মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের প্রথম বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

আসলে দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার পিতার স্বাধীন করা বাংলাদেশকে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চান, যেখান থেকে আর কেউ এদেশকে পেছনে হঠাতে পারবে না। প্রতিবিপস্নবের পর বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে যেভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুব্ধ করে দেশের মানুষের প্রাণে নতুন আশার সঞ্চার করে বর্তমান বাস্তবতায় পৌঁছে দিয়েছেন, সেখান থেকে প্রতিক্রিয়ার ধারায় পিছিয়ে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
ডা. এস এ মালেক
  ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

একটানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার সম্পূর্ণ মিল পাওয়া যায়। অত্যন্ত সাবলীল ও সংযত ভাষায় এত সুন্দরভাবে তিনি তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, মনে হয় কোনো সাহিত্য সেমিনারে একজন উচ্চমানের সাহিত্যিক বক্তব্য রাখছেন। বলার ধরন ও প্রকাশভঙ্গিমা ছিল অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। বিগত এক বছরে সব প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে যেভাবে তিনি বিদ্যমান প্রগতির ধারায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এত বহু সংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বা হয়েছে, তার বিবরণ এত স্বল্প বক্তব্যে প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন উন্নয়নের কথা বলতে শুরু করেন, তখন মনে হয়, তিনি যেন একটা মুখস্থ কবিতা আবৃত্তি করছেন। এর কারণ হচ্ছে তিনি এমন একজন প্রধানমন্ত্রী, যিনি দেশের সঙ্কট সম্পর্কে তিনি এত বেশি অবগত যে, চিন্তাভাবনা করে, তাকে কিছু বলতে হয় না। প্রতিঘণ্টায় তিনি যা করছেন, প্রতিদিন যা করছেন, প্রতিমাস, প্রতি বছরের শেষে তার ওপর আলোকপাত করা খুবই সহজ। বাংলা ভাষায় তার জ্ঞান এতই সমৃদ্ধ যে, তার সাধারণ বক্তব্য ও সেমিনারে পঠিত বিশেষভাবে রচয়িত প্রবন্ধের মতো শোনা যায়। উন্নয়ন সম্পর্কে শেখ হাসিনা যত কথাই বলেছেন, তা আমার পক্ষে অতকিছু ক্ষুদ্র প্রবন্ধে উলেস্নখ করা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে এশিয়ার উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে, তা তো প্রতিটি মানুষ এখন অবহিত। যদি চোখ বন্ধ না করে রাজনৈতিক কারণে অন্ধ না হয়ে এমনকি বিরোধী দলের নেতারাও যদি চারদিকে তাকান ও তাদের শাসনামলে বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে বর্তমান অবস্থার তুলনা করেন, তাহলে মার্কিং এ একশতে নব্বই নম্বর পাবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা, আর বাকি দশ নম্বর বিরোধী দলকে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা মঞ্চে উঠেই এক নিশ্বাসে শেখ হাসিনার শাসনামল সম্পর্কে যেসব কথা বলেন, অর্থাৎ দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট এবং অর্থনীতিকে চরম বিপর্যস্ত বলে যেসব কথাবার্তা তাদের সমর্থিত অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে আরও অন্তত তিন বছর আমাদের জিডিপি যদি ৬-৭% এ স্থিতিশীল রাখা যায়, বা এমনকি ৮% কে উন্নীত করা যায়, এরূপ অগ্রগতি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা চীন ও ভারত থেকেও এগিয়ে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান হবে ২৩তম। যেসব বাংলাদেশী মাত্র পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে এসে ভ্রমণ করে গেছেন, তারা যদি আর তিন বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় আসে, তারা দেখবেন, উন্নত দেশের একটা সমৃদ্ধশালী রাজধানী হবে এই ঢাকা নগরী। এখানে উড়ন্ত ট্রেন চলবে, পাতাল ট্রেন চলবে, নদীর নিচে টানেল দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা হবে, উন্নত মানের দ্রম্নতগামী ট্রেন চলবে। পদ্মা নদীর মতো বৃহৎ নদীর উপর সেতু দিয়ে মাত্র দশ মিনিটে পাঁচ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। জেলা শহরের পাশে দেখবে শিল্পাঞ্চল; দেখবে শহরের সকল সুবিধা গ্রামের লোক ভোগ করছে। মাঠে দেখবে উন্নত মানের কৃষিযন্ত্রপাতি। কৃষিযন্ত্রপাতি দিয়ে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করছেন। প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি টেকনিক্যাল সেন্টারে যান্ত্রিক সভ্যতাকে রূপান্তর করে মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আজকে ঢাকায় যানজট। গাড়িতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। তখন ঢাকার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। নদীপদে সর্বাধুনিক নৌযান দ্রম্নততার সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী বহন করবে। দেখবে বস্তি বলে কিছু নাই। সব মানুষের জন্য গৃহনির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিকর্মে যেসব বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা চলছে, এবং যেভাবে সফলতা অর্জিত হচ্ছে, তাতে এ দেশ হবে উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক এক কৃষিপ্রধান দেশ। বিশ্বে প্রোটিন সরবরাহে আমরা প্রথম হবো। শুধু খাদ্যই নয়, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য আমরা সরবরাহ করব বিভিন্ন দেশে। যেখানেই শেখ হাসিনার সরকার হাত দেন, সেখানেই সোনা ফলে। একবার ভেবে দেখুন তো, দশবছর আগে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য ইলিশের পরিমাণ কত ছিল, আর এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে আছে যেখানে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে তুলে দেওয়ার নজির। তা আমাদের দেশেই সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার পিছনে সরকার যেভাবে বিনিয়োগ করছেন, তার সুফল জাতি অবশ্যই পাবে। আমরা যদি স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করি, তাহলে পৃথিবীতে কয়টা দেশ আছে যারা ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করতে পেরেছেন। একদিন অপারেশনের জন্য রোগীদের নিয়ে দেশের বাইরে যেতে হতো, আর এখন জেলাপর্যায়ে উন্নতমানের ও আধুনিক সার্জারি প্রচলন বাংলাদেশের একাধিক হাসপাতালে বিদ্যমান। কার্ডিয়াক সার্জারি, বার্নিং ইউনিট বাংলাদেশে এখন বিদ্যমান। তবে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় খুব বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। সরকার চেষ্টা করছেন, কীভাবে একটু ব্যয় কমিয়ে আনা যায়। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। বিগত কয়েক বছরে সফলতার সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হয়েছে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতেও সরকার সচেষ্ট। বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তাতে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সরকারের সফলতা অনেক বেশি। পৃথিবীর অনেক দেশ জঙ্গিবাদের কারণে আজ অস্থিতিশীল। কিন্তু শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় আজকে প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাই দুর্নীতিবাজরা এখন দুর্নীতি করতে ভয় পায়। দুর্নীতিলব্ধ অর্থসম্পদ যে দুর্নীতিবাজদের ভোগ করতে দেওয়া হবে না, সরকারের এই ঘোষণা ইতোমধ্যেই দুর্নীতি বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে দেশের দুর্নীতি তৎপরতা কমে আসবে এবং সে কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরও গতিশীল হবে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয়, সে কারণে সামাজিক শান্তি বিঘ্নিতকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হওয়ার যে অঙ্গীকার করেছেন, তা যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলে নিশ্চয় বাংলাদেশের মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে সক্ষম হবে। সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে কখনো উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক আন্দোলনে সরকারের আপত্তি নেই; তবে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কোনো আন্দোলন উন্নয়নের স্বার্থে তা করতে দেওয়া হবে না।

আসলে দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার পিতার স্বাধীন করা বাংলাদেশকে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চান, যেখান থেকে আর কেউ এদেশকে পেছনে হঠাতে পারবে না। প্রতিবিপস্নবের পর বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে যেভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুব্ধ করে দেশের মানুষের প্রাণে নতুন আশার সঞ্চার করে বর্তমান বাস্তবতায় পৌঁছে দিয়েছেন, সেখান থেকে প্রতিক্রিয়ার ধারায় পিছিয়ে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

ডা. এস এ মালেক: রাজনীতিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84478 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1