শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মহান বিজয় দিবসের প্রত্যাশা

টানা প্রায় ১১ বছর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, এগিয়ে যাচ্ছে গণতন্ত্রের পূর্ণতার পথে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, তার স্বপ্নকে পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশকে বলা হয় এশিয়ার বাঘ। উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা আশাবাদী। আমাদের এই অর্জনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তারাপদ আচার্য্য
  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি বিজয় অর্জন করেছে অনেক ত্যাগ সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে এবং বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে। সে রাষ্ট্রের মূল অঙ্গীকার- অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়-বিচার। প্রায় হাজার বছর ধরে বাঙালি এই সব মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। যে অর্থে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন. সে অর্থে বাংলাদেশ এর আগে আর কখনো স্বাধীন ছিল না। তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাঙালি জাতির পিতা যে মূল্যবোধের জন্য বাঙালি সহস্র বছর সংগ্রাম করেছে, সেই মূল্যবোধগুলো বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শাসনমূলে অন্তর্ভুক্ত করার যে পরিকল্পনা নিয়ে ছিলেন, তার স্বার্থক রূপ দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের গুণগত অবস্থান আর কাউকে বুঝিয়ে বলার অবকাশ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে- একটা রাজনৈতিক দলের আদর্শই যথেষ্ট নয়, সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, সঠিক সময়ে বাস্তবতার উপলব্ধি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্যই তিনি নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল মেহনিত মানুষের মুক্তি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছেন। এ দেশের জন্য তিনি জীবন দিয়েছেন সপরিবারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত বর্বরোচিত অধ্যায়। আমরা হারিয়েছি বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের মহাকাব্যিক বীর নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। হারিয়েছি তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ছাড়া পুরো পরিবারকে। এমন মর্মন্তুদ ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট খুনিচক্র কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপর আঘাত হানে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। এক শতাব্দী আগে অখন্ড বাংলার প্রত্যন্ত পলস্নীতে জন্মগ্রহণ করে তিনি যেভাবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন, তা বিশ্বের বিস্ময় বৈকি। ৪৪ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী একদল ঘাতকের হাতে তার নৃশংস হত্যাকান্ড ছিল জাতির ইতিহাসে এক বড় কলঙ্ক। দেশের স্থপতি ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে তার পরিবারের সদস্যসহ এমন ভয়াবহভাবে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় তারা কার্যকর করতে পারত। কিন্তু তখন তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস পায়নি। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশ ও জাতিকে বিপথগামী করার অপচেষ্টা চালানো হয় পরে। হত্যাকারীদের বিচার থেকে রেহাই দিয়ে জারি করা হয় 'কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ'। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের পর দেরিতে হলেও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকজনের মৃতু্যদন্ড কার্যকর হয়েছে। অন্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশে। পলাতক খুনিদের দেশে এনে তাদের শাস্তি কার্যকর করা সরকারের দায়িত্ব। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে বছরের পর বছর এ নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ থাকা ছিল আইনের শাসনের পরিপন্থি। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলার প্রক্রিয়াও চালানো হয়েছে নানাভাবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাজনীতিতে যেমন দক্ষিণপন্থি ধারায় বিএনপি তথা জাতীয় পার্টি গড়ে ওঠে, তেমনি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সমাজ গঠনের মধ্য যে পরিবর্তনগুলো সাধিত হয়েছিল পূর্বোক্ত রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো ছিল তারই প্রতিফলন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও প্রকাশ্যে পার্টির নামে সংগঠন গড়ে তুলে রাজনীতির অঙ্গ সক্রিয় হতে চেষ্টা করে। বাংলাদেশের রাজনীতি বহুল পরিমাণে উথাল-পাতাল অবস্থার মধ্যদিয়ে কালাতিপাত করেছে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার স্থপতিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের পথও সুগম হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতে থাকে। দিনটিকে সরকারি ছুটির দিনও ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কারণ বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। টানা প্রায় ১১ বছর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, এগিয়ে যাচ্ছে গণতন্ত্রের পূর্ণতার পথে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, তার স্বপ্নকে পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশকে বলা হয় এশিয়ার বাঘ। উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা আশাবাদী। আমাদের এই অর্জনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

এটা সত্য, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মধ্যদিয়েই বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করতে পারেনি খুনিরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংহতির প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখনো তার জীবন, কর্ম ও বাণী দিয়ে জাতিকে শক্তি জুগিয়ে চলছেন। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক শক্তিশালী। আমরা নিশ্চিত, অনাগত দিনগুলোতেও বঙ্গবন্ধু হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য অনিঃশেষ বাতিঘর। বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নন, গোটা বিশ্বব্যবস্থায় বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, 'বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। শেখ মুজিব শোষিতের পক্ষে।' তাই আজও পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে স্বাধীনতা বা স্বাধীকারের প্রশ্ন এলে একজন শেখ মুজিবের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ইতিহাসে যার স্থান সুনির্দিষ্ট ও স্বীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল, তাকে অস্বীকারের মূঢ়তা বিপজ্জনক। বঙ্গবন্ধু কোনো নির্দিষ্ট দলের নন, তিনি সবার। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক। গণ-মানুষের নেতা হিসেবে জনগণের মুক্তিদাতা হিসেবে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেলেন, 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।' সেই মুক্তি ও স্বাধীনতা ছাড়া বাংলার জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধুর আর কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিল না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সবাই তার দেখানো পথে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করবেন, এমন প্রত্যাশা করা অসঙ্গত নয়। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব সংগ্রাম ও সমৃদ্ধিতে দেদীপ্যমান দীপশিখা হয়ে থাকবেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যতদিন বাংলাদেশ আছে ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ মুছে দিতে পারবে না শত চেষ্টাতেও। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। শেখ হাসিনা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পিতার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চান। তার ওপর জনগণের আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা যাতে স্থিতিশীল সদূরপ্রসারী হয়, সেই জন্য কাজ করতে হবে। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হারাবার কিছু নেই। সহস্র বছরে একজন বঙ্গবন্ধু জন্ম হয়েছে, শেখ হাসিনাও শত বছরের এক মহীয়সী নারী। বহু ঘাত-প্রতিঘাত চড়াই-উতরীয়ে আওয়ামী লীগ আজ বর্তমান অবস্থান এসেছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। সবকিছু রুখে দিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের দল হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। স্বাধীনতার নেত্বদানকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির ক্রান্তিকালে আলোকবর্তিতা হিসেবে আভিভূত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ শক্ত হাতে দলের হাল ধরেছেন। দেশ ও জাতি শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আছেন বলেই নিরাপদ বোধ করছেন। বাংলাদেশ স্বমহিমায় এগিয়ে যাক তার স্বকীয়তা নিয়ে, মহান বিজয় দিবসে এ প্রত্যাশাই করছি।

তারাপদ আচার্য্য: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<80028 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1