বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মহান স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন

বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে 'ভিশন-২০২১' ও 'ভিশন-২০৪১' কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার, যা সফল হওয়ার পথে। শুধু দেশেই নয়- আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর স্বীকৃতি মিলেছে। আমাদের এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
তারাপদ আচার্য্য
  ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে। ২৬ মার্চ রাতে রেডিও মারফত ইয়াহিয়া সাহেব যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে শুধু একটি নামই উচ্চারিত হয়েছিল শেখ মুজিব। 'মুজিব ইজ এ ট্রেইটর টু দ্য নেশন, দিজ টাইম হি উইল নট গো আনপানিসড।' এর আগে জনসাধারণের ওপর পাকিস্তানি হামলার কথা চিন্তা করে শেখ মুজিব ৭ মার্চের বিশাল জনসভায় সমবেত জনতাকে 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে' ও 'স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম' করতে বলেন। ভাষণ সমাপ্তির প্রাক্কালে তার আহ্বান 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' পূর্ব বাংলার জনসাধারণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করল। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মূলত মার্চের প্রথম দিনগুলো ছিল খুবই উত্তাল। তখন দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোল চলছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে তারা নির্বিচারে গণগত্যা চালায়- যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।

একদিকে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে বাঙালিদের ওপর চলল পাকিস্তানি আগ্রাসন, বাঙালিদের রক্তাক্ত প্রতিরোধ আর অন্যদিকে পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগারে প্রতিমুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যর হাতছানি। ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগ আর কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। যে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরীহ বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদের খুবই দ্রম্নত ও লজ্জাকর পরাজয় ঘটলো। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করল তারা এবং ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্যকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে নেয়া হলো। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এটাই হলো সবচেয়ে বড় ধরনের আত্মসমর্পণ।

\হ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মৃতু্যঞ্জয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে এক মুহূর্ত সময় অপচয় করেননি। পাকিস্তানি হানাদাররা শুধু এ দেশের ৩০ লাখ মানুষকেই হত্যা করেনি, এ দেশের স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, রাস্তাঘাট সব ধ্বংস করে দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনে শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম। দিন-রাত বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রম আর কূটনৈতিক পারদর্শিতায় বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। থামিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। মাঝে বিরতির পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আবার ক্ষমতায় আসেন। তিনি টানা ১১ বছর ক্ষতায় আছেন। তিনি চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদে নারী শাসক।

স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স এখন ৪৯। বিভিন্ন দিক দিয়েই বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। অথচ এই বাংলাদেশের অগ্রগতির লাগাম টেনে ধরে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তান। বিভিন্নভাবে তারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করেছে। ৪৯ বছর পর সেই পাকিস্তান কেমন আছে? তারা কি আমাদের চেয়ে এগিয়েছে নাকি পিছিয়ে গেছে? অর্থনীতিসহ প্রায় সব ধরনের সূচক অনুযায়ী পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইমরান খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর। গত বছর ডিসেম্বরে ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) যখন আলাদা হয়েছিল, আমাদের অনেকে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান আমাদের জন্য বড়মাপের বোঝা হিসেবে ছিল। নিজের কানেই আমি এসব শুনেছি। সেই পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) আজ সব কিছুতেই এগিয়ে গেছে। তাদের দূরদর্শী চিন্তার জন্যই এটা হয়েছে।' এ ছাড়া গত বছর পাকিস্তানের একটি টিভি টক শো'তে দেশটির নৃবিজ্ঞানী জাইঘাম খান নিজ দেশের সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'পাকিস্তানের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে, বাংলাদেশের দিকে তাকান। সুইডেন নয় বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করুন'। পাকিস্তান কেন বাংলাদেশকে অনুসরণ করবে, সে বিষয়ে জাইঘাম খান তার বক্তব্যে নানা যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। তার ওই বক্তব্যের পর পাকিস্তানে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। তবে সেই বিতর্ক এখনো থেমে নেই। আসুন দেখে নেয়া যাক, পাকিস্তানের চেয়ে কতটুকু এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচক, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুধা প্রতিরোধ, সুশাসন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৪ দশমিক ৪ বছর। আর পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু ৬৮ দশমিক ১ বছর। যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) ২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জিডিপির আকার অনুয়ায়ী বৃহত্তর অর্থনৈতিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান ৪৪তম। সিইবিআর প্রতিবেদন অনুযায়ী পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে তিন ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছরের মাথায় পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ ঠিক কী কী কারণে এগিয়ে রয়েছে এই প্রশ্ন সামনে চলে আসে। মূলত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সফল ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্যই পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না। সেখানে সামরিক বাহিনীর প্রভাব অনেক বেশি। সে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশকে এখন বলা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, বলা হয় এশিয়ার বাঘ। যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। একাত্তরের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশ এক নয়। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, দেশের বিদু্যৎ সংকট সিংহভাগই কেটে গেছে। দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান সরকার দেশের ঈপ্সিত প্রবৃদ্ধির ভিত্তি রচনা করতে সক্ষম হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রাপ্তির হারও অনেক বেড়েছে এবং এ ক্ষেত্রে বাজেটে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। মাতৃমৃতু্য ও শিশুমৃতু্যর হার কমেছে। মুদ্রাস্ফীতি নেমে এসেছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশে। তথ্য-প্রযুক্তিতে, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন সূচকে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক ভালো। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে 'ভিশন-২০২১' ও 'ভিশন-২০৪১' কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার, যা সফল হওয়ার পথে। শুধু দেশেই নয়- আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর স্বীকৃতি মিলেছে। আমাদের এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

তারাপদ আচার্য্য: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94101 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1