শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য

১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনাকে ১৯ বারের বেশি প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। অতীতের হত্যার প্রচেষ্টা ও হুমকি আর বর্তমানের অপপ্রচারের মধ্যেও তার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে করোনা কবলিত হয়েও ২০২১ সালের পরই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে- এটা নিশ্চিত।
ড. মিল্টন বিশ্বাস
  ১৭ মে ২০২০, ০০:০০

আজ ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ৩৯তম বার্ষিকী। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের ১৯৮১ সালের এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি সেদিন ফিরেছিলেন বলেই আজ করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিশ্ববাসীর কাছে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে। সেদিন তিনি ফিরে না এলে বাংলাদেশের পুনর্জন্ম হতো না আর এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য আপসহীন নেতারও দেখা মিলত না। উপরন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মুজিববর্ষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নেতৃত্বের মহিমান্বিত রূপও দেখা যেত না। বাঙালির চিরঞ্জীব আশা ও অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস শেখ হাসিনা বর্তমানে করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমে দিনযাপন করছেন।

২. বাইগার নদী কুল-কুল ছন্দে ঢেউ তুলে ছুটে চলেছে। শরতের নীলাকাশ। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার চারদিকে সবুজ বৃক্ষ ও খাল-বিলে থই থই জলরাশি। দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুল, শিউলিতলার নরম চাদর আর সাদা মেঘের ভেলা। এরকম একটি প্রাকৃতিক পরিবেশে, মায়ায় ভরা নিরিবিলি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর  এক দুখী রাজকন্যা জন্মগ্রহণ করেন; যার নাম শেখ হাসিনা। জাতির পিতাকে দীর্ঘদিন যেমন রাজপথ ও জেলের সেলে বন্দি থেকে জনগণের জন্য অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছিল তেমনি ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী শেখ হাসিনাকেও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকারবঞ্চিত মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনা লিখেছেন- 'বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা আমাকে ৬টি বছর দেশে আসতে দেয়নি। যখন দেশে এলাম, তখন বিমানবন্দরে লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলাম, কিন্তু আমার চোখ ঘুরে ফিরছিল পরিবারের সেই চেনা মুখগুলো খুঁজতে। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাইনি। আমি যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই, তখন দলের নেতারা আমাকে সভানেত্রীর দায়িত্ব দেন। দেশে ফিরে অসহ্য বেদনার মধ্যেও প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম- অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহিদের রক্ত যাতে বৃথা না যায় সেই কাজ করতে হবে। আমি সেই থেকে দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমি কাজ করে যাচ্ছি, এ জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও আমি প্রস্তুত রয়েছি।' তার এই নির্লোভ ও আত্মত্যাগী মানসিকতাই স্বাভাবিক। কারণ তিনি তো আমাদের জাতির পিতার কন্যা, তার যোগ্য উত্তরসূরি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। এটি ছিল তার প্রথম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন; তখন থেকেই বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ঘটে। তার ফিরে আসার পর বাংলাদেশ আবার বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। ৩৯ বছর আগে তার প্রত্যাবর্তন ছিল অতি সাধারণ, কারণ সেভাবেই তিনি দেশের জনগণের সামনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। তিনি এক বৃহৎ শূন্যতার মধ্যে এসে দাঁড়ালেন। এখানে তার ঘর নেই; ঘরের আপনজনও কেউ নেই। তাই সারা দেশের মানুষ তার আপন হয়ে উঠল। তিনি ফিরে আসার আগে ছয় বছর স্বৈরশাসকরা বোঝাতে চেয়েছিল তারাই জনগণের মুক্তিদাতা। কিন্তু সাধারণ মানুষ ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছিল, বিচার দাবি করছিল জাতির পিতার হত্যাকান্ডের। সেনাশাসকের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকায় জনগণের শাসনের দাবি নিয়ে রাজনীতির মাঠে রাতদিনের এক অক্লান্ত কর্মী হয়ে উঠলেন শেখ হাসিনা। তিনি নেতা কিন্তু তারও বেশি তিনি কর্মী। কারণ দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও তার শাসনকাল সম্পর্কে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেওয়া, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা তার প্রাত্যহিক কর্মে পরিণত হলো। দেশে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় আবেগসিক্ত বর্ণনা আছে তার নিজের লেখা গ্রন্থগুলোতে। তুলে ধরছি একটি উদ্ধৃতি : 'আমার দুর্ভাগ্য, সব হারিয়ে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। লাখো মানুষের স্নেহ-আশীর্বাদে আমি সিক্ত হই প্রতিনিয়ত। কিন্তু যাদের রেখে গিয়েছিলাম দেশ ছাড়ার সময়, আমার সেই অতি পরিচিত মুখগুলো আর দেখতে পাই না। হারানোর এক অসহ্য বেদনার ভার নিয়ে আমাকে দেশে ফিরতে হয়েছিল।...' (ড. আবদুল মতিন চৌধুরী : আমার স্মৃতিতে ভাস্বর যে নাম, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, পৃ: ৭৪) আমরা জানি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন। ১৯৬২-তে স্কুলের ছাত্রী হয়েও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মিছিল নিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার রাজনৈতিক নেতৃত্বের পথচলা। ১৯৬৯-এর গণ-অভু্যত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ হলেও রাজনীতির সঙ্গেই তার আজীবন বসবাস। কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, শেখ হাসিনা যখনই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছিলেন তখনই বুঝে নিয়েছিলেন-'দুর্গম গিরি কান্তার মরু পথ।' তার 'পথে পথে গ্রেনেড ছড়ানো'। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (১৯৮১ সালের ১৭ মে) আগে ৫ মে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় বক্স আইটেমে তার সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চের সামরিক শাসন জারির দুদিন পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, 'আমি সামরিক শাসন মানি না, মানবো না। বাংলাদেশে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবোই করবো।' তাই তো কবি ত্রিদিব দস্তিদার শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, 'আপনিই তো বাংলাদেশ'।

