শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ বেড়েছে

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ যেন বাড়ছেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, নানা পদক্ষেপের মধ্যেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের প্রধান এই সমস্যার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ শতাংশ। এ ছাড়া তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। ৯ মাসের ব্যবধানে তা বেড়েছে ২২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। তবে এ প্রসঙ্গে এই বিষয়টিও আমলে নেওয়া দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হিসাব দিলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ, স্থানীয় অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা বলছেন, প্রকৃত হিসাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

আমরা বলতে চাই, খেলাপি ঋণের কারণে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। জুন পর্যন্ত ৬৭৫ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। ঋণ খেলাপি হিসেবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য বু্যরোতে (সিআইবি) উলেস্নখ করা হয় না। আর এ রকম ঋণের পরিমাণ ৭৯ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। সরকারের নির্দেশে বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করার উদাহরণও আছে। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এ রকম বিশেষ নির্দেশিত হিসাবে থাকা ঋণের পরিমাণ ২৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে জুন পর্যন্ত আরও ২১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করে দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। এই সব হিসাবে নিলে বাংলাদেশে এখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।

উলেস্নখ্য, সরকারের আমন্ত্রণেই আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা পর্যালোচনা করতে দুই দফায় বাংলাদেশে এসেছিল। আর লক্ষণীয় যে, পর্যালোচনা শেষে সংস্থাটি ৪৩টি সুপারিশ করেছে। ৬৮ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের নানা অব্যবস্থা ও সংকটের খোলামেলা আলোচনা করা হয়েছে। আমরা মনে করি এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। এ ছাড়া বিবেচনায় নেওয়া দরকার, বাংলাদেশের আর্থিক খাত বিশ্লেষণ করে আইএমএফ বলেছে, এখানে খেলাপি ঋণ আড়াল করে রাখা আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি দুর্বল, ব্যাংক পরিচালক ও ব্যবস্থাপকদের আচরণ বেপরোয়া। নিয়ম ভাঙলে শাস্তিও পান না তারা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় এবং বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

ঋণখোলাপির বিষয়টি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি ব্যাংকিং খাতের যে কোনো অনিয়ম রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংক খাতকে যে কোনো ধরনের অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু পরিচালনা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন জরুরি। বর্তমান বিশ্বে ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ফলে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে এ খাতে যেন কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা বা অনিয়ম না হয় সেটি রোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<77508 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1