সারা বিশ্ব এখন করোনাজ্বরে কাঁপছে। আক্রান্ত এবং মৃতু্যর সারি প্রতিনিয়তই হচ্ছে দীর্ঘ। দেশে দেশে চলছে 'লকডাউন'। এ পরিস্থিতিতে কাজকর্ম না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন ভীষণ দুর্বিপাকে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সমস্যা তীব্রতর। সরকার এবং বেসরকারিভাবেও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছাতে চেষ্টা করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট অপ্রতুল। বলা যায়, অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের মুখোমুখি সবাই। এ পরিস্থিতিতে সরকারের নানান কাজেও অনিয়মের খবর আসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম করলেও সহ্য করা হবে না। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া নানান উদ্যোগ এবং এই হুঁশিয়ারি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দেশের সাধারণ ছুটি ঘোষণার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা হচ্ছে। কৃষক, চা-শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তারা দৈনন্দিন কাজে যেতে পারছেন না। এদের বাঁচিয়ে রাখা সামাজিক কর্তব্য উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১০ টাকা কেজি দরে চালসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে। এদের কাছে আরও সাহায্য ও খাদ্যদ্রব্য পাঠাতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের সহযোগিতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিত্তবানদের সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তা হবে দুঃখজনক। এটা আমরা সহ্য করব না।
দেশের ৬৪ জেলার ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি আরও বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড অনুযায়ী তালিকা করতে হবে। সেই অনুযায়ী সবাই যেন সাহায্য পায়। কেউ যেন বাদ না পড়ে। তিনি বলেছেন, সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দুঃসময় কেউ সুযোগ নিলে, কোনো অভিযোগ পেলে আমি কিন্তু তাকে ছাড়ব না। বিন্দু পরিমাণ অনিয়ম সহ্য করা হবে না। উলেস্নখ করা যেতে পারে, এর আগে বিভিন্ন সময়েই সরকারি ত্রাণ, সাহায্য, ১০ টাকা কেজি দরে চাল, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রিসহ নানান ক্ষেত্রে অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সেরও ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরও নানানভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতি রোধে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করেও দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি, যা অত্যন্ত পরিতাপের। আর কিছু দুর্নীতিবাজদের কারণে যে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট সচেতন নন। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হলেও তা মানছেন না জনগণ। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে জনতার উদ্দেশে বলেছেন, করোনা প্রতিরোধে মানুষের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আপনারা এসব নির্দেশনা মেনে চলুন। কারণ, নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। বিশ্বব্যাপী করোনার এই ভয়াল থাবায় নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করার বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণে 'আমাদের আরও সচেতন থাকা দরকার' বলে প্রধানমন্ত্রী যে পরামর্শ দিয়েছেন তা মেনে চলা জরুরি। ভবিষ্যতে যেন করোনা না ছড়ায়, সে ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকাও বাঞ্ছনীয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জনগণকে সুরক্ষিত রাখা, জনকল্যাণে যথাযথভাবে নিয়ম মেনে কাজ করার পাশাপাশি জনসমাগম যাতে না হয় এ জন্য নববর্ষের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতেও অনুরোধ করেছেন দেশবাসীকে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সুরক্ষা, রাজধানীতে মশা নিধন, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান ছুটি বাড়ানো, শিল্প-কারখানা, ইন্ডাস্ট্রি ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চালু করাসহ সার্বিক বিষয়ে যেসব পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা আশা করব তা যথাযথভাবে পালন করবে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ। সবার সচেতনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ সক্ষম হবে- এটাই প্রত্যাশা।