বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুজবে বোরহানউদ্দিন রণক্ষেত্র

সরকারের কঠোরতার বিকল্প নেই
নতুনধারা
  ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ফেসবুকে ইসলামের নবী সম্পর্কে কটূক্তি ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের বিচারের দাবিতে এবার রণক্ষেত্রে পরিণত হলো ভোলার বোরহানউদ্দিন। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে তৌহিদী জনতার ব্যাপক সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ছাড়াও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষে পুলিশসহ আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক। সংঘর্ষের পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করায় বিজিবি, কোস্ট গার্ড,র্ যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর ও স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ধর্ম অবমাননার গুজব তুলে সংঘর্ষ, হামলার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলস্নাহ ও হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূূক্তি করার অভিযোগে বিপস্নব চন্দ্র শুভ নামে এক ব্যক্তির বিচারের দাবিতে রোববার সকালে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে 'তৌহিদী জনতা' নামের একটি সংগঠন। সমাবেশের জন্য পুলিশ অনুমতি না দেয়ায় স্থানীয় বাটামারার পীরের সংক্ষিপ্ত মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়। কিন্তু পুলিশ ওই পীরকে ঈদগাহ জামে মসজিদের দোতলায় নিয়ে গেলে গুজব ওঠে, মাওলানাকে পুলিশ আটক করেছে। আর এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তৌহিদী জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ গুলি চালায়। এতে চার জন নিহত হন এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ দেড় শতাধিক আহত হন।

পুলিশ গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে বিপস্নব চন্দ্র শুভ নামের ওই যুবক শুক্রবার রাতে বোরহানউদ্দিন থানায় গিয়ে জানান, তার ফেসবুক আইডি হ্যাকারের কবলে পড়েছে। আর শুক্রবার বিকাল থেকেই ফেসবুকে শুভর মেসেঞ্জারের একটি 'স্ক্রিনশট' ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যেখানে ইসলাম ধর্ম ও নবীকে নিয়ে কটূক্তি ছিল। ওই 'স্ক্রিনশট' ব্যবহার করেই রোববারের সমাবেশে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য ওই তরুণকে থানা হেফাজতে রাখা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ শুভর আইডি থেকে মেসেঞ্জারে আরও কিছু কথোপকথন পায়, যেখানে একজন লিখেছেন, তিনি আইডিটি হ্যাক করেছেন এবং সেটা ফেরত চাইলে শুভকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দেয়া হয় সেখানে। পুলিশ হ্যাকের সঙ্গে জড়িতদের আটকও করে। এরপরও তারা সমাবেশের আয়োজন করে। বলাই বাহুল্য, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে এর আগেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে বোরহানউদ্দিনের ঘটনাটিরও মিল রয়েছে। ফলে এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বললেও বোধ করি অতু্যক্তি হয় না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে নানান সময়ে 'ফেসবুকে' ধর্ম অবমাননার অভিযোগে যেসব হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত পরিতাপের। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় এভাবেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধমন্দির ও ৩০টি সংখ্যালঘুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে একদল লোক। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ তুলে লোকজনকে খেপিয়ে সংখ্যালঘু জেলেদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ করাসহ লুটপাট চালানো হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী- যা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়।

সর্বোপরি বলতে চাই, যেহেতু মাঝে মধ্যেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সামনে আসছে সেহেতু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক ও সচেতন থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি তদন্তের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে, এর পেছনে দেশবিরোধী কোনো স্বার্থ জড়িত কিনা। বাঙালি জাতি শত শত বছর ধরে যে অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কারণে কলুষিত হতে পারে না। এটা হতে দেয়াও সঙ্গত নয়। সংখ্যালঘুরাও এ দেশের নাগরিক, ফলে প্রত্যাশা থাকবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে কঠোর সাজা নিশ্চিত করা হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টরা আরও কঠোর থাকবে- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<72152 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1