শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারিগরি শূন্যপদ পূরণে অভিজ্ঞতা মেধা ও দক্ষতাকে বিবেচনায় নিন

নাজমুল হোসেন প্রকৌশলী ও লেখক
  ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

কারিগরি শিক্ষা যে কোনো দেশের উন্নয়নের হাতিয়ার। কোনো দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার এখনো খুব একটা হয়ে ওঠেনি। উন্নত দেশগুলোর সরকার কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে বলেই তাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় অর্ধেকই কারিগরি প্রতিষ্ঠান। বিশাল জনসংখ্যার এ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ পৃথিবীতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উন্নত জাতিরা অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে রয়েছে। সেন্টার ফর এডুকেশনাল রিসার্চের (সিইআর) এক পরিসংখ্যান বলছে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতদের হার একেবারে তলানিতে। যেখানে জার্মানিতে ৭৩%, জাপানে ৬৬%, সিঙ্গাপুরে ৬৫%, অস্ট্রেলিয়াতে ৬০%, চীনে ৫৫%, দক্ষিণ কোরিয়াতে ৫০%, মালয়েশিয়া ৪৬% এবং বাংলাদেশে ১৪%। তবে আশার কথা হচ্ছে সরকার ২০২০ সালে একে ২০ ভাগ এবং ২০৩০ সালে ৩০ ভাগে পৌঁছানোর চিন্তা করছে। দিন দিন সরকারি পলিটেকনিকে শিক্ষার্থী বাড়লেও ব্যবহারিকে সুযোগ খুব একটা নেই। স্বল্পসংখ্যক সরকারি পলিটেকনিকের তুলনায় কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণে বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে স্বল্পসংখ্যক বেসরকারি পলিটেকনিক ছাড়া বেশির ভাগেরই মানেরই ঘাটতি রয়েছে। আর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, ভালো ল্যাবরেটরি, ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব দীর্ঘদিন ধরে লেগেই রয়েছে। অন্যদিকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য রয়েছে গাজীপুরে মাত্র একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিযোগিতার ভিড়ে সবাই সেখানে সুযোগ পায় না। আর বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান থাকলেও সে সব প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা অনেক ব্যয়বহুল। ফলে যারাই এই শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছেন তাদের মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা খুব কম। অনেকেই আবার বিভিন্ন খন্ডকালীন বেসরকারি প্রকল্প বা ব্যক্তি মালিকানা প্রকল্পে কয়েক বছর কাজ করে অনেকটা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করে থাকেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সরকারি নিয়োগে এই মেধা, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কোনো বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। কারণ ততদিনে সরকারি চাকরিতে এই দক্ষদের আর আবেদনের বয়স থাকে না। ফলে সরকারের কারিগরি ক্ষেত্রগুলো যোগ্যদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর্মমুখী এই শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ানোর জন্য অন্তত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু নিয়োগে বয়সসীমা শিথিল থাকা উচিত। তা ছাড়া হাতেগোনা দুই-একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ছাড়া অন্য কোথাও তারা আবেদন করতে পারে না। কারিগরি সেক্টরে কাজ মানেই ব্যবহারিক জ্ঞানে টইটম্বুর থাকা চাই। অন্যথায় প্রকল্প বাস্তবায়নে পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দক্ষতাবিহীন সনদভিত্তিক শিক্ষা যে কোনো দেশ ও জাতির জন্য বোঝা। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাবৃদ্ধি আমাদের এ কথাই জানান দেয়। পিএসসিসহ সরকারি কিছু বিশেষ নিয়োগে বিভিন্ন পদে বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪০ বছর বা বিভাগীয় প্রার্থীদের বেলায় ৪৫ বছর পর্যন্তও চাওয়া হয়। অন্যদিকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের অভাবে প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি অসংখ্য কারিগরি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। কারিগরি পদগুলোতে যেমন বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দরকার তেমনি এসব অর্জন করতে পর্যাপ্ত সময়েরও দরকার। অসংখ্য কারিগরি চাকরিপ্রার্থীরা পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ঠিকই অর্জন করে থাকে তবে তাদের আবেদনের বয়স থাকে না। ফলে নিয়োগে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন লোকের পরিবর্তে সরকারের প্রকৌশল বিভাগগুলো শুধু সদ্য পাস করা ও তত্ত্বীয় জ্ঞানসমৃদ্ধ প্রার্থীদেরই পাচ্ছে। যাদের বেশির ভাগই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে রীতিমতো অভিজ্ঞতাহীন ও অদক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন এই লোকবলের অভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে, তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, কার্যক্রমে আসছে না গতি। রাজস্ব খাতভুক্ত সব মন্ত্রণালয়ের প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির সব কারিগরি শূন্যপদে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশেষ বিবেচনায় বয়সসীমা কমপক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ বছর পর্যন্ত রেখে সরকারের দ্রম্নতই কিছু কিছু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা উচিত। অন্যথায় বয়সের কারণে বিভিন্ন খন্ডকালীন প্রকল্প থেকে বছরের পর বছর কাজ করা যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞরা দেশের তথা সরকারের কোনো কাজে লাগবে না। ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ তথা এই চাকরিপ্রার্থীরা দিন দিন বেকারত্ব বাড়াবে এবং বাড়াচ্ছে। অথচ নিঃসন্দেহে তারাই সরকারের প্রকৌশল বিভাগগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিষয়টি বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকরা গুরুত্বসহকারে আমলে নেবেন বলে বিশ্বাস করি। এমন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে কারিগরি শূন্যপদ পূরণে বিশেষ কিছু নিয়োগে দ্রম্নতই অভিজ্ঞ ও দক্ষ লোক নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78918 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1