মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই পস্নাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

মাহমুদ কামাল এনামুল হক শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশ একই সঙ্গে উন্নয়নশীল ও জনবহুল দেশ। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রেখে টেকসই উন্নয়ন দেশের প্রধান লক্ষ্য। টেকসই উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা প্রতিনিয়ত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যার মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উলেস্নখযোগ্য। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে পস্নাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ পস্নাস্টিক অপচনশীল অবস্থায় দীর্ঘদিন পরিবেশে থেকে যায়। বাংলাদেশে পস্নাস্টিকের মাথাপিছু ব্যবহার মাত্র পাঁচ কেজি যেখানে বিশ্বে গড় পস্নাস্টিকের ব্যবহার প্রায় বিশ কেজি। এই পরিসংখ্যান থেকে আমরা সহজেই পস্নাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ নিয়ে কিছুটা ধারণা পাই। বর্তমানে বিশ্বের মোট পস্নাস্টিকের মধ্যে ৩০ শতাংশ পস্নাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বাকি অংশ তিনটি ধাপে ভাগ করা যায়, এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ মাটিতে, ১২ শতাংশ পুড়িয়ে এবং ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। পস্নাস্টিক বর্জ্যের বাকি অংশ দীর্ঘদিন পরিবেশে (মাটি ও পানি) থেকে যায়। এসব পস্নাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে বোতল, চালের বস্তা এবং পস্নাস্টিক ব্যাগ। কিন্তু অন্যসব দেশের মতো বাংলাদেশের পস্নাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় পরিবেশগত মারাত্মক প্রভাব নিয়ে তা মানবজীবন ও বিভিন্ন প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত এই পস্নাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা জনবহুল শহর হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এক গবেষণায় জানা যায়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন মাথাপিছু ৫৬০ গ্রাম বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, এর মধ্যে পস্নাস্টিক অন্যতম। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে দৈনিক ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সেই সঙ্গে দেশের ৩২৪টি পৌরসভা ও ১১টি সিটি করপোরেশনেও বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়েই চলছে। দেশের শহরগুলোতে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে এবং কত ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে তার সঠিক ও বিস্তারিত গবেষণা তথ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। সেই সঙ্গে আর্থিক ও ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা ঘাটতি থাকায় শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করাও জটিল হয়ে উঠছে। এ ছাড়া পস্নাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যগুলো পানির সঙ্গে মিশে এর গুণাগুণ নষ্টের সঙ্গে সঙ্গে পানিতে থাকা জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদী ও সাগরে পস্নাস্টিক ও পলিথিনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বর্তমান সময়ে সমুদ্রের সম্পদ নিয়ে যে বিস্তর গবেষণা চলছে, পস্নাস্টিক বর্জ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন টন বর্জ্য পস্নাস্টিক সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় এবং যা প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সমুদ্রে যে হারে পস্নাস্টিক বাড়ছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রবাল প্রাচীরের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধির পর দ্বিতীয় বড় হুমকিটি পস্নাস্টিক বর্জ্য যা প্রবাল প্রাচীরের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২০ গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে পস্নাস্টিক অন্যতম। মাটির স্তরে স্তরে পস্নাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য বৃদ্ধির ফলে ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলো সঠিকভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে না। অন্যদিকে পানির চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, পস্নাস্টিক বর্জ্যের এ ধরনের ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উৎপাদিত বর্জ্যগুলো শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ, পরিবহণ ও অপসারণের পর জায়গা হয় ল্যান্ডফিল সাইটে (খধহফভরষষ ংরঃব)। স্তূপাকারে জমা করা বর্জ্যের জন্য যে জায়গা ব্যবহার করা হয় তার ধারণক্ষমতা দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ল্যান্ডফিল করার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম মানা জরুরি। এনভায়রমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) এ বিষয়ে বেশকিছু নীতিমালা উলেস্নখ করেছে। ১৯৯১ সালের এই নীতিমালা অনুযায়ী ল্যান্ডফিল সাইটের ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো জলাশয় থাকবে না, ১৬০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো খাবার পানির নলকূপ থাকতে পারবে না এবং ৬৫ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ঘরবাড়ি, স্কুল বা পার্ক থাকতে পারবে না। তাই ল্যান্ডফিলিংটি অত্যন্ত অপব্যয়ী হিসাবে বিবেচিত হয় কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে জায়গা প্রয়োজন হয় এবং রাসায়নিক উপাদান এবং পস্নাস্টিকের মধ্যে থাকা শক্তি নষ্ট হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নয়নশীল কাঠামো গড়ে ওঠায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ল্যান্ডফিল সাইটের জায়গা বৃদ্ধি করা সহজ নয়। যে সব স্থানে পস্নাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ল্যান্ডফিল তৈরি করা হয়, পরে এর ফলে ভূমি জমিগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না এবং সেখানে পস্নাস্টিকের বর্জ্যগুলো সহজেই জলপথে বয়ে যেতে পারে বা বন্যার পানিতে সমুদ্রের দিকে নিয়ে যেতে পারে। পস্নাস্টিক বর্জ্যের বেশির ভাগই যেহেতু মাটিতে থেকে যাচ্ছে, তাই এগুলো মাটি ও পানির গুণগত মান নষ্ট করছে। তা ছাড়া পস্নাস্টিকগুলো ল্যান্ডফিলে ক্ষয় হয়ে গেলে তারা মাটি এবং আশপাশের পরিবেশে দূষণকারী (ফ্যাথলেট এবং বিসফেনল) পদার্থ মুক্ত করতে পারে। পস্নাস্টিক সাধারণত পেট্রোলিয়াম বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উদ্ভূত হয়, এই পস্নাস্টিক বর্জ্যে যে পরিমাণে সঞ্চিত শক্তি রয়েছে তা অন্য কোনো বর্জ্যের তুলনায় বেশি পরিমাণে সঞ্চিত শক্তি দেয়। পস্নাস্টিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে কিছু শক্তি ফিরে আসে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88709 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1