বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানের যত কথা

চিকুনগুনিয়া
শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়
  ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

চিকুনগুনিয়া হচ্ছে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (ঈঐওকঠ) দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের দুই থেকে চার দিনের মধ্যে আকস্মিক জ্বর শুরু হয় এবং এর সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে- যা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই রোগে মৃতু্যঝুঁকি প্রতি ১০ হাজারে একজন বা এর চেয়েও কম তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগের জটিলতা তুলনামূলক বেশি হয়।

এই ভাইরাসটি মশার কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে। এডিস গণের দুটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস এই ভাইরাসের বাহক হিসেবে পরিচিত। তারা মূলত দিনের আলোতে কামড় দিয়ে থাকে। মানুষ ছাড়াও কয়েকটি প্রাণি- যেমন বানর, পাখি, তীক্ষ্নদন্ত প্রাণী- যেমন ইঁদুরেও এই ভাইরাসের জীবনচক্র বিদ্যমান।

এই রোগের উপসর্গকে অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বর এবং জিকা জ্বরের সঙ্গে ভুল করে তুলনা করা হয়। তানজানিয়াতে ১৯৫২ সালে প্রথম এ রোগটি ধরা পড়ে। চিকুনগুনিয়া নামটি এসেছে তানজানিয়ার মাকুন্দি জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত কিমাকুন্দি ভাষা থেকে যার অর্থ 'কুঁচিত হওয়া' বা বাঁকা হয়ে যাওয়া।

উপসর্গসমূহ: এই ভাইরাসের সুপ্তিকাল এক থেকে ১২ দিন তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রে তা তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত থাকে। অনেক সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। সাধারণত ৭২-৯৭% ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয়। রোগটি সাধারণত আকস্মিক উচ্চমাত্রার জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা ও ফুসকুড়ি নিয়ে শুরু হয়। ফুসকুড়ি রোগের শুরুতেই দেখা দিতে পারে, তবে অনেক সময় রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হয়। এছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেটব্যথা, ফটোফোবিয়া বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা, কনজাংটিভাইটিস। বড়দের আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টে প্রদাহ হতে পারে।

সাম্প্রতিক এ ভাইরাস সংক্রান্ত মহামারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, চিকুনগুনিয়া জ্বরের ফলে ক্রনিক পর্যায়ে ছাড়াও তীব্র অসুস্থতাও হতে পারে। তীব্র অসুস্থতার পর্যায়কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে এর প্রথম পর্যায়ে ভাইরাস রক্তের মধ্যে প্রবেশ করে, পরে শেষ ধাপে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী পর্যায়ে পৌঁছায়, যে সময়টি ১০ দিন স্থায়ী হয়। এ পর্যায়ে ভাইরাস রক্তে শনাক্ত করা যায় না। সাধারণত এই রোগটি শুরু হয় হঠাৎ করেই শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে- যা সাত থেকে ১০ দিন পর্যন্তও স্থায়ী হয়। রক্তে ভাইরাসের প্রার্দুভাবের সঙ্গে জ্বর আসে এবং রক্তে ভাইরাসটির মাত্রা যতই তীব্র পর্যায়ে পৌঁছায় লক্ষণগুলোর সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভাইরাসটির রক্তে প্রবেশের পর যখন আইজিএম নামে একটি এন্টিবডি রক্তস্রোতের মধ্যে বাইরের থেকে প্রবিষ্ট রোগজীবাণু-প্রতিরোধক পদার্থ সৃষ্টি করে, তখন এর প্রভাব কমতে শুরু করে।

কারণ: চিকুনগুনিয়া ভাইরাস টোগাভাইরিডি পরিবারের আলফাভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি জঘঅ ভাইরাস। এটি সেমলিকি ফরেস্ট ভাইরাস কমপেস্নক্স এর সদস্য এবং রস রিভার ভাইরাস, ও'নিয়ং'নিয়ং ভাইরাস ও সেমলিকি ফরেস্ট ভাইরাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। যেহেতু এটা আর্থ্রোপড যেমন মশার মাধ্যমে ছড়ায় তাই একে আর্বোভাইরাসও বলে।

শনাক্তকরণ : রোগ সাধারণত রক্ত পরীক্ষা করে ভাইরাসের জঘঅ বা ভাইরাসের এন্টিবডির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। ভাইরাস পৃথকীকরণ, জঞ-চঈজ, সেরোলজির মাধ্যমে পরীক্ষাগারে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়।

প্রতিরোধ : এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ এবং যেসব এলাকায় এ রোগের ঘটনা সাধারণত ঘটেছে সেসব স্থান পরিত্যাগ করা। পানি আছে এমন স্থানে মশা কমানো এবং পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবস্থা ও মশারি ব্যবহারের মাধ্যমে এর প্রার্দুভাব কমানো যেতে পারে। ২০১৬ সাল নাগাদ, এই রোগের কোনো প্রতিষেধক বা চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। সাধারণত, জ্বর এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা কমানোর জন্য বিশ্রাম, তরল খাবার গ্রহণ এবং সাধারণ জ্বরের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী অনুমোদিত কোনো টিকা নেই। মশা নিয়ন্ত্রণ ও ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, লম্বা হাতলযুক্ত জামা ও ট্রাউজার পরে থাকা, বাড়ির আশপাশে পানি জমতে না দেয়া ইত্যাদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এদের ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। এডিস মশা স্থির পানিতে ডিম পাড়ে- তাই বালতি, ফুলের টব, ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার প্রভৃতি স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

২০০৮ সালের দিকে বাংলাদেশের রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রথম এ রোগের ভাইরাসটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে এটি লক্ষ্য করা গেলেও এরপর তেমনভাবে এ ভাইরাসের কথা শোনা যায়নি- তবে ২০১৭ সালের প্রথমদিকে সারাদেশে ভাইরাসটি উলেস্নখযোগ্য হারে লক্ষ্য করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104291 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1