প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্পায়ন করতে গিয়ে খাদ্য উৎপাদন যেন কমে না যায়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এর আগেও তিনি বলেছেন, কৃষি জমি নষ্ট করে শিল্পায়ন করা যাবে না। এটা ঠিক যে, দেশের প্রয়োজনে শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, শিল্পের উন্নয়ন ঘটলে কর্মসংস্থান বাড়বে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু এই শিল্পায়ন কৃষি ও কৃষককে ত্যাগ করে নয়; খাদ্য উৎপাদন কমিয়েও নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) গভর্নর বোর্ডের সভায় তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
এককভাবে কৃষিতে নির্ভরশীল না থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেছেন, 'আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এককভাবে শুধু কৃষিনির্ভরতায় না থেকে এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিল্পের উন্নয়নও একান্ত প্রয়োজন।' বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের কাছে বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান উলেস্নখ করে তিনি বলেছেন, এর অন্যতম কারণ এ দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। আমাদের দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই তরুণ কর্মক্ষম। তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেন আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্যে সরকারের নানান পদক্ষেপের কথা তিনি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথাও তিনি উলেস্নখ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রটা আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে খাওয়াতে হলে কৃষি জমি রক্ষা করা অপরিহার্য। খাদ্য চাহিদা কখনো শেষ হওয়ার নয়। জনসংখ্যা বাড়লে খাদ্যের চাহিদাও বাড়বে। আমাদের কৃষি জমি এবং অব্যাহত উৎপাদনই এই খাদ্য চাহিদা পূরণে সক্ষম। কাজেই আমাদের দেশের জন্য, সমাজের জন্য কৃষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কৃষি উৎপাদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য খুবই গুরুত্বের দাবিদার। বলতেই হবে, স্বাধীনতার চার যুগে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি থেকে সাড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এ সময়ে দেশবাসীর বাসস্থান, শিক্ষা, অবকাঠামোসহ নানা প্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি ব্যবহৃত হয়েছে। অনুমিত হিসাবে চার যুগে কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। এ সময়ে উন্নত কৃষি উপকরণ ও আধুনিকীকরণের বদৌলতে খাদ্য উৎপাদন গড়ে তিন গুণ বাড়লেও জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে বিদ্যমান কৃষি জমি দিয়ে খাদ্য চাহিদা পূরণ করা যাবে কি না সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষি জমির সুসংরক্ষণ সরকারের কর্তব্য বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত।
উলেস্নখ করা প্রয়োজন যে, কৃষি এবং কৃষককে গুরুত্ব দিয়ে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা করে বলে এর আগেও প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেছেন। আবার সর্বজনবিদিত যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই কৃষিতে ভর্তুকির পাশাপাশি কৃষককে অর্থ সাহায্য দিয়ে 'কৃষিবান্ধব সরকার' হিসেবে আস্থা অর্জন করেছে। সরকার কৃষিতে গুরুত্ব দেয়ায় কৃষি বিজ্ঞানীরা জিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে কৃষি উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন। ধান, সবজি, ফলের নানান উন্নত জাত আবিষ্কার এবং পরিবর্তিত জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবন করায় কৃষি উৎপাদনও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বলাই বাহুল্য, কৃষি খাতে সরকারের সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার সুফলই বর্তমানে পাচ্ছেন দেশের জনগণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে 'শিল্পায়নে যেন খাদ্য উৎপাদন না কমে'- প্রধানমন্ত্রীর এরূপ বক্তব্য কৃষি ও কৃষকের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশের কল্যাণে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হিসেবেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পায়নে কৃষি জমির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু শিল্পায়ন নয়, কৃষি জমিতে বাড়িঘর-স্থাপনা নির্মাণেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবা যেতে পারে। অস্তিত্বের স্বার্থে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দরকার। এ বিষয়ে কুসংস্কারের গন্ডিও ভাঙতে হবে। কৃষিই যেহেতু বাংলার প্রাণ সেহেতু কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে যৌক্তিক উপলব্ধি এবং নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী এবং প্রশংসাযোগ্য।