শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগুনে পুড়ে নিহত পাঁচ

সতর্কতার বিকল্প নেই
নতুনধারা
  ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মৌলভীবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের একটি দোতলা ভবনের নিচতলার জুতার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিচতলায় আগুন লাগায় দোকানের ওপরের বাসায় সবাই আটকা পড়েন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাঁচটি ইউনিট চার ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। নিহতরা একই পরিবারের সদস্য।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গড়ুয়া এলাকার পিংকি সু স্টোরের স্বত্বাধিকারী সুভাষ রায় সপরিবারে ওই দোকানে বসবাস করে আসছেন। শত বছরের পুরনো কাঠের দোতলা টিনসেড ওই ঘরের দোতলা ও নিচে সবাই প্রতি রাতের মতো ঘুমিয়ে পড়লে সকালের অগ্নিকান্ডে সবাই আটকা পড়েন। দোকানের সঙ্গে সংযুক্ত ওপরে বাসার গ্যাস লাইনের গ্যাস লিক করে কিংবা বৈদু্যতিক শর্ট সার্কিটের কারণে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা দরকার, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২২ হাজার ২৮৩টি অগ্নিকান্ড ঘটে। এ ঘটনাগুলোতে ২ হাজার ১৩৮ জন নিহত হন। আহত হন ১৪ হাজার ৯৩২ জন। আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ২০৩ কোটি ৯২ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৫ টাকা। ২০১৯ সালের আগুনের ঘটনাগুলোর প্রায় ৩৯ শতাংশের জন্য দায়ী বিদু্যতের শর্ট সার্কিট। এরপরই ২২.৭ শতাংশ আগুন লেগেছে চুলা থেকে। ২০১৯ সালের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে ২১ ফেব্রম্নয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায়। কেমিক্যাল থেকে সৃষ্ট ওই অগ্নিকান্ডে একের পর এক বিস্ফোরণ কেড়ে নেয় ৭৬টি তাজা প্রাণ। ফলে আগুনের ঝুঁকি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার, তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটে ২০১৮ সালে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানী অগ্নিকান্ডসহ বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এখনো মানুষের মনে ক্ষত সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১১ জন নিহত হয়। এতে সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ১০১ জন পোশাক শ্রমিক। বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা সময়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা সামনে এসেছে। সঙ্গত কারণেই এটা আমলে নেয়া জরুরি যে, সারাদেশের অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রতিটি বাড়িতে ও পাড়া-মহলস্ন্নায় ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, সব আগুনই প্রাথমিকভাবে ছোট থাকে। আগুন লাগার সময় কালক্ষেপণ না করে তা যদি নেভানো যায়, সে ক্ষেত্রে আর বড় অগ্নিকান্ড ঘটে না।

স্মর্তব্য যে, ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১৫ বছরে ২ লক্ষাধিক অগ্নিকান্ডের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ফলে এটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনার ভয়াবহতাকে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আগুন লেগে গেলে সে আগুন নেভানোর সক্ষমতা থাকা অত্যাবশ্যক প্রতিটি স্থানে। পাশাপাশি আগুনের ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাও জরুরি। বলাবাহুল্য, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশে ভয়ানক আকারে বেড়ে চলেছে অগ্নি দুর্ঘটনা। সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিনিয়তই ঘটে যাওয়া নানা দুর্ঘটনা আগের বছরের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত দুই যুগে অগ্নি দুর্ঘটনার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে অগ্নি দুর্ঘটনার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকায় কোনোভাবেই দাহ্য পদার্থের কারবার করতে দেয়া যাবে না। সতর্ক ও সচেতন না হলে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই সর্বাগ্রে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। মৌলভীবাজারের মতো অগ্নি দুর্ঘটনায় ভয়াবহ পরিস্থিতি দেশের আর কোথাও না ঘটুক- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86490 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1