যত্থানের দিকে তাকালেই ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার চিত্র ফুটে ওঠে। তখন ছাত্র রাজনীতিতে আদর্শের চর্চা অটুট ছিল, ছাত্রনেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, সুফলও তুলে এনেছেন নিজেদের অনুকূলে। সেই ছাত্র রাজনীতি বর্তমানে এহেন দশায় উপনীত হয়েছে যে, ছাত্র রাজনীতির কথা উঠলে আদর্শহীনতার কথাটিই সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয়। বর্তমানে ছাত্রনেতারা কেন আদর্শচু্যত হয়েছে, তা গভীর চিন্তার বিষয়ই।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভু্যত্থানে ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছে। পরে তা কলুষিত হয়েছে। তারা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকীকরণ সমাধান নয়, কলুষমুক্ত করতে হবে ছাত্র রাজনীতিকে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বনির্ভর করতে হবে। ছাত্র সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দলের লেজুড়মুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বনির্ভর ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল সংসদগুলোর নিয়মিত নির্বাচন হতে হবে। বিশ্লেষকদের এই মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, লক্ষ্য করা গেছে বিগত কয়েক দশক ধরে ছাত্র রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে, যা সর্বাংশে নেতিবাচক বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশিক্ষার জন্য ভর্তি হলেও বই-খাতা-কলমের বদলে ছাত্ররা হাতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে কিংবা আন্তঃসংগঠন কলহে জড়িয়ে খুন-খারাবিতে মেতে উঠেছে। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায়ই একেকজন ছাত্রনেতা অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ব্যবহার করেছে ছাত্র সংগঠনগুলোকে। এদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিপথগামী করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। দেশের উত্তরপ্রজন্মকে ধ্বংস করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ফলই যে বর্তমানে গোটা জাতিকে বহন করতে হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

স্মর্তব্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় কারখানা নয়, আশ্রমও নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কথা বলবে, মতের আদান-প্রদান করবে, চিন্তার প্রসার ঘটাবে। তারা রাজনীতিসচেতন হবে। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমতের, বিরোধী মতের নূ্যনতম স্থান নেই- এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। বিশ্লেষকরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কিংবা গণতান্ত্রিক রাজনীতি না থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা করেছেন। পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতিকে শুদ্ধ করতে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। যখন যে দল ক্ষমতায় তার ছাত্র সংগঠনের দখলে বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে- এ অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ক্ষমতাসীন নয়, বিরোধী মতও থাকবে। পরমতসহিষ্ণুতার পরিবেশ ও চর্চা থাকতে হবে। এর জন্য নিয়মিত ছাত্রসংসদ নির্বাচন হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। সার্বিকভাবে জ্ঞান ও মুক্তচিন্তার বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ রাজনীতি জরুরি বলে দেশের বিশিষ্টজনরা যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

সর্বোপরি বলতে চাই, ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের স্বার্থে পরিচালিত করতে নীতি-আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক ছাত্রনীতির বিকাশ ঘটাতে বিশিষ্টজনেরা যে মত দিয়েছেন তা আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। ছাত্র রাজনীতিতে সুদিন ফেরাতে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, পরমতসহিষ্ণু ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির ধারা থেকে ছাত্র রাজনীতিকে মুক্ত করতে উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিকদেরই। প্রত্যাশা করব, ছাত্র রাজনীতির হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার হোক, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ ও দেশপ্রেমের ধারায় পরিচালিত হোক ছাত্র রাজনীতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70988 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1