শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর উন্নয়ন চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন

নারীর অধিকার নারীকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। নারীবাদ নিয়ে আলোচনা আর নয়, এবার বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা জোরালো করা প্রয়োজন।
নাহার ফরিদ খান
  ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দিনে দিনে, কালে কালে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ তথা পরিবার। চিন্তাচেতনা, শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে পরিবর্তন আসে। অন্ধকার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা ভেঙে যুগে যুগে কালে কালে যারা আলোকবর্তিকা হাতে এগিয়ে যান তারা নমস্য ব্যক্তি। নারীদের চলার পথে বা উন্নয়নে পথে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। প্রাচীনকাল থেকেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা বৈষম্যের শিকার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সর্বদাই কঠোর অনুশাসনের বেড়াজালে বন্দি করেছে নারীর অস্তিত্বে, নারীর মর্যাদা, নারীর অধিকার। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। সতীদাহ প্রথা, বিধবা বিবাহ রোধ, বাল্যবিবাহ, জাত-পাতের বলি হতে হয়েছে শুধুমাত্র নারীদের। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা নিগৃহীত, নির্যাতিত, গৃহপালিত জীবের মতো ছিল।

নারীবাদ একটি শক্তিশালী শব্দ। এমন একটি শব্দ বা মন্ত্র যা নারীদের জাগরণের পথে নিয়ে যাবে, আলোর পথ দেখাবে, নারী নিজের শক্তি সম্পর্কে জানবে। তার মেধা বা মনন কতটা শক্তিশালী তা বুঝতে শিখবে নিজেকে জানবে সম্পূর্ণরূপে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া পর্দানশীল, অবরোধবাসিনী তৎকালীন নারীদের শিক্ষার আলোর পথ দেখিয়েছিলেন অন্ধকারচ্ছন্ন সমাজের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। কাজটি করার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাকীর্ণ। সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কতিপয় মহৎ ব্যক্তিদের জন্য সমাজ, সংসার তথা পরিবার পরিবর্তন হয়েছে। নারীবাদ পুরুষের বিরুদ্ধে কোনো ইসু্য নয়। নারীবাদ সমতার কথা, সমঅধিকারের কথা, সমসুযোগ সুবিধার কথা, তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু পাওয়ার কথা বলে। নারীকে মেয়ে মানুষ নয়, মানুষ ভাবতে শেখায়। স্বনির্ভর হলেই মেয়েরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। আগে শিক্ষা ও সচেতনতার প্রয়োজন। পাছে লোকে কিছু বলে অগ্রাহ্য করে নারীকে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বা মানসিকতার পরিবর্তন ভীষণভাবে প্রয়োজন। যেখানে নারী পুরুষের সমতা থাকবে না, ভালোবাসার সমতা থাকবে না, যেখানে প্রাপ্তির সমতা থাকবে না, যেখানে সম্মানের সমতা থাকবে না, আস্থাবিশ্বাসের সম্মান থকবে না সেখানে প্রতিবাদ হবে। অন্যায় থেকে অসন্তোষ। অসন্তোষ থেকে বিদ্রোহ। নারীবাদী কমলাবাসিনী বলেন, 'মেয়েদের এমনভাবে প্রতিপালন কর, বিয়ের সময় তাদের যৌতুক না দিয়ে তাদের সম্পত্তির মালিকানা দাও। তাদের শিক্ষিত কর।' নারীবাদ সমাজ, রাষ্ট্র পরিবারে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত সামগ্রিকভাবে। নারীবাদের সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জড়িত। জেন্ডার ইকুয়ালিটি যে দেশে বেশি সে দেশ তত উন্নত।

