শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও সংগ্রাম

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চির অম্স্নস্নান হয়ে থাকবে। আর আমরা হবো বিশ্বের বুকে গর্বিত জাতি।
তারাপদ আচার্য্য
  ১৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আজ থেকে শুরু হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন। কেবল সারাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হবে মুজিববর্ষ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম মহানায়ক। সেরা মুক্তি সংগ্রামী, সেরা রাষ্ট্রনায়ক। জননন্দিত নেতা হিসেবে তার তুলনা তিনি নিজেই। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর ভালোবাসা ও দায়বোধ তাকে মহিরুহে পরিণত করেছিল। ব্যক্তি শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে।

১৯২০ সালটি বাঙালি জাতির জন্য চিরস্মরণীয় একটি সময়। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের জাঁতাকলে স্বাধীন বাংলার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেই দুঃসময়কে অতিক্রম করে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে চিরতরে বাঙালির কাছে ফিরিয়ে দিতে আবির্ভূত হন বিশ্বের সংগ্রামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বাঙালির মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবের জন্ম। পিতা শেখ লুৎফর রহমান, মাতা বেগম সায়রা খাতুন। ১৯৩৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে সহধর্মিণী হিসেবে গ্রহণ করেন বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। ১৯৪৬ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে ধ্বনিত হয় এক কালপুরুষের দীপ্ত পথচলা। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। রাজনৈতিক অঙ্গনে শেখ মুজিবের সম্পৃক্ততা বেড়ে চলে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং তিনি এর সঙ্গে যুক্ত হন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময়ে ঢাকায় গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ও গ্রেপ্তার হন। বাংলার নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের শোষণ মুক্তির সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃস্থানে আসীন হন।

এ কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কেবল পাকিস্তান আমলেই ১৮ বার কারারুদ্ধ হয়ে ১২ বছর জেলে কাটিয়েছেন। ২৪টি মামলা তিনি সাহসের সঙ্গে লড়েছেন এবং দুইবার মৃতু্যর সামনে দাঁড়িয়ে দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসায় ফিরে এসেছেন। তিনিই প্রথম নেতা যিনি মাতৃভাষায় প্রথম জাতিসংঘে ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষার মুখ উজ্জ্বল করেন। পৃথিবীর আর কোনো নেতা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা ছাড়া তার স্বভাষায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন কিনা সে ইতিহাস আমাদের অজানা। বাংলা ভাষার সম্মানে পৃথিবীব্যাপী ২১ ফেব্রম্নয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। বাঙালি হিসেবে এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এমনকি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন সেটাও আজ ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বঐতিহ্যের অংশীদার। আজ বাঙালি শ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধুর নামে সমগ্র বিশ্বে ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে। আবহমানকালের প্রবহমান মানুষ তার নামে উদ্দীপ্ত হবে অনুপ্রাণিত হবে, অনুরণিত হবে, 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' ধ্বনিতে। এটা ধ্রম্নব সত্য।

'একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবী। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।' (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান) সময় বয়ে চলে অবিরাম। সময়ের পথ-পরিক্রমায় কিছু স্মৃতি হারিয়ে যায়, আবার কিছু স্মৃতি মনের মণিকোঠায় স্থায়ী আসন পেতে নেয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধু মানেই প্রতিটি বাঙালির মনের মুকুরে ভেসে ওঠে এক বীর নায়কের প্রতিচ্ছবি। ভেসে ওঠে বাংলার প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা সিক্ত একটি মানুষের মুখ। যে অসাধারণ ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে তিনি তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে অসংখ্য অগ্নি-পরীক্ষার মধ্যদিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও শোষকচক্রকে রুখে দাঁড়িয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছেন, তার তুলনা বিশ্বে বিরল। প্রতিটি সংগ্রামেই শেষ পর্যন্ত তিনি বিজয়ীর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তার অদম্য সাহস, ইস্পাত-কঠোর সংকল্প, আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি নিষ্ঠা এবং জনগণের ঐক্য ও সংহতিতে প্রগাঢ় বিশ্বাস থেকে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মুহূর্তেও তিনি এক বিন্দু সরে আসেননি। তিনিই বীর যিনি মৃতু্যকে ভয় পান না। আমৃতু্য স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য নিমগ্ন ছিলেন বলেই তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, তিনিই বাঙালির 'জাতির পিতা'।

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে বাঙালি উন্নত জীবন পাবে, দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পাবে, সেই চিন্তাই তিনি প্রতিনিয়ত করতেন। বাংলার মানুষের মুক্তির এই মহানায়ক মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে যখন জাতীয় পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন তখনই নৃশংস ঘাতকের নির্মম বুলেট স্ত্রী-পুত্র-পরিজনসহ কেড়ে নিল তার প্রাণ।

এক শতাব্দী আগে অখন্ড বাংলার প্রত্যন্ত পলিস্নতে জন্মগ্রহণ করে তিনি যেভাবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন, তা বিশ্বের বিস্ময় বৈকি। ৪৫ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী একদল ঘাতকের হাতে তার নৃশংস হত্যাকান্ড ছিল জাতির ইতিহাসে এক বড় কলঙ্ক। দেশের স্থপতি ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে তার পরিবারের সদস্যসহ এমন ভয়াবহভাবে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় তারা কার্যকর করতে পারত। কিন্তু তখন তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস পায়নি। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে।

মনে রাখতে হবে মৃত মুজিবের চেয়ে জীবিত মুজিব অনেক শক্তিশালী। তার কর্ম সংগ্রাম ও চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে সারাবিশ্বে। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপস্নবের ডাক দিয়েছিলেন এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, দরিদ্র ও মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, সোনার বাংলা গড়ার জন্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে তার সুযোগ্য কন্যা রক্তের ধারা জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশকে আজ উন্নত দেশে পরিণত করার দ্বারপ্রান্তে।

হে বাঙালি জাতি জাগ্রত হও, সচেতন হও, একটি সুশিক্ষিত, সুনীতি সম্পন্ন, বিজ্ঞান মনষ্ক, মানবিক ও সুশৃঙ্খল উন্নত স্বনির্ভর জাতিতে রূপান্তরিত হও। তবেই বঙ্গবন্ধুর, তার পরিবারের, ৩০ লাখ শহিদের ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ও শ্রমের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চির অম্স্নান হয়ে থাকবে। আর আমরা হবো বিশ্বের বুকে গর্বিত জাতি।

তারাপদ আচার্য্য: কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<92851 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1