শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের বিচার শুরু

ন্যায়বিচার প্র্রতিষ্ঠিত হোক
নতুনধারা
  ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বিচারের শুনানিতে মিয়ানমারের প্রথম বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সু চি তার দেশের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হাজির হন। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, আন্তর্জাতিক এই আদালতে ১৫ জন বিচারপতির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুজন এডহক বিচারপতি। দেশটির শান্তি প্রাসাদে (পিস প্যালেস) যুগান্তকারী এই মামলার শুনানির উদ্দেশ্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমার বৈশ্বিক সনদ লঙ্ঘন করেছে কি না- তা প্রমাণ করা। উলেস্নখ্য, হেগ শহরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) এর আগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এখনো তদন্তাধীন। সঙ্গত কারণেই, বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন এই বিচারের রায়ের দিকে।

তথ্য অনুযায়ী, আইসিজের মামলাটি যুগান্তকারী দুটি কারণে। প্রথমত, প্রতিবেশী না হয়েও বৈশ্বিক সনদে স্বাক্ষরকারী হিসেবে মিয়ানমার থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের আরেকটি উপমহাদেশ আফ্রিকার রাষ্ট্র গাম্বিয়া এই মামলার বাদী। গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে এর আগে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে (সার্বিয়া বনাম বসনিয়া এবং সার্বিয়া বনাম ক্রোয়েশিয়া)। দ্বিতীয়ত, এই প্রথম মানবাধিকারের লড়াইয়ের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ের ২৮ বছর পর সামরিক শাসনোত্তর মিয়ানমারের প্রথম বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সু চি তার দেশের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার সাফাই দিয়েছেন শান্তি প্রাসাদে। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শুনানি চলবে। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার ছাড়াও শুনানি পর্যবেক্ষণে হেগ শহরে আছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই বিচারে গাম্বিয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা আর সমর্থন দিচ্ছে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।

উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযানের পর সু চি জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক ফোরামে খুব কম অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কয়েকটি আন্তর্জাতিক সমাবেশে যোগ দিয়ে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের তিনি 'সন্ত্রাসী' এবং 'বাঙালি' আখ্যা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। এ ছাড়াও গণহত্যা চালোনোর পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সঙ্গে নানানভাবে সংঘর্ষে জড়ানোর অপচেষ্টা করেছে। অপরদিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চুক্তি করা সত্ত্বেও মিয়ানমার বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করে আসছে। এহেন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতে এই বিচারের দিকেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি নিবন্ধিত। বিশেষ করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রত্যাশা করছে আন্তর্জাতিক আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে তারা নিজভূমে সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার শুরু হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। নিজের দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে অং সান সু চি রোহিঙ্গা নারীকে 'নোংরা' বলে অসম্মান করেছেন বলেও ট্রল হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা যায়, ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক আদালতে পেশ করা আবেদনে গাম্বিয়া বলেছে, কথিত শুদ্ধি অভিযানের সময় গণহত্যামূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল গোষ্ঠীগতভাবে অথবা আংশিকভাবে রোহিঙ্গাদের ধ্বংস সাধন। এ জন্য পাইকারি হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সহিংসতা, কখনো কখনো বাড়িতে লোকজনকে আটকে রেখে জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে গ্রামগুলোর পদ্ধতিগত ধ্বংস সাধন করা হয়েছে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, এর আগেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণায়ও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছিল। মিয়ানমার পর্যবেক্ষকদের দেশে ঢুকতে না দিয়ে নিপীড়নের আলামত নষ্ট করেছে এমন অভিযোগও উঠেছিল। তখন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধন করতেই এ অভিযান চালায় মিয়ানমার।

সর্বোপরি বলতে চাই, এই বিচারের ঘটনায় এটাও সামনে এসেছে যে, ১৯৬২ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মগরা। আর ধারাবাহিকভাবে নির্যাতনের দীর্ঘ কয়েক যুগ পর এবার আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার শুরু হয়েছে দেশটির। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত যেহেতু জাতিসংঘের একটি প্রতিষ্ঠান এবং এর লক্ষ্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি। ফলে প্রত্যাশা, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় উভয় দেশের শুনানি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ন্যায়বিচারই প্রতিষ্ঠিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79520 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1