শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের বিস্তার ও উত্তরণের উপায়

গাজী আবদুর রহিম ঢাকা
  ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

নতুন বছর শুরু হয়েছে। সাধারণত মানুষ বছরের শুরুতে বিগত বছরের ভুলগুলো শুধরে নেওয়া যেতে পারে। যাতে আমরা শুদ্ধপথে বিচরণ করতে পারি। আমরা সব বিষয়ে একটু একটু শোধরাতে পারলেও একটা বিষয় আমাদের আঁকড়ে ধরেছে তা হলো ধর্ষণ। বছরের শুরু থেকে দৈনিক পত্রিকাগুলোর কভারপেজজুড়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের নিউজ ছাপা হচ্ছে? চারদিক ধর্ষিতা ও ধর্ষিতার পরিবারগুলোর বিরহের হাহাকার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ধর্ষণের পরে বেশ কয়েকটা ভিকটিমকে হত্যা করা হয়েছে। 'কলেজছাত্রী মরিয়মকে ধর্ষণের পর হত্যা করে প্রেমিক সুব্রত'- (সমকাল, ১২ জানুয়ারি ২০২০)। দেশে হটাৎ কেন ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করল? ধর্ষকদের লক্ষ্য কি? কি জন্য দেশে একই ভুল বারবার হচ্ছে? এখন স্কুল, কলেজ বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ বছরের শুরুতে, কুর্মিটোলায় বখাটে কর্তৃক ঢাবি ছাত্রী ধর্ষিত হয়েছিল। এ ঘটনা দেশের প্রায় সব প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। 'ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী'- (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৬ জানুয়ারি ২০২০)। এখন দেশের মেয়েরা শিক্ষিত হবে নাকি সম্ভ্রম বাঁচাতে বাসায় বসে থাকবে, সে বিষয়ে চিন্তনীয়? আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও নিরাপত্তা কোথায়? গত বছর ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাত জাহান রাফি তো তার মাদ্রাসাতেই হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। এমন হাজারো নুসরাত গ্রাম-বাংলায় সম্মানহানির ভয়ে মুখ খোলেন না। গ্রামে ধর্ষণের সবচেয়ে বড় একটা কারণ হলো ধনী-গরিব বৈষম্য। পিতা কিংবা স্বামীর দেনা পরিশোধ করতে পারছেন না, এমন পরিবারের নারীদের সম্ভ্রম হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। 'বাসা ভাড়া দিতে না পারায় স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে গণধর্ষণ'-(প্রথম আলো, ১৬ জানুয়ারী ২০২০)। আমাদের দেশে ধর্ষকরা বেশির ভাগই বিত্তবান হওয়ার কারণে হতদরিদ্র পিতারা, এমন ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ভয় পান। আমাদের দেশের প্রশাসনকেও বেশ কয়েক জায়গায় বিত্তবানদের কাছে বিক্রি হয়ে মামলা নিতে গড়িমসি করতে দেখা গেছে। আমাদের দেশে একশ্রেণির অভিভাবক দেখতে পাওয়া যায়, যারা প্রাথমিক অবস্থায় ছেলেমেয়েদের খারাপি মেলামেশা করতে দেখেও সচেতন হন না কিংবা তাদের সন্তানদের এ বিষয়ে সচেতন করতে ব্যর্থ হন। আমাদের দেশের সত্তর ভাগ ধর্ষক মাদকাসক্ত হয়ে ধর্ষণ করে। মাদকের জোগান কে বা কারা দিচ্ছে, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণত যুবকরা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মাদক সেবন করে থাকে। হতাশা মানুষের মাঝ থেকে মনুষ্যত্বকে বিলীন করে দেয়। এ বিষয়ে সম্প্রতি সংসদ সদস্যরা ধর্ষকদের শাস্তি ক্রস ফায়ার করার দাবি তুলেছে। ক্রস ফায়ার দিলেই কি শুধু অপরাধের হার কমে যাবে? কখনো না। কি জন্য মানুষ এই অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, সে বিষয়ে বিস্তর অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। ছেলেমেয়েদের সবার প্রতি সম্মান দেখিয়ে চলার অভ্যাস করতে হবে। কারণ, বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, অধিকাংশ ধর্ষকরা অশিক্ষিত-প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। ধর্ষণের দারুণ এক উৎসাহদাতা হতে পারে ফেসবুক ও তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার? ফেসবুক যুবক-যুবতীদের কাছে প্রেমকে ফ্যাশন বানিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ভিডিও কলে একজন অন্যজনকে অগোচরে দেখতে পাওয়া, যুবক-যুবতীদের মনে কৌতূহল এনে দেয়। ফেসবুকে আগে খারাপ ভিডিও ধারণ করা না হলেও, ইদানীং ফেসবুকে খারাপ ভিডিওর ছড়াছড়ি লক্ষণীয় একটা বিষয়। যেখানে বর্তমান সময়ে যাবতীয় পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইট বস্নক করে রাখা হয়েছে। সেখানে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কেন এ বিষয়ে সচেতন হচ্ছে না। সেটাও একটা বিবেচনার বিষয়। মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারের অতিরিক্ত আসক্ত হওয়া যুবক-যুবতীরা সামাজিকতার ধারণা হারিয়ে ফেলেন? প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা হয়ে ওঠে। প্রত্যেক যুবক-যুবতীদের কাজের অবসর পরিবারের সঙ্গে কাটানো উচিত। এতে মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত হবে। আর মূল্যবোধ বেঁচে থাকলে ধর্ষণের মতো পশুর মতো আচরণ থেকে সমাজের পরিত্রাণ মিলবে। আমাদের যুবতীদেরও ধর্ষণে আকৃষ্ট করে এমন পোশাক না পরার বিষয়ে সচেতন করতে হবে। একশ্রেনির যুবতীদের দেখা যায়, যারা এ বিষয়ে মোটেও তৎপর হচ্ছে না। যদিও এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন করার কথা- তারপরও দুঃসময় আমাদের জানান দিচ্ছে সচেতন হও। তাই যত বড়ই দুঃখ আসুক হতাশার জীবনযাপন না করার ব্যাপারে স্কুল, কলেজ ও অঞ্চলভিত্তিক আলোচনা সভা করে, সচেতন করা যেতে পারে। এ ছাড়া যুবক-যুবতীদের হতাশা দূর করতে বই পড়তে উৎসাহী করা যেতে পারে। আমাদের এখন মাদককে জিরো টলারেন্স কার্যকর করাও বড় চ্যালেঞ্জ। যুবকদের মাদকের ক্ষতিকর বিষয়ে করা প্রয়োজন। আমাদের সবাইকে এক হয়ে ধর্ষকদের শাস্তি প্রদানে সোচ্চার হতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে প্রশাসনের। ধর্ষক যত বড় ক্ষমতাবান হোক না কেন তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে সচেতন হতে হবে? এমনকি কোনো স্কুল, কলেজের ছাত্র যদি বখাটে আচরণ করে, তাহলে তাকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়ে শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে হবে? আমাদের দেশে বেশির ভাগ ধর্ষকরা অল্প শাস্তি ও জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ধর্ষণের শাস্তি মৃতু্যদন্ড অল্প সময়ে কার্যকর করা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84894 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1