শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই

অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব

নতুনধারা
  ২৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বিশ্বের ভয়াবহ দুর্যোগ 'করোনাভাইরাস' সংক্রমণের কারণে দেশের অর্থনীতির সব খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে আশঙ্কা করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির গবেষকরা বলছেন, বৈদেশিক খাত, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, স্বাস্থ্য খাত, সরকারি অর্থায়ন এবং মুদ্রা সরবরাহ ব্যবস্থা, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব এবং পণ্যের সরবরাহব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে মন্দার কবলে পড়বে দেশের অর্থনীতি। এতে মানুষের আয় কমবে। এমনকি বেকার হবেন অনেকেই। সামগ্রিকভাবে রাজস্ব আদায়ে চলমান নেতিবাচক অবস্থাকে আরও প্রভাবিত করবে। এতে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সম্প্রতি করোনার ক্ষতি নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা তুলে ধরেন গবেষকরা। বলাই বাহুল্য, করোনাভাইরাস মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ধরনকে পাল্টে দিয়েছে। সংক্রমণের আতঙ্কে গোটা বিশ্বই এখন 'একলা চলো' নীতিতে চলছে। আর এতে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব বড় ধরনের হবে- অর্থনীতিবিদদের এমন আশঙ্কা যেন স্পষ্ট।

বিশ্বময় বিস্তার ঘটা করোনাভাইরাসের প্রভাব শেষ পর্যন্ত কতটা, তা জানার সময় এখনো আসেনি। কেননা, প্রতিদিনই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। চীন ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনলেও বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে দ্রম্নতগতিতে ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। করোনাভাইরাসই এখন বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার অন্যতম কারণ। যদিও করোনাভাইরাসের মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তবে তা সময়সাপেক্ষ বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর বিজ্ঞানীর এমন আশার বাণীই এখন একমাত্র ভরসা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রতিরোধমূলক ওষুধ বা টিকা এখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তারও স্বাক্ষর রেখে যাবে এই ভাইরাস। আর অর্থনৈতিক বিপদ হবে সবচেয়ে বেশি। কেননা, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে বেশি মানুষ দেউলিয়া হবে। নিঃস্ব হবে বেঁচে থাকা বহুসংখ্যক মানুষ।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি এড়াতে প্রথমবারের মতো নিজস্ব কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সংস্থাটি জানায়, কৃষিপণ্যের যথেষ্ট উৎপাদন ও মজুত আছে। এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ টন খাদ্য মজুত, যা গত বছরের চেয়ে দেড় লাখ টন বেশি বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। এ ব্রিফিংয়ে বক্তারা ঝুঁকি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন। সিপিডি মনে করে, করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রয়োজন পড়বে বিপুল পরিমাণ বাড়তি টাকা। যেহেতু এটি বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদের হার কমানোরও পরামর্শ দেয় সিপিডি। এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংকসহ নানান আন্তর্জাতিকপর্যায়ের অর্থনীতির গবেষকরা করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, তাও আঁৎকে ওঠার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা যেতে পারে।

উলেস্নখ্য, ২০০৮ সালে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ আত্মতৃপ্তিতে ছিল বাংলাদেশ। তবে এবারের করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে বলেই আশঙ্কা করছেন সবাই। করোনাভাইরাসে বিশ্বমন্দা প্রকট হলে বাংলাদেশ বিপদমুক্ত থাকবে, এমনটি মনে করার সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থনীতির এই উৎকণ্ঠার মধ্যে করণীয় কী তা নির্ধারণ করতে হবে। তবে প্রথম কাজটি হবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া। সিডিপি এই ব্রিফিংয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুদের হার কমানো, বিদু্যৎ, পানি, গ্যাসসহ সরকারি অন্যান্য বিল আপাতত বন্ধ রেখে সেই টাকায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ, সবার কাছে খাদ্য পৌঁছাতে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন সুপারিশও করেছে সিডিপি।

আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃতু্য যেমন ঠেকানো প্রয়োজন, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যও যথাযথ পরিকল্পনা জরুরি। সামগ্রিকভাবে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নেয়াসহ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবায় জোর দেওয়ার যে সুপারিশ করেছে সিপিডি তা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টরা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিক- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93687 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1