শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানের যত কথা

নতুনধারা
  ০৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০
জন্ডিস

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক

জন্ডিস (Jaundice) যা ইক্টেরাস (icterus) নামেও পরিচিত, আসলে কোন রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে রক্তে বিলরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক, সেক্লর বা চোখের সাদা অংশ ও অন্যান্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব ১.২ সম/ফখ এর নিচে থাকে (২৫ ক্রসড়ষ/খ এর নিচে)। ৩ সম/ফখ বা ৫০ ক্রসড়ষ/খ এর বেশি হলে জন্ডিস হয়। লধঁহফরপব শব্দটি ফরাসি শব্দ লধঁহরংংব, থেকে এসেছে যার অর্থ হলুদাভ।

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করেÑ যা পরে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে পিত্তনালির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কোনো অসংগতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস। এই রোগে চামড়া পান্ডু বা ফ্যাকাশে দেখায় বলে একে আগে পান্ডুরোগ বলা হতো।

উপর্সগ: জন্ডিস হলে চোখ হলুদ হয়। তবে হেপাটাইটিস রোগে জন্ডিসের পাশাপাশি ক্ষুদামন্দা, অরুচি, বমিভাব, জ্বর জ্বর অনুভ‚তি কিংবা কাঁপানি দিয়ে জ্বর আসা, মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। এ সব উপসর্গ দেখা দিলে তাই অবশ্যই একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। চিকিৎসক শারীরিক লক্ষণ এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের তীব্রতা ও কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

কারণ: লিভারের রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ। আমরা যা কিছুই খাই না কেন, তা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়। লিভার নানা কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাসগুলো লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হয়Ñ যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই জন্ডিসের প্রধান কারণ। এই হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলো। তবে উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মধ্যপান জন্ডিসের একটি অন্যতম কারণ। এ ছাড়া অটোইমিউন লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণসহ আরও কিছু অপেক্ষাকৃত বিরল ধরনের লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারে। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ও অনেক সময় জন্ডিস হয়। তা ছাড়া থ্যালাসিমিয়া ও হিমোগেøাবিন ই-ডিজিজের মতো যে সমস্ত রোগে রক্ত ভেঙে যায় কিংবা পিত্তনালির পাথর বা টিউমার এবং লিভার বা অন্য কোথাও ক্যান্সার হলেও জন্ডিস হতে পারে। তাই জন্ডিস মানেই লিভারের রোগ এমনটি ভাবা ঠিক নয়।

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব কারণ জানা গেছে তা জেনে নিই।

১. লিভার প্রদাহ: লিভার প্রদাহে বিলিরুবিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলশ্রæতিতে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস সৃষ্টি হয়।

২. পিত্তনালির প্রদাহ: পিত্তনালির প্রদাহে বিলিরুবিন শোষণ ব্যাহত হয়। ফলে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৩. পিত্তনালির বøক: পিত্তনালিতে বøক হলে লিভার বিলিরুবিন সরাতে ব্যর্থ হয়। বেয়ে যায় জন্ডিসের সম্ভাবনা।

৪. গিলবার্ট’স সিনড্রোম: এই অবস্থায় এনজাইমের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে পিত্তের রেচনতন্ত্রে সমস্যা হয় এবং বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।

৫. ডুবিন-জনসন সিনড্রোম: এই বংশগত রোগে লিভার থেকে বিলিরুবিন শোষণ হতে বাধা দেয়। ফলশ্রæতিতে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

প্রতিরোধ: চিকিৎসা সাধারণত নির্ভর করে ঠিক কি কারণে জন্ডিস হলো তার ওপর। তবে জন্ডিস থেকে বেঁচে থাকতে আমাদের কিছু করণীয় আছে। জন্ডিস প্রতিরোধে সে সম্পর্ক জেনে নেওয়া দরকার।

১. হেপাটাইটিস-এ ও ই খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। আর বি, সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খেতে হবে। শরীরে রক্ত নেয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরি।

২. মদ্য পান থেকে বিরত থাকুন।

৩. কল-কারখানার রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।

৪. নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

৫. ব্যবহারকৃত ইনজেকশন কিংবা নাক-কান ফোঁড়ানোর সুই ব্যবহার করবেন না। যারা সেলুনে সেভ করেন, তাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে ব্যবহার করা বেøড বা ক্ষুর আবারো ব্যবহার করা না হয়।

৬. হেপাটাইটিস এ এবং বি হওয়ার আশঙ্কা মুক্ত থাকতে হেপাটাইটিস এ এবং বি এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।

জন্ডিস অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে