বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলায় নারী শিক্ষা

নতুনধারা
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বাংলায় নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনকারী প্রথম কলেজ হলো বেথুন কলেজ। হিন্দু ফিমেল স্কুল হিসেবে প্রথম এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টি শ্রী বৃদ্ধি ঘটে এবং ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে এর নামকরণ হয় বেথুন স্কুল। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা জন ইলিয়ট ড্রিনক ওয়াটার বেথুন (১৮০১-১৮৫১খ্রি.) ছিলেন ট্রিনিটি কলেজ কেম্ব্রিজের গ্র্যাজুয়েট ও চতুর্থর্ যাঙ্গলার। তিনি গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের আইন উপদেষ্টা হিসেবে ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে ভারতে আসেন। তিনি কাউন্সিল অব-এডুকেশনেরও সভাপতি ছিলেন। নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে তার অগ্রণী ভূমিকা ও পদক্ষেপে তিনি রামগোপাল ঘোষ, রাজদক্ষিণারঞ্জন মুখার্জী, পন্ডিত মদন মোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখের ন্যায় কতিপয় ভারতীয় মনীষীর সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করেন।

কলকাতা মির্জাপুরের রাজদক্ষিণারঞ্জন মুখার্জীর দানকৃত জমিতে মাত্র একুশ জন ছাত্রী নিয়ে বেথুন স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগস্ট বেথুন মৃতু্যবরণ করেন এবং ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি বেথুন স্কুলের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা নেন। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালির ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এ বছর জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ সময় প্রকাশিত হয় মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাংলা সাহিত্যের একমাত্র সার্থক মহাকাব্য 'মেঘনাথ বধ'। আর ওই বছরে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম বাঙালি নারী গ্র্যাজুয়েট ও চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলি। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার নারী শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সমর্থক ব্রজ কিশোর বসুর কন্যা কাদম্বিনী। ওই সময় প্রাথমিক অবস্থায় পুরুষের মতো জ্ঞানার্জন ও অধ্যায়নের সুযোগ লাভকারী নারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। তার পিতা ব্রজ কিশোর বসু ছিলেন নারী শিক্ষার একজন অতু্যৎসাহী সমর্থক। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নারী শিক্ষা বাংলার "ব্রাহ্ম সমাজ" এর সদস্যদের মধ্যে এক তীব্র বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছিল। কেশব চন্দ্র সেন (১৮৩৮-১৮৮৪ খ্রি.) নারীদের উচ্চ শিক্ষারবিরোধী হওয়ায় শিবনাথ শাস্ত্রী, দুর্গা মোহন দাস, দ্বারকনাথ গাঙ্গুলীসহ অন্যান্য প্রগতিবাদী ব্রাহ্ম তার সমালোচনা করেন। অনেক বিশিষ্ট ব্রাহ্ম পরিবার কেশব সেনের গোষ্ঠী ত্যাগ করে ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ "ব্রাহ্ম সমাজ" গঠন করেন। পুনর্গঠিত বেথুন স্কুল থেকে প্রথমবারের মতো মিস কাদম্বিনী বসুকে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পাঠানো হয় এবং তিনি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য কাদম্বিনী বসুর গভীর আগ্রহে সরকার একটি মহিলা কলেজ স্থাপনের বিকল্প পথ আবিষ্কার অথবা কলকাতায় মহিলাদের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান বেথুন স্কুলে ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষাক্রম চালু করার উদ্যোগ নেয়।

শুধু কাদম্বিনী বসুকে ছাত্রী তালিকাভুক্ত করে ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বেথুন কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। আগেই উলেস্নখ করা হযেছে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কাদম্বিনী বসু ও সরলা দাস মহিলাদের মধ্যে প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পান। কী কারণে যেন সরলা দাস পরীক্ষা দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত শুধু কাদম্বিনী বসু পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। (১৮৭৮ খ্রি.)

বাংলার প্রথম দু'জন মহিলা গ্র্যাজুয়েট কাদম্বিনী বসু (১৮৬১-১৯২৩ খ্রি.) ও চন্দ্রমুখী বসু (১৮৬৯-১৯৪৫ খ্রি.)। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী হিসেবে কাদম্বিনী বসু বিএ পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তখন তাকে বাংলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে অভিনন্দিত করা হয়। অবশ্য ঐ বছর বেথন কলেজ থেকে আরেকজন ছাত্রী বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি হলেন- উত্তর প্রদেশের বাঙালি মেয়ে চন্দ্রমুখী বসু। তারাই ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কাদম্বিনী সিদ্ধান্ত নেন মেডিকেলে পড়ার। নারী শিক্ষার অতুৎসাহী সমর্থক পিতা ব্রজ কিশোর বসু সানন্দে কন্যার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

বাখরগঞ্জের বাসন্ডার কবি কামিনী রায় (১৮৬৪-১৯৩৩ খ্রি.) উপমহাদেশের প্রথম মহিলা অনার্স গ্র্যাজুয়েট।

জুরায়ের আলী

যশোর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79716 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1