প্রথমে পরিবার থেকেই নারীর বৈষ্যমের শুরু হয়। একই পরিবারে ছেলের জন্য একরকম নিয়ম আর মেয়ের জন্য অন্যনকম নিয়ম। পরিবারে বা সমাজে ছোটবেলা থেকে বোঝানো হয় বা শেখানো হয়। মেয়েরা হবে লাজুক, লজ্জাবতী, নতমুখী, প্রতিবাদহীন, স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত, তিনি প্রভুসম। মেয়েরা ফুটবল, ক্রিকেট খেলবে না। তারা খেলবে পুতুল, রান্নাবাটী, গান-নাচ শেখা হারাম। ছেলে হবে সাহসী, সন্ধ্যা বা রাতে বের হওয়ার অধিকার তাদের জন্য নির্ধারিত। খাবারের ব্যাপারে অগ্রাধিকার পাবে। স্বামী ও ছেলে সন্তানদের জন্য খাবার দেওয়ার পরে যা থাকবে তাই মেয়েরা খাবে। এমনই প্রচলিত নিয়ম ছিল পরিবারে। ছেলেরা আগে খাবে মেয়েরা পরে। ছেলেদের লেখাপড়া আবশ্যক, মেয়েদের ততটা নয়। এক সময় মেয়েদের লেখাপড়া নিষিদ্ধ ছিল। এভাবেই বৈষম্যের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠে কন্যাশিশু। স্বভাবতই মেয়েরা ভীতু হয়। প্রতিবাদী হতে সাহস পায় না। তাদের প্রতি অন্যায় আচরণে তারা পরিবারের সমর্থন পায় না। সমাজ সংসার অসহায় নারীরা পরিবারের হাতে বন্দি থাকে। তাকে বুঝানো হয় বিয়ের আগে তার বাবা সর্বেসর্বা। স্বামীসেবা, সন্তান প্রতিপালন আর শ্বশুরবাড়ির প্রতি কর্তব্যপালন করে নারীর বাহবা খেতাবের তকমা পরে প্রশান্তি খুঁজে ফেরে। গ্রামের অশিক্ষিত দুঃস্থনারীরা অত্যাচার সইতে না পেরে অনেক সময় আত্মাহুতি দেয়। যুগে যুগে নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিষ্পেষিত, অবহেলিত নির্যাতিত হয়েছে। নারীর চরিত্রহনন কোনো বিষয়ই নয়। রাবণ সীতাকে অপহরণ করে রামের মতো স্বামীও সীতার পক্ষে দাঁড়াতে পারেনি। সীতাকে অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সমাজ, পরিবার মেয়েদের শিখিয়েছে সহ্য কর, ধৈর্য ধর। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজে মেয়েদের বোঝা মনে করা হয়। স্বামীর অত্যাচারে কোনো নারী ঘর ছাড়লে সেই দায়ভারও নারীকে নিতে হয়। সমাজ নারীর দিকেই আঙুল তোলে। ধর্মের আবরণে নারীকে শোষণ করার অপচেষ্টা চলেই আসছে। ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা যুগে যুগে হয়েছে। ধর্মের আবরণে সতীদাহ ছিল পূণ্য। আজ ভাবুনতো সেই নারকীয় দৃশ্য। কত নিষ্ঠুর, কত নির্মম, কত অমানবিক। সমাজপতিরা সতীদাহের পক্ষে ছিল। নগণ্য কতিপয় ব্যক্তি এর বিপক্ষে ছিলেন। তারা নিন্দিত হয়েছেন তখন, নন্দিত হয়েছেন আজকের যুগে। চিন্তাচেতনায় নারীকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিয়েছে, সমাজে পরিবর্তন এনেছে। সুশিক্ষা, অভিজ্ঞতার আলোকপাত, মুক্ত চিন্তাচেতনা মানুষের জীবনকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছে।

