সরকার শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে "ক্যাসিনো" ব্যবসাকে কেন্দ্র করে, সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের দুর্নীতি বাজকে ধরা হচ্ছে তাই সরকার প্রধানকে স্বাগতম। আমার মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু দুর্নীতি বাজদের হুমকি ধামকি দিয়েছিলেন কিন্ত অগ্রসর হতে পারেননি। পরে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জনসভা ডেকে জনগণকে বললেন, আর পারলাম না; সর্বত্র দুর্নীতি আর লুটপাট। 'আমি ভিক্ষা করে আনি, সব চাটার দল খেয়ে ফেলে, যে দিকে তাকাই সে দিকে আমার লোক। বঙ্গবন্ধু সে সময়ে দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন দুর্নীতি করে শিক্ষিত মানুষরা যারা গরিবের ঘাম ঝরা টাকা লেখাপড়া শিখেছে। গরিবের টাকা দিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, মেডিকেল কলেজ হয়েছে, সে শিক্ষিত সমাজ দুর্নীতি করে ওই শিক্ষিতরা দেশের মানুষকে সম্মান করে না এবং ঠকায়। তিনি আরো বলেছিলেন, সাহেব হয়েছেন কার টাকায়? শিক্ষিতরা লুটপাট ও দুর্নীতি করে- আমার কৃষক ও শ্রমিক দুর্নীতি করে না। জনগণকে বলি আপনারা তাদের বিচার করুন। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা যাচ্ছে না দুর্নীতির কারণে। তার পরে বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েও তিনি সফল হতে পারননি। অবশেষে নিজের বুকে বুলেটের আঘাতে জীবন দিয়ে জাতিকে ঋণী করে পরপারে চলে গেলেন জাতির জনক।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন ঝুঁকি নিয়ে। তিনি বলেন, ভয় বলে কোনো শব্দ আমার অভিধানে নেই। তিনি আরো বলেন, আমি নিজের ঘর থেকে অভিযান শুরু করেছি। সারাদেশে রন্ধে রন্ধে দুর্নীতি ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। শুধু দলে নয়, প্রশাসনেও একই অবস্থা। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন আজ জনগণের কাম্য।
একটি প্রবাদ বাক্য আছে "যত বড় শিক্ষিত- তত বড় ফন্দিবাজ" বর্তমানে যত বড় শিক্ষিত তত বড় দুর্নীতিবাজ। প্রায় ২০টির কাছাকাছি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানিত উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে! বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানিত উপাচার্য যদি দুর্নীতি ও চুরি করে আমাদের সন্তানরা অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা কি শিখবে তাদের কাছ থেকে? টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ৬০ হাজার টাকার চেয়ার কিনলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে- তিনি কী বার্তা দিলেন শিক্ষার্থী ও জাতিকে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ঘটনা দেশবাসীকে হতবাক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের কার্যক্রম এ রকম হবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সম্পর্কে একটি কথা বলতে চাই। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছেলেন শিক্ষিাবিদ (মরহুম) আবুল ফজলকে। সে বছর বিয়ে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ২% পাস করে, ছাত্রছাত্রীরা দল বেঁধে গিয়ে ভিসিকে ঘেরাও করে ছাত্ররা স্স্নোগান দিল এই ফলাফল মানি না মানব না। ভিসি মহোদয় বীর দর্পে এসে শিক্ষার্থীদের বললেন, তোমরা যেমন লেখাপড়া করেছ তেমন পাস করেছ আমার কিছু করার নেই। প্রয়োজনবোধে পদত্যাগ করে বাসায় চলে যাব- কিন্তু মাথা নোয়াব না। যা ছিল নৈতিকতার ভিত্তি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ কেন? তাদের নৈতিকতার অভাব কেন?
