বৈদেশিক মুদ্রা অজের্নর অন্যতম মাধ্যম ছিল চামড়া শিল্প। পাট শিল্পের নানাভাবে কিছুটা উন্নতি হলেও চামড়া শিল্পের তেমন উন্নতি বলার মতো নয়। তবুও সারা বছর চামড়ার যে সংগ্রহ হয় তা দিয়ে জাতীয় অথর্নীতির ব্যাপক সাফল্য অজর্ন করার কথা ছিল। বাংলাদেশের ধমীর্য়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান হওয়ার কারণে এখানে প্রতি বছর কোরবানির সময় লাখ লাখ পশু কোরবানি হয়ে থাকে। সেখান থেকে পশুর চামড়া ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে থাকে। কোরবানির এসব পশুর চামড়ার মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ইত্যাদির। ৮-১০ বছর আগেও চামড়াশিল্পের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এসব চামড়া ব্যবসায়ীর সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করত। আগেভাগেই ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ও অথর্ লগ্নির প্রতিষ্ঠান চাহিদামতো ঋণ প্রদান করত। ফলে ব্যবসায়ীরা বিশেষত কোরবানির পশুর চামড়া আন্তজাির্তক বাজারের দরের সাথে মিল রেখে চামড়া ক্রয় করত। চামড়াশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এলাকায় এলাকায় পাড়া মহল্লায় তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সঠিকমূল্য দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা যেত। উল্লেখ্য, কোরবানির পশুর চামড়ার অথর্টা পেয়ে থাকে সাধারণত গরিব, মিসকিন, দুস্থ, এতিম মানুষগুলো। এসব অথের্র মূল দাবিদার ওইসব শ্রেণির মানুষ। কিন্তু চামড়াশিল্পের বাজারদর একেবারে নিম্নমুখী হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাস্তবে ওইসব শ্রেণির মানুষ। চামড়াশিল্প অথর্নীতিতে যেভাবে দেশে সাফল্য দেখাবার কথা ছিল সেভাবে সফলতা দেখাতে ব্যথর্ হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশে কোরবানির মৌসুমে চামড়া পাচার হওয়ার সংবাদ নতুন নয়। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোরবানির মৌসুমে চামড়া পাচার রোধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে পাচার রোধ করা সম্ভব হয় না। বিগত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, কোরবানির মৌসুমে পশুর চামড়া ক্রয় করার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। কেউ এক লক্ষ টাকার গরুর চামড়া দুই হাজার টাকায় কিনতে চায় না। অনেক ধমীর্য় প্রতিষ্টানকে দেখা গেছে এতিম ছাত্রদের অথৈর্নতিক উপকারের জন্য এলাকা থেকে সংগৃহীত চামড়া লোকসান দিয়ে ব্যবসায়ীদের বিক্রি করে দিতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত যারা ব্যবসায়ী তারা দেশীয় বাজারে চামড়ার সঠিকমূল্যের নিদের্শনা না পাওয়াতে এলাকায় এলাকায় সংগৃহীত চামড়া তারা কিনতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসব কারণে বঞ্চিত হচ্ছে কোরবানি পশুর চামড়ার প্রকৃত ভুক্তভোগীরা। এক সময় আমরা শুনতাম ধমীর্য় অনাথ দুস্থ শিশুদের জন্য কোরবানির পশুর চামড়ার সংগৃহীত অথর্ দিয়ে সারাবছরের খরচের জন্য একটা ফান্ড তৈরি হতো। মাত্র ৫-৭ বছরের মাথায় এ শিল্পের বাজারদরের ওলটপালট হওয়াতে ওইসব শিশু প্রতিষ্ঠানের চামড়াশিল্পের ফান্ড আর সংগৃহীত হয় না। যেহেতু চামড়া সংগ্রহ করার পর এ শিল্পের সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা চামড়া কিনতে যখন চায় না, তখন অনাথদের প্রতিষ্ঠান তারাও চামড়া স্থানীয় বাজার থেকে নেতে চায় না। এভাবে পযার্য়ক্রমে চামড়াশিল্পের গৌরব ও ইতিহাস ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আন্তজাির্তক বাজারে চামড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও দেশীয় ব্যবস্থাপনায় চামড়া শিল্পের আন্তজাির্তকভাবে সমন্বয় এ শিল্পের প্রয়োজনীয় ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত না করা দীঘের্ময়াদি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা, বাস্তবায়ন না থাকার কারণে অথৈর্নতিক সফলতার বিশাল এ চামড়াশিল্পের পযার্য়ক্রমে আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে গেছে। জাতীয় অথর্নীতিতে যেভাবে অতীতে চামড়াশিল্প অবদান রাখছিল তা এখন নেই বললেই কম বলা চলে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের প্রণোদনা দিতে হবে। এ শিল্পকে অথর্নীতির চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। আর এই জন্য দরকার শিল্প মন্ত্রণালয় চামড়া শিল্প মালিক সমিতি স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সকলের মতামত ও পরামশর্ গ্রহণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে যত দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা অধিক। এখানে পশু লালন পালন খাওয়ার প্রচলন বেশি। প্রতি বছর লাখো কোটি চামড়াশিল্প সংগৃহীত হয়।
আন্তজাির্তকভাবে নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে চামড়া শিল্পের জাতীয় অথৈর্নতিক সফলতা রাষ্ট্র ও জনগণ ভোগ করতে পারছে না। সময় থাকতে এ শিল্পকে লাভের খাতায় নিতে হলে চামড়া পাচারের সমস্ত রাস্তা ও ছিদ্র বন্ধ করে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণের ব্যবস্থা ব্যাংক ঋণের ন্যায্য অধিকার দিতে হবে। যদি তাই হয় চামড়াশিল্পের মাধ্যমে দেশ জাতীয় অথর্নীতিতে এগিয়ে যাবে।
মাহমুদুল হক আনসারী
ঢাকা