শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট ও পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন

নতুনধারা
  ২০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে আগামী ১ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কারণে ওই পরীক্ষার তারিখও পরিবর্তন করা হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসের ৩ তারিখ থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। নির্বাচনের তারিখ পেছানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে নির্বাচন কমিশন সিটি নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করল। শনিবার রাতে জরুরি বৈঠক করে ভোটের এ নতুন তারিখ ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। অন্যদিকে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পুনর্নির্ধারিত তারিখও প্রকাশ করা হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা সিটি নির্বাচনের দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা হওয়ায় নির্বাচনী তপসিল ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। পূজার দিন ভোটের তারিখ হওয়ায় দেশের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি বিবেচনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নানানভাবে অবহিত করা হয়। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবিতে একপর্যায়ে টানা আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন। শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধও করেছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনে বসেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। দেশের বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। এর আগে ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা থাকায় ভোটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য আদালতে একটি রিট আবেদন করেছিলেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। তার যুক্তি ছিল, ইসির ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ সংবিধানে বর্ণিত প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে 'সাংঘর্ষিক'। আবেদনটি হাইকোর্ট খারিজ করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিইসি বলেছিলেন, ভোট-পূজা দুটোই পবিত্র কাজ।

তথ্য অনুযায়ী, এর আগে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট এক বিবৃতিতে পূজার দিন ভোট হলে তা বর্জনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় পূজার দিন ভোটের তারিখ ফেলার সমালোচনা করেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ সার্বিকভাবে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে সবার সমর্থন থাকলেও যারা এই তারিখ পরিবর্তন করবে; সেই নির্বাচন কমিশন বলেছে, এই পর্যায়ে এসে এটা সম্ভব নয়। তারা এ-ও বলছে, একই দিনে ভোট ও পূজা অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না। দুটোই উৎসব। আলাদা আলাদাভাবে তা অনুষ্ঠিত হবে। অবশেষে শাসকদলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, নির্বাচনের তারিখ পেছানোর এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের, তারা চাইলে পেছাতেই পারে। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করল। ইসির এ সিদ্ধান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা নিয়ে সব ধরনের অস্বস্তির অবসান ঘটল বলেই প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি বলতে চাই, তপসিল ঘোষণার পর ভোটের তারিখ পুনর্নির্ধারণের কাজ নিঃসন্দেহে জটিল একটি প্রক্রিয়া। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার ছিল আগে থেকেই এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া। ইসি জানিয়েছে, ক্যালেন্ডারে ২৯ জানুয়ারি পূজার দিন, ৩০ তারিখ নেই। সে প্রেক্ষাপটেই ৩০ তারিখ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসির কথাও অযৌক্তিক নয়। তিথি অনুযায়ী এ বছর দুদিন পূজার দিন ধার্য হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের তারিখ পেছানোয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইসির প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদেরও প্রত্যাশা থাকবে, পরিবর্তিত তারিখ অনুযায়ী সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে নগরবাসী তাদের দুজন নগরপিতাকে নির্বাচিত করবেন। পাশাপাশি সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। কেননা, ইসির একার পক্ষে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। যদিও নির্বাচনকালীন সময় সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে ইসির হাতে। তারপরও প্রত্যাশা, ভোটের উৎসবের মধ্যদিয়ে আসন্ন সিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85056 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1