শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

শিশুদের কাঁধে বইয়ের বোঝা কমানো দরকার

নতুনধারা
  ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

শিশুরা জাতীর ভবিষ্যৎ। অথচ এই শিশুদের পিঠে বিশাল এক বই-খাতা বোঝাই শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ তাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত, শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের বোঝা কমানোর তাগিদ দিয়ে বলেছেন, উন্নত দেশের মতো শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা বইহীন করা না গেলেও যে কোনো উপায়ে বইয়ের সংখ্যা কমানো জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন বই চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি। প্রতিনিয়ত ভারী বইয়ের বোঝা কাঁধে বহন করার কারণে শিশুরা আর্থাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত হতে যাবে, যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পার হলেই শুরু হয় অসংখ্য অনুমোদনহীন বই পড়ানোর চাপ। ফলে প্রত্যেক শ্রেণিতে সরকার অনুমোদিত বইয়ের বাইরেও কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া অনেক বই পড়তে বাধ্য হয় শিশুরা। বেসরকারি স্কুল বিশেষত শহরাঞ্চলের কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের ১৩ থেকে ১৪টি বিষয়ও চাপিয়ে দেয়া হয়। এসব বই প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এনসিটিবি প্রতিবছর অনুমোদনহীন এসব বই পড়ানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেও ফলাফল শূন্য। কারণ এ অপরাধ দমনে নেই মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্য কোনো নজরদারি। কীভাবে বইয়ের সংখ্যা কমানো যায়? এমন প্রশ্নে অনেক শিক্ষক বলছিলেন, আমাদের সময়েও ছিল একটি বইয়ের মধ্যে অনেক বিষয়। একটি ক্যামেস্ট্রি, একটি বায়োলজি যুক্ত করে একটি বই। এভাবে করতে পারলেও বইয়ের সংখ্যাটা কমে। জানা গেছে, শিশু শিক্ষার্থীদের কাঁধে বইয়ের বোঝা কমাতে ইতোমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। শ্রেণি অনুসারে বইয়ের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়ার পাশাপাশি শ্রেণি কক্ষে শিক্ষা বইহীন করার বিষয় নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরু করেছে দেশটি। বইয়ের বদলে শিশুদের হাতে 'ট্যাব' তুলে দেয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। ওই ট্যাবগুলোর ওজন আড়াইশ থেকে সাড়ে তিনশ গ্রাম। আর ট্যাবের মধ্যে পাঠ্যপুস্তকের সব 'প্রিন্ট সংস্করণ' যুক্ত করে দেয়া যায় কিনা। শিশুরা শুধু আঙ্গুল ছোঁয়ায় ভেসে উঠবে বিভিন্ন ভাষার পাঠ্যপুস্তক। এক গাদা বই, পানির বোতল, ছাতা দিয়ে শিশুদের কাঁধে স্কুল ব্যাগ তুলে দেয়া হচ্ছে। এই বয়সে ব্যাগের বোঝা শিশুর শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনই মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে শিশুর শিক্ষাজীবন। শুধু বইয়ে মুখ গুঁজে নয়, হাসি-আনন্দ-খেলার ভেতর দিয়ে বিকশিত হবে শিশুরা- এমনটই আশা করা যায়। প্রাথমিকের সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে আছে বহু প্রতিষ্ঠান। আছে হাজার হাজার কেজি স্কুল, যার দায়িত্বও এই মন্ত্রণালয়ের। প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন অযাচিত বই পাঠ্যভুক্ত করে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ওইসব প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। স্কুল শুরু আর ছুটির সময় সারা দেশেই প্রতিদিনই দেখা যায়, স্কুলের গেটে বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছেন। বই-খাতা, পানির পট, টিফিন বক্স, রং-পেন্সিল বক্স- এসব আনুষঙ্গিক জিনিস দিয়ে ব্যাগ ভরে তাদের শিশুসন্তান বিদ্যালয়ে ঢুকছে। শুধু কি তাই, বোর্ড নির্ধারিত বইয়ের পাশাপাশি সহপাঠ নামে থাকে নানা কিসিমের নানা নামের বই। ব্যাগের ওজন সাত থেকে আট কেজিও হয়ে থাকে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা না চাপিয়ে সরকারি নির্দিষ্ট নীতিমালা করে সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা যেমনি শিশুরা উপকৃত হবে তেমনি জাতি গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।

আনোয়ারুল হক নিজামী

মানবাধিকার কর্মী, মীরসরাই

চট্টগ্রাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94188 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1