শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের প্রয়াণ

এই ক্ষতি অপূরণীয়
নতুনধারা
  ২৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আর নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষক, শিল্প-সাহিত্য সমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মৃতু্যতে দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তথ্য মতে, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে তার মৃতু্য হয়। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে দীর্ঘ সাত মাস ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন ৮৪ বছর বয়সী এই অধ্যাপক। বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মৃতু্যতে নেমে এসেছে শোকের মাতম। তার মৃতু্যতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শোক জানিয়েছেন। শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

এই কৃতী মানুষটি জন্মেছিলেন ১৯৩৬ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চাঁদপুর জেলার কচুয়ায়। তার পিতার নাম আশেক আলী খান এবং মাতার নাম সুলতানা বেগম। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ১৯৫৫ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৬ সালে স্নাতকোত্তর সম্মান অর্জন করেন। সত্তরের দশকে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যান এবং সেখানে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরে এই বিভাগের অধ্যাপক হন। অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেছেন।

আমরা বলতে চাই, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ছিলেন একজন শিক্ষক, গবেষক, রাজনৈতিক ও সর্বোপরি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একনিষ্ঠ-নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তিনি তার জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে, তার মৃতু্য আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। ৫০ দশকের গোড়া থেকে যে মানুষেরা সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বল হয়ে বিরাজ করছেন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার সৃজনশীলতায় সার্বিক সাহিত্য জগৎ পরিপুষ্টতা লাভ করেছে। সাহিত্যাঙ্গনে তার অবদান রয়েছে কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিল্প সমালোচনা, সাহিত্য সম্পাদনা-সমালোচনার ক্ষেত্রে। একদিকে তিনি ছিলেন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, উদার ও উন্নত মনমানসিকতার মানুষ, অন্যদিকে তার কর্মের মধ্য দিয়ে হৃদ্য হয়েছে সাহিত্য অঙ্গন। বহুগুণে গুণান্বিত হয়ে শেষ পর্যন্ত কবি পরিচয় সামনের দিকে চলে আসে। এছাড়া আরেকটি বিষয় উলেস্নখ্য যে, এ দেশের চিত্র, ভাস্কর্য বা দৃশ্য শিল্পের প্রথম সারির আলোচকও ছিলেন তিনি।

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের সাহিত্যজীবন শুরু হয়েছিল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে। সেই সময়ে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এছাড়া ১৯৫০ সালে প্রকাশিত নতুন কবিতা কাব্য সংকলনের সর্বকনিষ্ঠ কবি ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে ডানা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রবন্ধ সংকলন 'মাইকেলের জাগরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ'।

আমরা বলতে চাই, যারা কর্মের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরও এমন একজন স্মরণীয় মানুষ। কবিতায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বহুভাবে করে গেছেন। গভীর প্রতীকী এবং ইঙ্গিত বহনকারী মানুষ, সমাজ, দেশ, রাজনীতি ছিল তার লেখার বিষয়। এছাড়া নানাভাবে তিনি দেশের সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করেছেন- যেখানে তার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার মুজাফফর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার এবং জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদকসহ অসংখ্য পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকেও ভূষিত হন। এই গুণী মানুষটির বিদেহী আত্মার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93989 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1