বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কমিউনিটি সংক্রমণ রোধে উদ্যোগ সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে

নতুনধারা
  ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

মারণব্যাধি করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্বজুড়ে বিপর্যস্তত্ম মানুষ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিদিন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপসর্গ দেখে পরীক্ষা করে 'পজিটিভ' পাওয়া গেলে তাকে দ্রম্নত পৃথক করতে হবে। সংক্রমণ রোধের এটিই উপায়। শনিবার যায়যায়দিনের খবরে জানা যায়, বিদেশ থেকে আসেননি, এমনকি বিদেশফেরত কারও সংস্পর্শে আসারও ইতিহাস নেই, অথচ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন- এ ধরনের স্বল্পসংখ্যক রোগী এরই মধ্যে হাসপাতালে আসতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিকে বিশ্লেষকরা কমিউনিটি সংক্রমণের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। এটি রোধ করতে না পারলে ঘনবসতিপূর্ণ, নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এ দেশে করোনাভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাবে- এমন আশঙ্কাও অযৌক্তিক নয়। ফলে বিদ্যমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিটি সংক্রমণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার বিকল্প থাকা উচিত নয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নিঃসন্দেহে। যদিও এরই মধ্যে বেশকিছু জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ধাপে ধাপে আরও নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে কমিউনিটি সংক্রমণ ঠেকাতে মূল কৌশল হিসেবে 'লকডাউন' পদ্ধতিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে হোম কোয়ারেন্টিন এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকেই সারাদেশে সেনাবাহিনী জনগণকে সচেতন করছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও সারাদেশে অঘোষিত লকডাউনের মূল লক্ষ্য পূরণে রাস্তাঘাটে বিনা প্রয়োজনে ঘোরাঘুরি এবং অপ্রয়োজনে চলাচলরত মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত যান বন্ধের্ যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত ভূমিকা পালন করছে। এমনকি ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশ উপেক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা দেওয়ার মৌখিক নির্দেশনা আছে বলেও জানা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ ভাইরাস মানুষের শরীর ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে বাঁচতে পারে না, ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যাতে সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে আসতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জারি রাখা গেলেই তা সংক্রমণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এমনটি প্রত্যাশা করা দোষের নয়।

তথ্য মতে, মৃদু আকারে হলেও দেশে স্টেজ-থ্রি পর্যায়ে পৌঁছেছে এ সংক্রমণ। তাই এখন সামান্য অসচেতন হওয়ারও সুযোগ নেই। করোনাভাইরাস পুরোপুরি স্টেজ-থ্রিতে পৌঁছলে এর সংক্রমণের উৎস আর কোনোভাবেই খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই সময় প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি সমাজের বিভিন্নস্তরে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পুরোপুরিভাবে স্টেজ-থ্রিতে পৌঁছলে তা কতটা সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়েও দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এ উদ্বেগ অস্বাভাবিক নয়। আমরা বলতে চাই, সরকার কমিউনিটি সংক্রমণ ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সময়োপযোগী। একই সঙ্গে এ রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জামাদি, বিশেষ করে ভেন্টিলেটর পরিসেবা আরও জোরদার করা আবশ্যক। ইতিমধ্যে সারাদেশে বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেউ করোনার উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রম্নত টেস্ট করানোর ব্যাপারে জোরাল পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি জ্বর-সর্দি-কাশি-গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে কোথাও কেউ মারা গেলে তার মৃতু্যর কারণ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবার ও ঘনিষ্ঠজন এবং এলাকা প্রয়োজনে লকডাউন করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কমিউনিটি সংক্রমণ রোধে সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষার পাশাপাশি উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির মৃতু্যর কারণ শনাক্তও দরকার।

সর্বোপরি, সংক্রমণ রোধে সব স্তরে দ্রম্নততার সঙ্গেই কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। চিকিৎসক, মিডিয়াকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিতদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের এই অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নআয়ের মানুষকে বেঁচে থাকার তাগিদে যাতে দৈনন্দিন খাদ্য সংগ্রহে রাস্তায় নামতে না হয় তা নিশ্চিতে ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া অপরিহার্য। সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেশের মানুষ করোনার ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্তি পাবে বলেই আমরা আশাবাদী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95254 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1