শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

শিশুশ্রম বন্ধে স্থায়ী পরিকল্পনা জরুরি

শাকিলা আক্তার মহেশপাড়া, সোনাতলা, বগুড়া
  ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শিশুদের হাসি আমাদের সমাজে আনন্দের জোয়ার এনে দেয়, তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি আকাশের চেয়ে বিশাল, সমুদ্রের চেয়েও গভীর, সুন্দর একটি সংসার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীর। একটি শিশু একটি সমাজের রঙিন ঘুড়ি। মানুষের জন্য সে হবে রাহবার, তার চারিত্রিক গুণাবলির মাধ্যমে সত্যের আলো ছড়াবে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মানুষের হৃদয়ে। অন্ধকার সমাজে প্রজ্বলিত করবে মুক্তির আলো, পথ ভোলা মানুষের দেখাবে মুক্তির পথ, হতাশায় ডুবন্ত জাতিকে তুলে আনবে আশার আলোর রঙিন ঠিকানায়। শিশুরা পবিত্র, নিষ্পাপ, অনেকে শিশুদের ফেরেশতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেক গুণীজন শিশুদের নিয়ে লিখেছেন অনেক উক্তি, যা লাভ করেছে অমরত্ব। যেমন- শিশুদের মন স্বর্গীয় ফুলের মতোই সুন্দর। শিশুরা মাটির মতোই সুন্দর, এদের যে পাত্রে রাখা যাবে তারা তেমন রূপই ধারণ করবে। আজ সেই শিশুদের একটি অংশ আমাদের অবহেলায়, হেলায়, হেলায়, তারা শিশু বয়সে তাদের শৈশবকে হত্যা করে চলছে অনিশ্চিত গন্তব্যে। এরা গরিব অসহায় অতিদরিদ্র পিতৃ-মাত্রহীন অধিকার বঞ্চিত শিশু। অথচ সব শিশুর স্বাভাবিক ও সুন্দর শৈশবের নিশ্চয়তা জন্মগত অধিকার কাগজ-কলমে থাকলেও বাস্তবতা সত্যি করুণ। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা শুধু শ্রমেই নয়- বরং বিপুলসংখ্যক শিশু সমাজবিরোধী চক্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, প্রতিনিয়তই শুধু বেঁচে থাকার নিদারুণ অভিলাষে, দু'মুঠো ভাত খাওয়ার প্রত্যাশায়। কোথা থেকে, কত কালে, কত সালে এসেছিল এসব শিশুশ্রমিক বা পথশিশু জানি না, শুধু জানি পূর্ণ প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পথপ্রান্তে এই পুষ্পগুলো নিঃশব্দে ঝরে যায়। যে শিশুরা আগামী দিনের স্বপ্ন, সার্থকতা, তাদের জীবনের পরিণতি করুণ। বেদনাসিক্ত দুঃখ-কষ্ট বঞ্চনার কত অভিশাপ। প্রতিটি মানুষই চায় তার জীবন হোক সুন্দর এবং মুহূর্তগুলো হক আনন্দদায়ক। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আমাদের প্রকৃতি যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর মানুষের জীবন, মানুষের স্বপ্ন। তবুও কিছু স্বপ্ন হয়ে যায় কেন যেন- রংহীন, বর্ণহীন। শিশুদের দুঃখ-কষ্টের কথা ভেবে অনেক বছর আগে ব্যথাতুর হৃদয়ে কবি সুকান্তকে বলতে হয়েছিল, 'সবচেয়ে খেতে ভালো লাগে মানুষের রক্ত'। মানুষ আজ লোভী পশুদের মতোই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মানুষের অর্থলালসার রাজ্যে ফুলের মতো পবিত্র শিশুদেরও মুক্তি নেই যেন। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সমাজের পরিবারগুলো তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে সন্তানদের আগলে রাখতে বা অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে। এদিকে দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের চিত্র উল্টো। আবার যাদের পিতা-মাতা এই পৃথিবীতে নেই তাদের জন্ম যেন হয় আজন্ম পাপ। দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের সুবিধা বঞ্চিত প্রায় শিশুরাই নিতান্ত পেটের দায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোকে তাদের নিত্য-নৈমিত্তিক পেশা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসের শিকার সবচেয়ে বেশি এই শিশুরা।

শিশুদের কলকারখানায় নিয়োগ করে একশ্রেণির স্বার্থান্ধ মানুষ প্রচুর মুনাফা অর্জন করে চলছে। আইন এবং ফাইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাজনরা তাদের কাজ হাসিল করে চলছে। তা থামানোর মতো যেন কেউ নেই আমাদের দেশে। সমাজব্যবস্থায় তাদের তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। তারা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। আজ তারা এমন করুণ অবস্থায় অবস্থান করছে যে তাদের এক ঘণ্টার কার্যকলাপ কোনো লেখক-লেখিকা লিখে শেষ করতে পারবে না। তবে এটুকু সহজেই বলা যায় আজ যারা পথশিশু বা শিশুশ্রমিক তাদের যেন প্রকৃতি নেই, পরিবেশ নেই, অবুঝ শৈশব নেই, ভবিষ্যৎ চিন্তা নেই, পরিবারের অর্থ যোগান এবং নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করতে যেন তারা ব্যস্ত। আজ এমনভাবে বেড়ে উঠছে তারা যা ভবিষ্যৎ জাতির জন্য ভয় বা বিপদ। যা আমাদের দেশ ও জাতির কাম্য নয়। শিশুদের শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ ও নৃশংসতা শিশুশ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। বর্তমান এই উদাহরণ। সারাদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে ওই শিশুশ্রমিকটি যা আয় করে, তাতে তার নিজের আহারের সংস্থানও হয় না। অদক্ষ্য শ্রমিক বলে নেই তাদের কোনো নির্দিষ্ট মজুরি। সামান্যতম অমনোযোগের অভিযোগে লাথি ও বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয় তাদের। হয়তো এসব শিশুশ্রমিকের চোখের জলের হিসাব পৃথিবীর সভ্য সমাজের কাছে রাখার সময় নেই। এই হাজার হাজার শিশুশ্রমিকের চোখের জল আজকের পৃথিবীকে ভাবিয়ে তুলছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল সমাজ গড়তে শিশুদের সুষ্ঠ বিকাশের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের শিশুকেন্দ্রিক বাজেটে ৮০ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। গুণীজনরা বলেন, দরিদ্রতার হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব হলেই তা হবে শিশুশ্রম বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75043 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1