\হপোশাক নিয়ে নারীকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। শুনতে হয় অনেক কটুকথা। নারীদের ধর্ষণের পেছনে পোশাককে অন্যতম কারণ বলা হয়। পোশাক কখনও ধর্ষণের কারণ হতে পারে না। পোশাকের ব্যাপারে নারীর অবশ্যই স্বাধীনতা থাকা উচিত। পশ্চিমা দেশগুলোতে ঝডওগগওঘএ চঙঙখ বা ঝঊঅঝঐঙজঊ বা ঐঙঞ ঞটই-এ ঝডওগগওঘএ উজঊঝঝ পরেই স্নান করে কই সেখানে তো কেউ ফিরেও তাকায় না, ধর্ষণের প্রশ্নই ওঠে না। বিদেশে স্বল্পবসনে মেয়েরা যততত্র চলাফেরা করছে। তারাতো অশ্লীল শব্দবানে আক্রান্ত হয় না। যদি পোশাক ধর্ষণের কারণ হয়, তাহলে হিযাব পরা আপাদমস্তক ঢাকা তনু, নুশরাতরা ধর্ষিত হয় কিভাবে? ছোট্ট অবুঝ মেয়ে শিশু কেন ধর্ষিত হচ্ছে? শুধুমাত্র মানসিকতা বা চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন সমাজ ও পরিবারকে কলুষমুক্ত রাখতে পারে। একজন নারী প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও একা রাতে বের হতে পারবে না। কারণ নিরাপত্তার প্রশ্ন। রাতে নারীরা নিরাপদ নয়, অবশ্য দিনেও নয়, বিশেষ করে রাতেতো নয়-ই। কিন্তু কেন নয়? নিরাপদ নয় কাদের দ্বারা? একজন নারী যদি ধর্ষিতা হয় তাহলে দোষ কার। কাদের দ্বারা ধর্ষিতা হচ্ছে! দোষ নারীর কেন হবে? দোষ ওই ধর্ষকের। লজ্জা ওই ধর্ষকের হওয়া উচিত। ঘৃণা করা উচিত ওই ধর্ষককে। প্রশ্নাতীতভাবে শাস্তি পাওয়া উচিত ওই ধর্ষকের এবং শাস্তিগুলো জনসমক্ষে হওয়া উচিত প্রকাশ্যে। রাতদিন নারী-পুরুষের জন্য সমান হওয়া উচিত। রং দিয়েও বিচার করে সমাজে জেন্ডার নির্ধারণ করা হয়। যেমন ছেলেরা নীল রং ব্যবহার করবে, মেয়েরা গোলাপি বা লাল ব্যবহার করবে। দিনেদিনে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসছে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শিক্ষিত মেয়েরা বৈষম্যের শিকার। মেধা ও কাজে সমান দক্ষ হওয়া সত্ত্ব্বেও তারা বেতনের দিক থেকে বৈষম্যের শিকার। সুন্দরী, বিদূষী হলে পদোন্নতির পেছনে চরিত্র হননের অপচেষ্টা চলে অবলীলায়। নিম্নবিত্ত মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে দিনমজুরি করে টাকা পাওয়ার সময় বৈষম্যের শিকার হয়। একই কাজ করে ছেলেদের চেয়ে তারা কম মজুরি পায় অথচ প্রকৃতিগতভাবে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কম শক্তিধর। তবু একই কষ্টের কাজ মজুরি বৈষম্য নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে গার্মেন্টসে নারী কর্মচারীদের জয় জয়কার। এই অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মেয়েগুলো অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে ঘর সংসার সামলাতো, বাচ্চা জন্মদানের ফ্যাক্টরি হতো, অভাব অনটনে আধপেটা খেয়ে থাকত। স্বামীর হাতে মার খেতো, শাশুড়ির গঞ্জনায় অতিষ্ঠ হতো- এমনই ছিল বাস্তবচিত্র। কিন্তু এখন তারা গামেন্র্টসে কাজ করে তারা স্বাবলম্বী হয়েছে, নিজের আয়ে স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছে। স্বামী এখন গায়ে হাত তুলতে ভয় পায়, কারণ, এই মেয়েরা এখন প্রতিবাদ করতে শিখেছে, তাদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হয়েছে। মেয়েদের আত্মনির্ভরশীলতায় সমাজ ও পরিবারে উন্নতি হয়েছে। ধর্মের আবরণে মেয়েদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা আজকের নয়, প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। অথচ ধর্মে আমাদের মেয়েদের অনেক সম্মানিত স্থানে রাখা হয়েছে। স্বয়ং নবীজী তার স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচারণ করতেন, মর্যাদা দিতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। নবীজীর প্রথম স্ত্রী বিবি খাদিজা একজন ব্যবসায়ী নারী ছিলেন। তিনি তাকে সহযোগিতা করেছেন।