৩. এ দেশে শেখ হাসিনার প্রথম স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (ভারত থেকে) দিন থেকেই রাজনীতির মঞ্চে দ্রম্নত দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে 'বঙ্গবন্ধু' ও 'জয় বাংলা' স্স্নোগান নিষিদ্ধ ছিল। সেদিন সেই স্স্নোগান প্রকম্পিত হয়ে উঠল আকাশে-বাতাসে; রাজপথ জনগণের দখলে চলে গেল। সেনাশাসক জিয়া এতদিন তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের আগে সেই বছরই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং জিয়ার অভিসন্ধি ভেস্তে যায়। সেদিনের ঢাকায় লাখো মানুষের বাঁধভাঙা স্রোত তাকে কেন্দ্র করে সমবেত হয়েছিল। তাদের কণ্ঠে ছিল বিচিত্র ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি। 'শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম', 'শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।' আরও ছিল- 'শেখ হাসিনা আসছে, জিয়ার গদি কাঁপছে, গদি ধরে দিব টান জিয়া হবে খান খান।' আবালবৃদ্ধ জনতা আবেগে অশ্রম্নসিক্ত হয়ে উচ্চারণ করেছিলেন- 'মাগো তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব।' সেদিনের প্রত্যয় শেখ হাসিনা ও তার সরকারই বাস্তব করে তুলেছেন। জাতির পিতা হত্যাকান্ডের কয়েকজন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বাকি পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে শিগগিরই ফাঁসি দেওয়া হবে বলে আমরা মনে করি। ১৭ মে সম্পর্কে দৈনিক বাংলার সংবাদ ছিল এরকম- 'ওইদিন কালবোশেখির ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ৬৫ মাইল। এবং এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল।' দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমান থেকে নেমেই তিনি দেশের মাটিতে চুমু খান। এ সময় বিপুল জনতার বিচিত্র স্স্নোগান মুখরিত করে তুলেছিল ঢাকার রাজপথ। যেন সূর্যোদয় হয়েছে, নতুন দিনের পথচলা শুরু হলো। অশ্রম্নসজল সেই দিনের কথা আছে নানাজনের স্মৃতিচারণে। ঢাকা শহর তখন মিছিলের নগরী। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটের পর বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি মাটি স্পর্শ করার আগেই হাজার হাজার উৎসাহী জনতা সব নিয়ন্ত্রণের সীমা, নিরাপত্তাবেষ্টনী অতিক্রম করে ফেলে। নিরাপত্তাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় অবশেষে তিনি নেমে আসেন; হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু তার অন্তরে ততক্ষণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। বিকাল ৪টা ৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা একটি ট্রাকে ওঠেন। এ সময় বজ্র নিনাদে জনতার স্স্নোগান চলছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক যখন ফুলের মালা পরিয়ে অভিবাদন জানান তখন বাঁধভাঙা কান্নার জোয়ার এসে ভাসিয়ে দেয় শেখ হাসিনাকে; কেঁদে ওঠেন তিনি। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কেবল পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই তুলনীয়। 

