বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জে সরকার

সুশাসন নিশ্চিত হোক
নতুনধারা
  ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বৈশ্বিক অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থার বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণসীমা ছয় মাসেই পার হয়ে গেলেও অর্থবছরের বাকি সময়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণের সীমা অপরিবর্তিত রেখে সরকারি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। যেহেতু সরকারের ঋণ বেশি প্রয়োজন তাই মুদ্রা সরবরাহও বাড়ানো হয়েছে। ফলে সার্বিক বিবেচনায় অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে সরকারের সামনে। এ পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি এ তথ্য উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। .

২০১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও চাঙা হবে বলে দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ১০ বছর ধরেই বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ৬-৭ শতাংশের ঘরে ছিল, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সন্তোষজনক। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো, যে হারে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, সেই হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও দীর্ঘদিন ধরে ২০-২২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে না। এরই মধ্যে সরকারকে ঋণ নিতে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত মুদ্রানীতি অনুযায়ী সরকারি ঋণের সীমা ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আগে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এখন তা করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতের ঋণসীমা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ অপরিবর্তিতই রাখা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা এ প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে সরকার অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক যখন তারল্য সংকটে ভুগছে, বিপুল অংকের টাকা ঋণখেলাপিদের পকেটে তখনই ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিল সরকার। অন্যদিকে খেলাপিদের থেকে টাকা আদায়ে বাস্তবসম্মত কার্যকর কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। এ অবস্থায় সরকারের বড় অংকের ঋণ নেয়া বেসরকারি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ প্রভাবিত হলে কর্মসংস্থানও বিঘ্নিত হবে। সুতরাং সামগ্রিকভাবে এ প্রবণতা অর্থনীতির ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে সরকার আশা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ দুটি বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের কাজ শেষ হবে। বিশেষ করে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপস্নবিক পরিবর্তন ঘটবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতির বিকাশও ত্বরান্বিত হবে।

দ্বিতীয়ত, সরকার যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে অন্তত চারটির কাজ চলতি বছরই শুরু হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা নির্মাণের জন্য কয়েকশ শিল্প পস্নট প্রস্তুত হলে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি দুটোই বাড়বে। সরকার আশাবাদ ব্যক্ত করলেও অস্বীকারের সুযোগ নেই, সরকারের ঋণ বেড়ে গেলে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে। আর বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমার ঝুঁকি তৈরি হয়। আরও যে সমস্যাটি প্রবল হয়ে দাঁড়ায় তা হলো ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের তহবিল পেতে সমস্যা হয়। ফলে বিনিয়োগ বাড়ে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে উৎপাদনও বাড়ে না। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় সামগ্রিক অর্থনীতি। মুদ্রাস্ফীতিও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অর্থনীতির দুর্বলতাগুলো আরও বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সঙ্গত কারণেই, এসব ক্ষেত্রে সরকারের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।

উলেস্নখ করা যেতে পারে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সরকারকে প্রথমেই নজর দিতে হবে সুশাসন নিশ্চিত করতে। সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে প্রকল্পগুলোতে নানামুখী দুর্নীতি বাসা বাঁধবে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয়ও বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক খাতে সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। এ পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। স্বস্তিকর যে সম্প্রতি রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়েছে দেশ। ফলে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ এবং তৈরি পোশাক রপ্তানির খাতগুলোর প্রতিও যত্নশীল হওয়া আবশ্যক।

সর্বোপরি বলতে চাই, বৈশ্বিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ একটি অগ্রসরমাণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও ঈর্ষণীয়। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল, উদীয়মান বাঘ। তাই মোটাদাগে আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85908 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1