নারীদের নিজেদের শক্তভীত তৈরির পাশাপাশি নিজেদের দৃঢ়তা, নিজেদের ব্যক্তিত্ব, সমাজে অন্য নারীর প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করতে হবে বৈষম্য দূরীকরণের অঙ্গীকার। মেয়ে এবং ছেলে শিশুকে সমান চোখে দেখতে হবে। সমান সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিতে হবে। প্রথানুগত বিষয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একটি মেয়ে যদি চায় সে ফুটবল খেলবে তাকে সে সুযোগ দিতে হবে। কিছুদিন আগেই আমাদের দেশের মেয়েরা ফুটবল ও ক্রিকেটে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে বলেই তারা তা করতে পেরেছে। আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক অর্জন করেছে। তারা এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছে, দেশ পরিচালনায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। রাজনীতিতে সফলকাম হচ্ছে, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রসাশনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। জজ ব্যারিস্টার, করপোরেট লেবেলে উচ্চপদে (যদিও কম) তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখছে। নারীরাই পারে সর্বক্ষেত্রে অবদান রাখতে; যদি সে সঠিক সুযোগ-সুবিধা পায়। সুতরাং মেয়েদের অবমূল্যায়ন করার দিন শেষ।

আগেকার দিনে আমাদের নানি দাদি ও তার আগে নারীরা সন্তান জন্মদানের কারখানা ছিল। কারও কারও ১৩/১৪ জন সন্তান হতো। নিরুপায়, অসহায় নারীরা সন্তান জন্মদান করতে করতেই অসুস্থ হয়ে যেতেন। জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি বা প্রচলিত ছিল না। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তার বাবা মায়ের ১৪তম সন্তান ছিলেন। বেশ কিছু বছর আগে যখন জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপন রেডিওতে প্রচার করা হতো তখন সমাজপতি ও মোলস্নারা তা মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। তারা ধর্ম গেল, সমাজ রসাতলে গেল বলে বিষদ্গার করেছিলেন। জন্মনিয়ন্ত্রণের বাণী ঘরে ঘরে না পৌঁছালে আজ সমাজের কিরূপ দেখতাম। জনসংখ্যা বিস্ফোরণে দেশ পিছিয়ে যেত। যে কোনো পরিবর্তন মানুষ সহজে মেনে নিতে পারে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। মেয়েদের শিক্ষা, মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজ করা, মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া কোনোটাই সহজে হয়নি। রাতে কাজ করা, পুরুষের সঙ্গে একত্রে কাজ করা, এখনো প্রতিষ্ঠিত করতে নারীকে অনেক সংগ্রাম, অনেক নিন্দা, অনেক কটুকথার মোকাবিলা করে, সমাজের ভ্রূকুটিকে অগ্রাহ্য করে মেয়েরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শুধু যে পুরুষরাই মেয়েদের এগিয়ে চলাকে পেছনে থেকে টেনে ধরেছে তা নয়, মেয়েরাও কখনো কখনো তাতে উৎসাহ যুগিয়েছে। মেয়েদের নিরাপত্তার অজুহাতে তাদের বন্ধন দৃঢ় করেছে পুরুষরা। তাতে সমর্থন দিয়েছে চারপাশের কিছু নারীরা। কারণ তারাও চোখে ঠুলি পরে ছিল। এখন তাদের চোখ খুলেছে। খালি চোখে পৃথিবীর তথা নারীবাদের পরিবর্তন উপলব্ধি করেছে। তাইতো আজ মেয়েরা বেরিয়ে আসতে পেরেছে গৃহকোণ থেকে রাজপথে। সমাজ সংসারে অবদান রাখছে আজ মেয়েরা।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মানসিকতার অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন। চিন্তা চেতনার প্রসারতা আরো গভীরভাবে অনুধাবন করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে অযথাই রাখঢাক। ছেলেমেয়েদের বয়সন্ধিকালে যৌনশিক্ষার প্রয়োজন। না হলে তারা ভুল পথে পা বাড়াবে। নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবে। সেই নর্বনাশের একমাত্র ভুক্তভোগী মেয়েরাই হয়। সমাজে তাদের নিগৃহীত হতে হয়। সত্য ও চিরন্তন সহজাত প্রবৃত্তিকে অস্বীকার করা তো মূর্খতা। সত্যের মুখোমুখি হয়ে যৌনশিক্ষায় কোমলমতি ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষণীয় করা উচিত। ভুল শিক্ষা বা ভয়ভীতি না দেখিয়ে সত্যের আলোকে প্রচার করা উচিত। যাতে তারা ভুল না করে তাদের সুন্দর জীবনে কোনো অঘটন না ঘটে। যৌনশিক্ষা স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। মাসিকের সময় মেয়েরা যেন স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ওষুধগুলো স্বস্তিতে কিনতে পারে। প্রেম বিরহের ব্যাপারে স্কুল-কলেজে কাউসিলিংয়ের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যে কোনো সমস্যায় ছাত্রছাত্রীরা যেন কাউন্সিলিংয়ের সুবিধা নিতে পারে। সবকিছু যখন খোলাখুলি আলোচনা হবে ঢাক গুড়গুড় থাকবে না। সমাজে অপরাধ প্রবনতা কমে আসবে। ছেলেমেয়ের মধ্যে সহজাত বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে।