বঙ্গবন্ধু তার দল ও নেতাকর্মীকে আপন করে ভাবতেন, আদর স্নেহ দিতেন কর্মীদের এবং বিশ্বাস করতেন; কিন্তু নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেননি। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু সুশাসনের পথে এগিয়ে যেতেন তা হলে আজ এই অবস্থা হতো না এবং বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো না। পাকিস্তানি শাসকদের প্রশাসনে রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু; পাকিস্তানি শাসকরা দলীয় নেতা এক হয়ে কর্মীরা তার আদর স্নেহ বিশ্বাসকে পুঁজি করে ভিন্ন পথে এগিয়ে চলস্ন। এই বিষয়ে হাবানা সম্মেলনে-১৯৭৩ সালে ফিদেলকাস্টো বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু আমলে নেননি। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাসছিল দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে যাবে না তার কথা শুনবে কিন্তু তলে তলে খন্দকার মোশতাকের দলভারি করল। সাধারণ মানুষ বড় অসহায়। নেত্রীকে শক্ত হাতে সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে- রাঘববোয়াল, রুই, কাতলা বড় ছোট সব দুর্নীতিবাজকে ধরতে হবে এবং বিচার করতে হবে। বিচার ছাড়া ওদের গ্রেপ্তার করে লাভ নেই। নেত্রীর আশপাশে অনেক দুর্নীতি পরায়ণ মানুষ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে- তাদের বিচারের আওয়াতায় আনতে হবে। বিজয় অর্জনের পরপর চাটুকারেরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ফেলেছিল; সে দুর্নীতিবাজদের কারণে বঙ্গবন্ধুকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবন দিতে হয়েছে।
অফিস আদালতের কর্তা বলেন, আর পিয়ন বলেন, সিংহভাগ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জলদসু্য, বনদসু্য, নদীখাল দখলকারী, পাহাড় কেটে পাহাড় ধ্বংসকারীরা অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছে দুর্নীতিবাজ অসৎ মানুষরা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের- রাজনীতি হয়ে পড়েছে অর্থ কামানো। সরকারি কর্তারা কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। দলও প্রশাসনসহ সর্বত্র শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। শুধু অভিযান পরিচালনা করলে হবে না আইনের শাসনের অঙ্গীকারও থাকতে হবে। আইনের শাসন ছাড়া কোনো জাতির উন্নয়ন হয়নি বাংলাদেশের উন্নয়ন যথাযথ হবে না। পরিবহন আইন সম্পর্কে সেতুমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে উন্নয়ন টেকসই হবে না, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আইন কখনও মানুষ মানে না আইন মানতে বাধ্য করতে হবে- জনগণের আইন মানার অভ্যাস হয়ে গেলে তখন অসুবিধা হবে না। ১৯৮১/৮২ সালের কথা, আমি গুলশান এলাকায় গিয়েছিলাম, আমার কাজে এক বিদেশি মহিলা রিকশায় ওঠলে "রিকশাচালক উল্টো পথে চলতে গেলে" বিদেশেনি রিকশা চালককে উল্টো পথে চলতে দেয়নি অর্থাৎ আইন মেনে চলতে রিকশা চালককে বাধ্য করে। বাংলাদেশের মানুষ আইন মেনে চলতে অভ্যস্ত নয়, বিশেষ করে বিত্তবান/ ক্ষমতাবান/শিক্ষিতরা। নিরপেক্ষ ভাবে আইন প্রয়োগ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইন সবার কাছে সমভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আইন অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি প্রদান করতে হবে। ঢাকা সিটিতে সর্বত্র অরাজকতায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ঠিকমত কাজ করে না। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশনের লোক লিখে রেখেছে "এখানে ময়লা ফেলবেন না" মানুষ সেখানে ময়লা ফেলে কেউ জিজ্ঞেস করার নেই।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশ যেন সভ্য দেশ হতে পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসনের বিকল্প নেই। শোষণের পরিধি বেড়েছে অনেক। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তানি আমলে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের বৈষম্য ছিল- ৫৬-৪৪ স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের পরিবর্তন ঘটেছে ৮০-২০। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ গণমানুষের অবদান ছিল অনেক বেশি। বিজয়ের পর থেকে আজ অবধি তাদের অবদান স্বীকার করা হয়নি, তারা অবহেলিত। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি- হচ্ছে না দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতির কারণে। রাজনীতিতে ত্যাগের অনুপস্থিতি ভোগের রাজনীতি উপস্থিত। বীর জাতি বলে অহঙ্কার করার মতো আমাদের কিছু নেই; সুনীতি ও সুশাসনের অভাবে সব অর্জন হারিয়ে গেছে। এমনি অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী খুব বড় ঝুঁকি নিয়েছেন শুদ্ধি অভিযান নামে।
