শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবরার হত্যার চার্জশিট

দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক
নতুনধারা
  ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ২৫ জনকে আসামি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি বুধবার দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৫ আসামির মধ্যে ১১ জন সরাসরি হত্যায় অংশ নিয়েছে এবং বাকি ১৪ আসামির নাম এসেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এবং অন্যভাবে সম্পৃক্ততার কারণে। ৬ অক্টোবর রাতে নিছক 'শিবির' সন্দেহে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ সহপাঠীদের নৃশংস পিটুনিতে খুন হন। ভয়াবহ ও মর্মান্তিক এই ঘটনাটি রীতিমতো নাড়া দেয় সমগ্র দেশ ও জাতিকে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুখ্যাত ও মানসম্মত একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পারে, ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। হত্যাকারীরা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয় বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবে, তদুপরি ছাত্রলীগের নামধারী, বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত নেতা ও কর্মী হিসেবে। তবে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে এ হত্যার চার্জশিট প্রদান করায় নিহতের স্বজনদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।

আবরার হত্যার ঘটনাটি দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত হয়। গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ হত্যার পেছনের ঘটনা কী হতে পারে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। এসব তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে কিছু ইলিশ দেয়া এবং ফেনী নদীর পানি ভারতকে সরবরাহসহ তথাকথিত গ্যাস রপ্তানির খবরে 'ভিন্নমত' প্রকাশ করে আবরার পোস্ট দিয়েছিল তার ফেসবুকে। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, ভারতে গ্যাস রপ্তানিবিষয়ক চুক্তির ভুয়া সংবাদটি প্রচার করে বিবিসি বাংলা, যা নিয়ে পরে তারা সংশোধনী বার্তাও প্রদান করে। তবে এসব পোস্টই আদৌ উত্তেজক, নেতিবাচক, হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক নয়; সরকার ও দেশবিরোধী তো নয়ই। তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রীও বলেছেন, কাউকে ভিন্নমতের জন্য মেরে ফেলার কোনো অধিকার কারও নেই। সরকার তা সমর্থন করে না কোনো অবস্থাতেই। এরপর নিহত আবরারের বাবা চিহ্নিত ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন চকবাজার থানায়, যারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

যদিও এ ঘটনার পর চিহ্নিতদের গ্রেপ্তারসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের 'নির্যাতন সেল' নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। আলোচনায় আসে, বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের যে কক্ষে আবরারকে নির্মম নৃশংসভাবে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তার আর্তচিৎকার ও আর্তনাদে রুমমেটসহ আশপাশের কেউ আদৌ এগিয়ে এলেন না কেন, এমনকি প্রভোস্টসহ! আর ভিসি তো নিহত আবরারের লাশ দেখতে এমনকি জানাজায় অংশ নিতেও ক্যাম্পাসে যাননি অসুস্থতার অজুহাতে। যে কারণে ভিসিকে অবরোধসহ তার পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। এতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় ভিসিও নানাভাবে সমালোচিত হন। অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে উপাচার্য বুয়েটে শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন।

আমরা জানি, আবরার হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেন, আবরার হত্যাকারীদের শাস্তি পেতেই হবে। সুতরাং এখন যেহেতু চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, ফলে দেশবাসী প্রত্যাশা করে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত হোক। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আবরার হত্যাকান্ডে জড়িতরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত ছিল। অভিযুক্তদের সমীহ করে সালাম না দেয়ার বিষয়টিও আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের পেছনে অন্যতম কারণ। অভিযুক্তরা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে অন্যদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছিল, যাতে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের সমীহ করে এবং সালাম দেয়।

উলেস্নখ করা প্রয়োজন, ঢাবি, চবি, বুয়েটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অতীতে একাধিক হত্যা সংঘটিত হলেও কোনোটিরই বিচার হয়নি বলে আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টি দেশের জন্য স্বস্তিকর হতে পারে না। হত্যাকান্ডের বিচার না হলে খুনিরা অপরাধে উৎসাহিত হয়, যেহেতু এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা, সেহেতু আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যে কোনো হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত হোক। আর এটি নিশ্চিত করতে হবে সরকার তথা প্রশাসনকে। আবরার হত্যার দ্রম্নত বিচারসহ অপরাধীদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হোক এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75475 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1