৪. দুঃখী রাজকন্যার মতো হৃত রাজ্য, হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য শেখ হাসিনার জন্ম ও পুনর্জন্মের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল দেশ ও জনতার। আগেই বলেছি তার প্রথম প্রত্যাবর্তনের আগে নৈরাজ্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল মানুষ। পাকিস্তানি শাসক, দালাল-রাজাকার ও আন্তর্জাতিকভাবে কয়েকটি দেশের বাধা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং আপামর জনগণের অংশগ্রহণে ৯ মাসের মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের অভু্যদয় ঘটে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার প্রচেষ্টা সফল হতে দেয়নি খুনিরা। ফলে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী সামরিক শাসকদের অভু্যত্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে। দেশ অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়। দেশের প্রতিকূল এক সময়ে জননেত্রীকে আমরা রাজনীতির মঞ্চে পেলাম। তিনি দায়িত্ব নিলেন এবং লাখো জনতার সমাবেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন- 'আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। ...বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।' গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও হাজারো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি জনগণের পাশেই আছেন; ভবিষ্যতে থাকবেনও।

১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২০০৭ সালের সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল পর্যন্ত একাধিকবার বন্দি অবস্থায় নিঃসঙ্গ মুহূর্ত কাটাতে হয়েছে তাকে। তিনি লিখেছেন- 'দেশ ও জনগণের জন্য কিছু মানুষকে আত্মত্যাগ করতেই হয়, এ শিক্ষাদীক্ষা তো আমার রক্তে প্রবাহিত। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর পর প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার জীবনের অনিশ্চয়তা ভরা সময়গুলোয় আমি তো দেশের কথা ভুলে থাকতে পারিনি? ঘাতকদের ভাষণ, সহযোগীদের কুকীর্তি সবই তো জানা যেত।' (নূর হোসেন, ওরা টোকাই কেন, পৃ. ৫৩) দেশে তখন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, রাজনীতিবিদদের বিশেষ আইনে কারান্তরীণ করে রাখে সেনাশাসক, আবার সেনাবাহিনীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তা ও জওয়ানদের ফায়ারিং স্কোয়াডে অথবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের পথ সুগম হয় শেখ হাসিনার আগমনে।

৫. ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশ ও জনগণের কাছে প্রত্যাবর্তনের (জন্মান্তরের) মতো শেখ হাসিনার ২০০৭ সালের ৭ মে আমেরিকা থেকে দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তনও (তৃতীয় জন্ম) ছিল আমাদের জন্য মঙ্গলকর। ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির পর তার দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু ১৬ জুলাই যৌথবাহিনী তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে ৩৩১ দিন কারাগারে বন্দি করে রাখে। সেসময় গণমানুষ তার অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তার সাবজেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেপ্তারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃতু্যবরণ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে স্পর্শ করেছিল। কারণ সে সময় আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সত্যকথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও লুটপাটের মাধ্যমে এদেশকে নরকে পরিণত করেছিল। নেত্রীকে গ্রেনেড, বুলেট, বোমায় শেষ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্ভীক; এখনো তেমনটাই আছেন। এজন্য করোনা সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে মার্কিন ম্যাগাজিন 'ফোর্বস'। অন্যদিকে ব্রিটেনের 'দ্য ইকোনমিস্ট' মহামারির মধ্যেও এদেশের অর্থনীতির নিরাপত্তা বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনাকে ১৯ বারের বেশি প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। অতীতের হত্যার প্রচেষ্টা ও হুমকি আর বর্তমানের অপপ্রচারের মধ্যেও তার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে করোনা কবলিত হয়েও ২০২১ সালের পরই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে- এটা নিশ্চিত।

তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মহামারিসৃষ্ট সব বিপর্যয় থেকে উঠে দাঁড়াতে হবে- তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ড. মিল্টন বিশ্বাস: বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বসধরষ-ৎিরঃবৎসরষঃড়হনরংধিং@মসধরষ.পড়স)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99721 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1