শিক্ষায় গলদ যেমন "লেখাপড়া শিখে যারা গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে তারা" এই ধরনের অনেক অপকথা শিশুকালে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয়, ফলে শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষকের বড় অভাব; তাই নীতি নৈতিকতা ও বিবেকসম্পন্ন শিক্ষার্থী সৃষ্টি হবে কেন? প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষকরা যথার্থ সম্মানজনক বেতন-ভাতা পায় না। কম বেতনে শিক্ষকরা চাকরি করেন- নেহায়েত পেটের দায়ে; তা ছাড়া যারা কোথাও চাকরি জোগাড় করতে পারে না তারাই শিক্ষকতায় আসেন কম বেতনে। বেতন-ভাতা দিয়ে শিক্ষকদের চাকরি আকর্ষণীয় ও মর্যাদাসম্পন্ন করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষকরা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা টাকা কামানোর শ্রমিক। প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষকরা নানা অযুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা চায়। নোট ও গাইড বই কোচিং তো আছেই, ফলে শিক্ষার কোনো মান নেই। শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা না চাইলে চলবে কি করে শিক্ষকদের? তারা যা বেতন-ভাতা পান তাতে শিক্ষকদের সংসার চলে না তাদের আর কি করার আছে? এক শ্রেণির মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে এমপিওভুক্তির লোভে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে। অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে- সুযোগ বুঝে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে দেয় এমপিওভুিক্ত করার দাবিতে। নৈতিকতা ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করা অবান্তর। সব ধরনে দুর্নীতিবাজদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে আইনের শাসন দ্ধারা।
১২ অক্টোবরের দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পাতার সংবাদে দেশবাসী জানতে পারে, চট্টগ্রাম নগরির বায়েজূদ বোস্তামী এলাকায় পাহাড়কাটা, চাঁদাবাজ, দখল বাণিজ্যকারী ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে বায়েজীদ থানার ওসি ভাষ্য মতে একাধিক মামলার আসামি বাহাউদ্দিন ওরফে মাটি বাহার, শামসুদ্দিন বাদল ও আনোয়ার হোসেন ওরফে সোর্স আনোয়ার। অভিযোগ রয়েছে যে কোনো উন্নয়ন কাজে তাদের চাঁদা দিতে হয়। তারা সরকারি পাহাড় দখল করে পস্নট বেচাকেনা করে আসছে- অনেকদিন যাবত প্রশাসনের কর্তারা দেখেও না দেখার ভান করে। শিল্প-কারখানায় চাঁদাবাজি করে মাদকবাণিজ্য করে বিপুল অর্থের মালিক বনে গেছে এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল থেকে ডিগবাজি করে যুবলীগে যোগদান করে ৩ জন; পাহাড়কাটা, মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও জুয়ার আসরসহ অবৈধ আয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। বায়েজীদ এলাকায় তাদের ভয়ে জনমানুষ তটস্থ, তারা হর্তাকর্তা বিধাতা প্রশাসন নিলিপ্ত। পশ্চিম বায়েজীদের যেমন চন্দন নগর, শহীদ নগর, চৌধুরী নগর, নিলাচর ডোবার পাড় ও আবসিক এলাকায় জুয়ার আসর বসিয়ে নানা অপকর্ম করে চলেছে। অপর দিকে বায়েজীদ থানার এস আই গোলাম মোহাম্মদ এই অপরাধ জগতের কর্ণধাদের সহযোগী বলে পত্রিকার খবরে জানা যায়। পুরো এলাকায় সন্ত্রাস পাহাড়কাটার, মাদক ব্যবসার রাজত্ব কায়েম করেছে শিল্প এলাকায়- এই ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম প্রশাসন চেয়ে চেয়ে দেখবে তা কি করে হয়? এলাকাবাসীর দাবি সন্ত্রাসের নায়কদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওয়াতায় আনা উচিত। পাহাড়কাটা, চাঁদাবাজ, দখল বাণিজ্যকারী ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত বিভিন্ন সিন্ডিকেট সারাদেশে বিদ্যমান। চট্টগ্রাম শহর/কক্সবাজরসহ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। রাজধানী শহরেও এ ধরনের সিন্ডিকেট আছে বলে অভিযোগ আছে। ক্যাসিনো ব্যবসা একদিনে গড়ে ওঠেনি। সব সিন্ডিকেটকে দমন করা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। প্রশাসনে সুনীতি/সুশাসন আনতে না পারলে জননেত্রী শেখ হাসিনার শ্রম পন্ড হয়ে যাবে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই, পাহাড়কাটার অবসান চাই। সুস্থ সুন্দর সমাজ চাই। প্রশাসনের সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা দরকার। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার কাছে আইনের শাসন প্রত্যাশা করে।
সর্বত্র চাঁদাবাজি বিরাজমান, আমার এলাকায় যারা আমার বাসা থেকে ময়লা নেয় তাদের দ্বারা চাঁদাবাজি করায় স্থানীয় নেতারা। সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিতে হয় স্থানীয় নেতাদের পরিচ্ছন্নকর্মীর অভিযোগ। পথে ঘাটে নালানর্দমায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারলে দুর্নীতি ৭০% কমে যাবে। টেন্ডারবাজি দুর্নীতির অন্যতম কারণ। দেশে মূল দুর্নীতি চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজি বন্ধ করলে গণপরিবহনসহ সর্বত্র নৈরাজ্য নানা অপকর্ম বন্ধ হয়ে আসবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাঁদাবাজি করতে হবে এটি কেমন কথা? দলের কর্মীর দোহাই দিয়ে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন; মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করছেন; তা কত বড় অন্যায়? সংখ্যায়েও তারা কম নয়। ১৯৭২ সালে ১৬ ডিভিশন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা আবার আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে নেতাকর্মীরা প্রচেষ্টা চালায় এবং তারা সফল হতে থাকে। নকল মুক্তিযোদ্ধা বাতিল করতে গেলে সিংহভাগ আওয়ামী নেতাকর্মীরাই বাতিল হবে। বিএনপি দলীয় ৪৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর অভিযোগ।
