বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনে চার বাঙালি নারীর জয়

বিজয়ীদের আন্তরিক অভিনন্দন
নতুনধারা
  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার বাঙালি নারী যুক্তরাজ্যের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। এরা হলেন- সিলেটের রুশনারা আলী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক, পাবনার রূপা হক ও আফসানা বেগম। এর মধ্যে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন রুশনারা আলী। হ্যাটট্রিক বিজয় পান হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টিউলিপ সিদ্দিক ও ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে রূপা হক। অন্যদিকে পপুলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন আফসানা বেগম। বলাই বাহুল্য, ব্রিটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনকন্যার জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। এরা প্রত্যেকে লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের নির্বাচনে বাংলাদেশি চারকন্যার জয়ের বিষয়টি অত্যন্ত গর্বের।

তথ্য অনুযায়ী, বিশাল বিজয় পেয়ে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়া রুশনারা আলী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থীকে ৩৭ হাজার ৫২৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ রেজোয়ানা সিদ্দিক ২৮ হাজার ৪০ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টোরি দলের প্রার্থী জনি লাকের চেয়ে ১৪ হাজার ১৮৮ ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি। লেবার দল থেকে হ্যাটট্রিক বিজয় পেয়েছেন ড. রূপা হক। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ প্রার্থীর চেয়ে ১৩ হাজার ৩০০ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এবারের সাধারণ নির্বাচনে সর্বমোট ৬৫০ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল চার কোটি ৬০ লাখ। বিভিন্ন দলের মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩২২।

সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রুশনারা টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার আসনে বাঙালি ভোটারদের সংখ্যাধিক্যের কারণে এ আসন লেবার পার্টির জন্য নিরাপদ হিসেবে আগে থেকেই বিবেচিত হয়ে আসছে। এ আসনের ৮০ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। টানা দুই বারের এমপি রূপা হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে। বাংলাদেশে তার আদি বাড়ি পাবনায়। ৪৮ বছর বয়সি রূপা অল্প ভোটের ব্যবধানে হলেও ২০১৫ সালের নির্বাচনে রক্ষণশীলদের হাত থেকে লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও তিনি ব্যবধান বাড়িয়ে আসনটি ধরে রাখেন। টিউলিপ সিদ্দিক উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে ২০১৫ সালে লেবার পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হন। পরের দফায় ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি পুনর্র্নিবাচিত হন। পারিবারিক পরিচয় আর লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে ৩৭ বছর বয়সি টিউলিপ সব সময়ই থাকেন আলোচনার কেন্দ্রে। দুই দশকের লেবার পার্টি এমপি জিম ফিটজপেট্রিক চলতি বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। তখন এ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন অপেক্ষাকৃত তরুণ বাঙালি কন্যা আফসানা বেগম। বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে কর্মরত আছেন তিনি। তবে এবারের মধ্যবর্তী এ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চারজন বিজয়ী হয়েছেন।

এর আগেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়ে রুশনারা আলী আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও শিক্ষাবিষয়ক ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে হাউস অব কমন্সের এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। পরের বছর বাংলাদেশ বিষয়ে বাণিজ্য দূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। এভাবে নির্বাচিত এমপিরা কোনো না কোনো বিশেষ দায়িত্ব পান বিট্রেনের। ফলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন নারীর ক্ষমতায়নসহ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক শক্তিশালী করতে বিজয়ী চারকন্যা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।

সর্বোপরি মনে করি, এই বিজয় ব্রিটিশ রাজনীতিতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণকে গৌরবান্বিত করেছে নিঃসন্দেহে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ব্রিটেনে বাঙালি মেয়েরা রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বেশ ভালো করছেন। একই ধারাবাহিকতায় এবার চারজন বাঙালি নারী নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। প্রত্যাশা থাকবে, বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের যে ঐতিহাসিক বন্ধন, তা বিজয়ীদের হাত ধরে আরও সুদৃঢ় ও সংহত হবে। বিজয়ী চার নারীকে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79881 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1