বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিস্তার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটুক

নতুনধারা
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে আরও উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, 'আমরা বাঙালি। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি এটা যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিস্তার লাভ করে সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।' আজকের পৃথিবীতে কোনো দেশ একা চলতে পারে না এটা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, অন্য ভাষা শেখাও গুরুত্বপূর্ণ তাই বলে নিজের ভাষা ভুলে যাওয়া মোটেই ঠিক নয়। ভাষার মর্যাদা আমাদের সব সময় দিয়ে যেতে হবে। বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এবং বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার যে উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন তার বক্তব্যে, তা ভাষা রক্ষার প্রশ্নে অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথা উলেস্নখ করে বলেছেন, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সেই সময় ভাষা আন্দোলনের জন্য ছাত্রসমাজকে নিয়ে, অর্থাৎ তখনকার ছাত্রলীগ, তমুদ্দিন মজলিসসহ আরও কিছু প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ছিল, তাদের নিয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এই সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ার পর ঘোষণা দেওয়া হয় ১১ মার্চ হবে ভাষা দিবস। সেই ১১ মার্চ থেকে মূলত ভাষা আন্দোলন শুরু। আগে ১১ মার্চ ভাষা দিবস পালিত হতো। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্তির কথা বঙ্গবন্ধু তার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে স্পষ্টভাবে লিখেছেন বলেও মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এক সময় বঙ্গবন্ধুর নাম ভাষা আন্দোলন থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা নথিগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো প্রকাশ করার উদ্যোগের কথাও তিনি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

উলেস্নখ করা যেতে পারে, প্রায় একুশ বছর বাংলাদেশে ইতিহাস বিকৃতির মহড়া যেমন চলেছে, তেমনিভাবে বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে নানানভাবে। কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকে না। তাই ১৪ খন্ডে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রকাশের যে তথ্য প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, এ গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হলে বাঙালি জাতি বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা চেয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, এই মাতৃভূমিকে আমাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। যেন বিশ্বের কোথাও গিয়ে আর 'বাংলাদেশ' শুনলে যেন আমাদের আর কেউ অবহেলা করতে না পারে। 'বাংলাদেশ' শুনলে যেন সবাই আমাদের সম্মানের সঙ্গে দেখে, বাঙালিকে এবং বাংলাদেশকে সেভাবে আমরা একটা আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনই বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের প্রকৃত ভিত্তি। এ ক্ষেত্রে তমুদ্দিন মজলিসের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা কারও অজানা নয়। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর ক্ষেত্রেও আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। ভাষার মাস এলেই সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর দাবি ওঠে আবার মাস শেষ হলেই ভুলে যাই। অথচ যেভাবেই হোক দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের পাশাপাশি ভাষার সমৃদ্ধি ঘটানো অত্যন্ত যৌক্তিক। সংশয়হীনভাবেই বলা যায়, একুশে ফেব্রম্নয়ারির প্রধান লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং গড়ার পরে এগিয়ে যাওয়া- স্বাধীনতা, মৈত্রী ও সাম্যের লক্ষ্যে। একুশ কারও সঙ্গে আপস করেনি। কেননা, সে জানে কোনো আপসই নিজের শর্তে হয় না, হয় নিঃশর্তে। ভাষা আন্দোলনের পথই আমাদের প্রকৃত মুক্তির পথ।

সর্বোপরি বলতে চাই, বাঙালি জাতি 'মায়ের ভাষার' মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নবপ্রেরণা পেয়েছিল। সেই ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া গেলে তা হবে অত্যন্ত সম্মানের। যেহেতু ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার ঘটনাও বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত। প্রত্যাশা করব, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটুক। উন্নত দেশ গড়ার পাশাপাশি বাংলা ভাষা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক এটাই চাওয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89455 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1