শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএনডিপির প্রতিবেদন বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিন

নতুনধারা
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আমাদের দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্যের বিষয়টি বহুল আলোচিত। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনেও এ বিষয়টি মাঝে মধ্যে উঠে আসে। বৈষম্য নিরসনে সরকারের নানান উদ্যোগের কথাও জানা যায়। বাস্তবতা হলো, এরপরও আশানুরূপ বৈষম্য নিরসন হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থের সঙ্গে জীবনযাত্রার মান যেমন সম্পৃক্ত, তেমনি মানুষের আয়ুও! বাস্তবে তাই দেখা গেছে। সম্প্রতি ইউএনডিপি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উচ্চ আয়ের মানুষের তুলনায় গড় আয়ুতেও পিছিয়ে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। গবেষকরা দেখেছেন, নিম্ন আয়ের পরিবারে একটি শিশু জন্ম নিলে তার গড় আয়ু দাঁড়ায় ৫৯ বছর। পক্ষান্তেরে উচ্চ আয়ের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর গড় আয়ু হয় ৭৮ বছর। দুই ধরনের পরিবারে জন্ম নেওয়া মানুষের গড় আয়ুর মধ্যে পার্থক্য ১৯ বছর।

তথ্য অনুযায়ী, তীব্র ধনবৈষম্যের সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। অথচ অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা, সন্তোষজনক আয় কিংবা সামাজিক ব্যাপারে তাদের মতামত আমাদের সমাজে গুরুত্ব পায় না। সার্বিকভাবে এ বৈষম্য আমাদের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইউএনডিপি তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বর্তমান সময় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে উলেস্নখযোগ্য সফলতা প্রত্যক্ষ করছে। অভূতপূর্বসংখ্যক মানুষ সারা বিশ্বে বুভুক্ষা, ব্যাধি এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়ে নূ্যনতম

জীবনধারণের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছে। এই উন্নয়ন সূচক নির্দেশ করে যে, প্রত্যাশিত আয়ের ক্ষেত্রে মূলত শিশুমৃতু্যর হার হ্রাসের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এতে বহু মানুষকে পেছনে ফেলে আসা হয়েছে এবং সব সক্ষমতার ক্ষেত্রে বহু অসমতাও রয়েছে। এই অসমতাগুলো জীবন-মৃতু্য, জ্ঞান-সুযোগ এবং জীবন-পরিবর্তনীয় প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বিরাজমান বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

যেহেতু জানা যাচ্ছে, নিম্ন মানবোন্নয়ন ও উচ্চ মানবোন্নয়ন সূচক দেশগুলোর মধ্যে গড় আয়ুর ফারাক এখনো ১৯ বছর। এ ছাড়া প্রতি ধাপ বয়সেই প্রত্যাশিত আয়ুর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফলে এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার চেষ্টা করছে, ফলে এই বৈষম্য বিলোপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত যৌক্তিক। বলাই বাহুল্য, ধনী-গরিবের বৈষম্য বিলোপ না হলে তা সার্বিকভাবে জাতীয় উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। বৈষম্য বিলোপ সম্ভব না হলে দরিদ্ররা ধীরে ধীরে অতিদরিদ্র বা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে- যা একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত হতে পারে না।

এর আগে অক্সফামও তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বে তীব্র হচ্ছে ধনী-গরিব বৈষম্য। বলাই বাহুল্য, সেখানেও বাংলাদেশর বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আর এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের সরকারগুলোকে ধনবৈষম্য কমাতে সহায়ক নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আর এখন ইউএনডিপির প্রতিবেদনেও যখন এমন তথ্য উঠে এসেছে, তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া উচিত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করা। ধনী-গরিবের বৈষম্য নিরসনে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া শিক্ষাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দরিদ্রদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। আমরা জানি, সরকার দারিদ্র্য হ্রাস করতে বদ্ধপরিকর। সরকার পরিকল্পিত কর্মকান্ড পরিচালিত করায় মৃতু্য হ্রাস পেয়েছে, দরিদ্রতার হারও কমেছে। মানুষের আয় বেড়েছে, বেড়েছে গড় আয়ু। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্য এখনো নিরসন সম্ভব হয়নি। আমরা মনে করি, এখন এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে।

সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। ফলে মৃতু্যঝুঁকি হ্রাসসহ যেসব বিষয় আলোচিত তা নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি। মনে রাখা দরকার, নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুরা যে ধরনের জীবনযাপন করে, তার কারণে তারা মৃতু্যঝুঁকিতে বেশি থাকে। খাবার ছাড়াও তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। বায়ু ও পানিদূষণসহ নানা সংক্রামক ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়। পরিবেশ দূষণের বড় শিকার হয় তারা। এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টরা বিবেচনায় নিয়ে বৈষম্য নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিক- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89752 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1