স্বাধীন জাতি মানে সভ্য জাতি। সুনাগরিক হবে দেশের মানুষ। সত্যবাদী ন্যায়পরায়ণ স্বাধীন জাতির পরিচয়। ন্যায়বিচার স্বাধীন জাতির অঙ্গীকার। দেশপ্রেমিক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। জনগণ ন্যায়বিচার পাবে সহজে। প্রশাসনে কোনো অবস্থাতেই অদেশপ্রেমিক কার্যক্রম হবে না; শহীদের আত্মা যেন কষ্ট না পায়; সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ৩০ লাখ শহীদ ২ লাখ ৬৯ হাজার মা-বোন পরম সম্পদ দান করেছে স্বাধীনতার জন্য। ২ লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সুপ্রশিক্ষিত দুর্ধর্ষ বাহিনীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে পাকি হানাদার বাহিনীকে পরাভূত করেছিল সুন্দর সুসভ্য জাতি বিনির্মাণের জন্য। বিজয় অর্জনের পর সব যেন ম্স্নান হয়ে গেছে। গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বেকারত্বের সংখ্যা আকাশ চুম্বি। অসৎ, প্রতারক, ঠকবাজ, শিক্ষিত ও দুর্নীতিবাজ বাড়ছেতো বাড়ছেই। যদি তাই হবে- ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে/নয় মাসের অসম মুক্তিযুদ্ধের কী প্রয়োজন ছিল? স্বাধীন জাতি মানে কিছু উঠতি পুঁজিপতি কিছু অট্টালিকা নয়। গণমানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকরা "গরিবী দূর করা" ২০% মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়নি। রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শিতা ও অসততা, মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি। সামরিক বাহিনীর একটি অংশের ক্ষমতা দখলের ইচ্ছা জাতিকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। দেশে দুর্নীতি ভরে গেছে। রাজনৈতিক নেতাদের সর্বদা মিথ্যাচার জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ গরিব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা না হলে স্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই। দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না। সাধারণ গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হবে না, হতে পারে না। স্বাধীনতাও অর্থবহ হবে না। দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
০২/১১/১৯ কালের কণ্ঠের সংবাদে জানতে পারি, মুক্তিযোদ্ধা হতে কেউ আবেদন করতে পারবে না জামুকার সিদ্ধান্ত, এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতম জানাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত আইনসম্মত কিনা? যদি আইনসম্মত না হয় আইন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে সরকারকে। যারা অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হবে তাদের মৃতু্যদন্ড দেয়া উচিত এবং সাক্ষী দিয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে তাদেরও কঠোর শাস্তি দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরৎ আনতে হবে; আইন ছাড়া সম্ভব নয়। আহাদ চৌধুরীসহ কেউ কেউ জামুকার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন তারা কি নকল মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে? ৪৯ বছরে যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ভুক্ত হতে পারেনি তাদের মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন কী? সবুজ মুক্তিবার্তায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭ শত ৯০ ছিলেন, তাহলে গোপনে তালিকা করে ১ লাখ ৫৮ হাজার করার কি প্রয়োজন ছিল? অপর দিকে জেনারেল হেলাল মুর্শেদ গং সবুজ বার্তাকে স্বীকৃতি দিয়ে নকল মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা শত বছর ধরে চলতে থাকবে? চৌধুরী এখনও স্বীকার করেন লালবার্তায় ৪ থেকে ৫% নকল মুক্তিযোদ্ধা আছে। যারা বাদ পড়েছে তারা ১৯ বছরে মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত হয়নি কেন? তাদের মুক্তিযোদ্ধা বানাতে তালিকার কার্যক্রম খোলা রাখতে হবে কেন। একমাত্র নকল মুক্তিযোদ্ধার কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা মর্যাদাহীন/অসম্মানিত হচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা অতি অপ্রতুল- সামান্য যা আছে তাতে ভাগ বসাচ্ছে নকলেরা। নকল মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের কলঙ্ক, ইতিহাসের কলঙ্ক, নকলদের বাতিল করতে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। নকলদের বাতিল করা প্রয়োজন। নচেৎ ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। নকলদের স্বীকার করা মানে ৩০ লাখ মুক্তিযুদ্ধের শহীদের আত্মার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। শুদ্ধি অভিযান মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পরিচালনা করে প্রয়োজন নকলদের বাহির করা। আওয়ামী লীগ সরকারের নৈতিক দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করা। এবং মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা জরুরি। মুক্তিযোদ্ধারা কোনো অপরাধ করলে তাদের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া উচিত। যারা জাতিকে একটি দেশ উপহার দিয়েছে তারা কেন অপরাধ করবে?
আবুল কাশেম চৌধুরী: কলাম লেখক