শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে অবনমন

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

গত এক বছরে ক্ষুধা নিবারণে কোন দেশ কতটা অগ্রগতি অর্জন করেছে তার একটি চিত্র পাওয়া গেছে ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক-২০১৯ তে। এ বছরও এই সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হলে সামগ্রিক অবস্থানে দুই ধাপ অবনমন ঘটেছে বাংলাদেশের। বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এবার ৮৮তম, গত বছর ১১৯টি দেশের মধ্যে এই অবস্থান ছিল ৮৬তম। খাদ্যনিরাপত্তাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মানভিত্তিক সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে ভারতের অবস্থান ১০২তম, অন্যদিকে পাকিস্তান রয়েছে ৯৪তম অবস্থানে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকেও বাংলাদেশের দুই ধাপ অবনমন ঘটনার তথ্য এসেছে। আর এবার জানা গেল ক্ষুধা সূচকে অবনমনের এ তথ্য। ক্ষুধা দূর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে, যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে থাকা এর বড় দৃষ্টান্ত। তবে সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে পড়ার ঘটনা কিছুতেই স্বস্তিদায়ক হতে পারে না।

তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সাত ক্যাটাগরিতে দেশগুলোর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে এই সূচকে। এতে অপুষ্টি, শিশুমৃতু্যর হার, পাঁচ বছরের শিশুদের ওজন ও উচ্চতার পার্থক্যসহ নানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের অবস্থান তৈরি করা হয়। এই ফলাফলে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় ভালো হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা। তালিকার ৬৬তম অবস্থানে শ্রীলংকা রয়েছে। এরপরে মিয়ানমারের অবস্থান ৬৯তম। এ ছাড়া নেপাল রয়েছে ৭৩তম স্থানে। আমরা জানি ২০১৭ এবং ২০১৮ সালেও এই সূচকে দুই ধাপ করে অগ্রগতি হয়েছিল বাংলাদেশের। সেখানে এ বছরের সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পরিতাপের।

তথ্য মতে, ক্ষুধা নিবারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে ধারাবাহিকভাবে। এরপরও বাংলাদেশ বৈশ্বিক অবস্থানে দুই ধাপ পেছানোর কারণ হলো অন্য দেশ বাংলাদেশের তুলনায় দ্রম্নত উন্নয়ন ঘটিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শিশুর প্রতিদিনের গ্রহণ করা খাদ্যের পুষ্টিমান গড়ে ১৮০০ কিলোক্যালরির কম হলে বিষয়টিকে ক্ষুধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ক্ষুধা সূচকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ অপুষ্টির শিকার; পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১৪ দশমিক ৪ শতাংশের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম; ওই বয়সী শিশুদের ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ শিশুর ওজন বয়সের অনুপাতে কম এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃতু্যর হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থানকে এ বছর গুরুতর ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে।

বলাই বাহুল্য, বিশ্বে মানুষের একটি বড় অংশ চরম ক্ষুধা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। গত বছরের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ১২৪ মিলিয়ন মানুষ চরম ক্ষুধার মধ্যে রয়েছে। দুই বছরের মধ্যে এ সংখ্যা অন্তত ৮ কোটি বেড়েছে। এ পরিস্থিতি নিশ্চিত উদ্বেগের জন্ম দেয়। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। যার ফলে এ বছরের ক্ষুধা সূচকে কয়েকটি দেশ এগিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ বছরের সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা দেশগুলো হলো- বেলারুস, বসনিয়া, চিলি ও কোস্টারিকা। আর চরম ক্ষুধার মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- মধ্য আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, ইয়েমেন ও চাদ। একই সঙ্গে ভেনিজুয়েলা, মালয়েশিয়া, লেবানন, জর্ডান এবং ওমানও রয়েছে তালিকার শেষের দিকে।

সর্বোপরি বলতে চাই, সেসব মাপকাঠিতে প্রতিবেদনে তৈরি করা হয়, সে বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে আরও সজাগ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষুধা নিবারণসহ, শিশুর পুষ্টিমান রক্ষা, শিশুমৃতু্যর হার হ্রাস ইত্যাদি বিষয়েও বাংলাদেশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সচেষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ। ফলে ক্ষুধা নিরাবণের ক্ষেত্রেও যাতে দ্রম্নত উন্নয়ন ঘটানো যায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71536 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1