প্রাচীন ধ্যান ধারণা পাল্টাতে সময় দিতে হবে। একদিন নারীরা যেমন অসূর্য্যস্পশ্যা ছিল, ঘরের বাইরে বের হতে পারত না, অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আজ সেখানে নারীরা ঘরের বাইরে বেড়িয়ে কাজ করছে, শিক্ষাগ্রহণ করছে, নারীরা তাদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। খোলাবাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অনেকদূর এগিয়েছে কিন্তু পথ এখনো অনেক বাকি। নারীবাদ বা নারীর অধিকার নিয়ে নারী দিবসে যত আলোচনা হয় বাস্তবে ততটা চর্চার সুযোগ এখনো তেমনভাবে তৈরি হয়নি। এখনো যারা জেন্ডার ইসু্য নিয়ে কাজ করছে তারা দ্বিধাহীনভাবে, নিরাপদে কাজ করতে পারছে না কারণ একদিকে অশিক্ষা, সঠিক জ্ঞানের অভাব, সমাজপতিদের রক্তচক্ষু, মোলস্নাদের মনগড়া ফতোয়া কাজকে আটকে দিচ্ছে। একশ্রেণির পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে, ধর্মীয় লেবাসে নারীবাদের প্রচার ও প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নারীবাদ কখনো পুরুষের বিরুদ্ধে ইসু্য নয়। নারী পুরুষের অসমতার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা তৎকালীন সমাজে কিছু মহীয়সী যেমন ইলা মিত্র, প্রীতিলতা, রানী রাসমনি এরকম কিছু নারী তাদের কর্মকান্ড দিয়ে সমাজকে আলোড়িত করছেন, আলোকিত করেছেন। শুধু নারীরা নয়, যুগে যুগে কিছু মহৎ পুরুষরা দ্বিধাহীন ও স্বার্থহীনভাবে নারী স্বাধীনতার লক্ষ্যে, নারীর মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করেছেন। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম নারীর জয়গান গেয়েছেন, নারীকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। এই একবিংশ শতাব্দীতে নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী পুরুষ একসঙ্গে কাজ করছে।

নারীর অধিকার নারীকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। নারীবাদ নিয়ে আলোচনা আর নয়, এবার বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা জোরালো করা প্রয়োজন।

নাহার ফরিদ খান: কবি ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78560 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1