শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জিকা ভাইরাস

বিজ্ঞানের যত কথা

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
  ১০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

উগান্ডার জিকা নামের একটি গ্রামের নাম অনুসারে জিকা নাম রাখা হয়। স্থানীয় ভাষায় জিকা মানে বাড়ন্তত্ম। সেখানেই বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়।

জিকা ভাইরাস (তরশধ ঠরৎঁং) হচ্ছে ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবারের ফ্ল্যাভিভাইরাসের অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবারের অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটি আবরণযুক্ত ও আইকসাহেড্রাল আকৃতির একসূত্রক জঘঅ ভাইরাস। এটি প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় রেসাস ম্যাকাক বানরের দেহে পাওয়া যায়। পরে ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়াতে মানবদেহে প্রথমবারের মতো শনাক্ত করা হয়।

এই ভাইরাস মানব শরীরে প্রাথমিকভাবে জিকা জ্বর, জিকা অথবা জিকা রোগ করতে পারে। জিকা ভাইরাসটি ডেঙ্গু ভাইরাস, পীতজ্বর ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালাইটিস এবং ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করে তার সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরের কিছুটা মিল রয়েছে। বিশ্রাম নেওয়া হলো প্রধান চিকিৎসা; এখনো এর কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। যে নারীরা জিকা জ্বরে আক্রান্ত তাদের গর্ভের সন্তান মাইক্রোসেফালি বা ছোট আকৃতির মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এছাড়া বড়দের ক্ষেত্রে এটি গিলেন বারে সিনড্রোম করতে পারে।

সংক্রমণ: মূলত ২ ধরনের এডিস মশা দিয়ে এই ভাইরাস ছড়ায়। গ্রীষ্মমন্ডল ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলে অবফবং ধবমুঢ়ঃর মশার মাধ্যমে ছড়ায়; কারণ, শীতপ্রধান অঞ্চলে এরা টিকে থাকতে পারে না। অবফবং ধষনড়ঢ়রপঃঁং মশাও এই রোগ ছড়াতে পারে। এরা শীতপ্রধান অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এদের ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ালে ওই মশাও ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। জিকা ভাইরাস শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকাতে এরকম ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে।

শনাক্তকরণ: জিকা ভাইরাস পলিমারেজ চেইন রিয়াকশনের (চঈজ) মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় এবং রক্তের নমুনা থেকে ভাইরাস পৃথক করা যায়।

উপসর্গ: জিকা ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করে তার নাম জিকা জ্বর। এর সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বর,পীত জ্বর প্রভৃতির অনেক মিল আছে। এর উপসর্গগুলো হলো জ্বর, হাল্কা মাথাব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, কনজাংটিভাইটিস, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, শরীরে লালচে দাগ বা ফুস্ু্কড়ি ইত্যাদি। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে এই ভাইরাস কয়েকদিন থাকে তবে কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। এর সুপ্তিকাল কয়েকদিন হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। উপসর্গগুলো হালকা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্র হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না এবং ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে মৃতু্যর ঘটনা খুবই দুর্লভ।

জটিলতা : ২০১৩-২০১৪ সালে ফরাসি পলিনেশিয়া অঞ্চলে জিকা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় গিলেন ব্যারে সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে ব্রাজিলেও একই ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। এই বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয়েছে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হলে এটি অমরা ভেদ করে গর্ভের সন্তানকে আক্রান্ত করতে পারে। বাচ্চা মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মায়। ২০১৫ সালে ব্রাজিলেও এই ধরনের বাচ্চা জন্মের হার অনেক বেড়েছে। মাইক্রোসেফালি এমন একটি অবস্থা, যেখানে বাচ্চার মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ছোট হয়। বাচ্চার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গঠন ব্যাহত হবে।

চিকিৎসা: এই রোগের কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে যেন পানিশূন্যতা না হয়। ব্যথা ও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য ঘঝঅওউ যেমন আইবুপ্রফেন, ন্যাপ্রক্সেন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত বাচ্চাদের জ্বর ও ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন খাওয়ালে রাই সিনড্রোম (জবুব ঝুহফৎড়সব) হতে পারে এবং বাচ্চা মারা যেতে পারে।

প্রতিরোধ: জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম এক সপ্তাহ রোগীর রক্তে ভাইরাস থাকতে পারে। তাই এ সময় রোগীকে যেন মশা না কামড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে; কারণ, ওই ব্যক্তিকে কামড়ালে ভাইরাস মশার শরীরে প্রবেশ করবে এবং ঐ মশা কোন সুস্থ্য ব্যক্তিকে কামড়ালে সে ব্যক্তিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এডিস মশা সাধারণত বালতি, ফুলের টব, গাড়ির টায়ার প্রভৃতিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায়; তাই সেগুলোতে যেন পানি না জমে থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া পুরো শরীর ঢেকে থাকে এমন কাপড় পরিধান করতে হবে, মশারির মধ্যে ঘুমাতে হবে।

এখনো জিকা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এটি বানানোর চেষ্টা করছেন গবেষকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105325 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1