বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা

বছরব্যাপী কার্যক্রম অব্যাহত থাক
নতুনধারা
  ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যানুসারেই এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। ২০১৮ সালে শুধু রাজধানীর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও চলতি বছর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসেবে মৃতু্যর সংখ্যাও বেড়েছে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতু্য হয়েছে ১২৯ জনের। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। বাস্তবতা হলো, এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এত রোগী কখনই হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। এমনকি এই সংখ্যা গত ১৯ বছরে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। উদ্বেগের যে, আগামী বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হতে পারে এমন সতর্কবার্তা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিশ্লেষকদের।

মরণব্যাধি ডেঙ্গুর প্রকোপ আমাদের দেশে এমন একটি প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যখন প্রতিবেশী ভারতেও ডেঙ্গুর ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটা কাকতালীয় নয়। উভয় দেশে এই সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে এ রোগ ভয়াবহভাবে বিস্তারের যোগসূত্র থাকতে পারে। ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা প্রজননের জন্য আদর্শ স্থান হলো জলাবদ্ধতা। এতদিন বিষয়টিকে সাধারণপর্যায়ে গুরুত্ব দেয়া না হলেও চলতি বছরের ঘটনায় জনগণের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশাকে প্রতিরোধ করতে হলে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার কারণেই যে, এ বছর মহামারী আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে- তা নানাভাবেই আলোচনায় এসেছে। অবশেষে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় প্রকোপ কিছুটা কমলেও গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে এখনো ডেঙ্গু থামেনি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ থাকবে।

আমরা জানি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার বছরব্যাপী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এডিস মশা প্রতিরোধে বছরজুড়ে সর্বাত্মক ব্যবস্থা দৃশ্যমান থাকবে। মশা নিধনের পাশাপাশি, মানুষকে এটাও বোঝাতে হবে যে, অহেতুক পানি জমে থাকে এমন কিছুই তারা ঘরে রাখবে না, কারণ সামান্য ডিমের খোসায় জমে থাকা পানিতেও এ মশার প্রজনন ঘটতে পারে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মতে, ডেঙ্গু রোগে বছরে বিশ্বে ২০ হাজার লোকের প্রাণহানি এবং ১০ কোটি লোক আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে এই রোগে মৃতু্য কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং সিটি করপোরেশনগুলোর কর্তব্য হওয়া উচিত রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর, নর্দমা পরিষ্কার ও মশা মারার ওষুধ নিয়মিত স্প্রে করা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এই রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। এ ছাড়া জনগণের দায়িত্ব হলো প্রতিটি পরিবার ও প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করা।

অস্বীকার করা যাবে না যে, এ বছর মহামারী আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় সরকার বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন ইতিপূর্বে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, গত ১৯ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া হয়েছিলেন মোট ৫০ হাজার ১৭৬ জন। উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, ২০০২ সালে দেশে প্রথম ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু রোগী দেখা যায়। সে সময় ৫ হাজার ৫১১ রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। ২০০১ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমলেও ২০০২ সালে রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর এ বছর তা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে বছরজুড়েই ডেঙ্গু থাকবে। ফলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতে হবে সবাইকে।

প্রত্যাশা থাকবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা অধিকতর আন্তরিক হবেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এবং দেশের সবাই সতর্ক ও সচেতন হলে ডেঙ্গু মোকাবিলা সহজ হবে বলেই আমরা মনে করি। নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের পদক্ষেপ জারি রাখবে- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<77860 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1