বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা দ্বিতীয় পত্র

এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি

শাদমান শাহিদ, প্রভাষক, আওলিয়ানগর এমএ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া য়
  ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০
রেশম পোকা

শব্দ

প্রশ্ন: ১। শব্দ কাকে বলে? উৎসগত বা উৎপত্তি বিচারে শব্দ কত প্রকার? আলোচনা কর।

উত্তর : অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। উৎসগত বিচারে বাংলা শব্দ পাঁচ প্রকার। যথা : তৎসম ২. অর্ধ-তৎসম ৩. তদ্ভব ৪. দেশি

৫. বিদেশি

১. তৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোনো প্রকার পরিবর্তন ছাড়া বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সেসব শব্দকে তৎসম শব্দ বলে। যেমন : সূর্য, চন্দ্র, কর্ণ, গৃহ ইত্যাদি।

২. অর্ধ-তৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে আংশিক পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সেসব শব্দকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। যেমন : চন্দ্র > চন্দ, কর্ণ > কন্ন, গৃহিণী> গিন্নি ইত্যাদি।

৩. তদ্ভব শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে, নতুন রূপে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সেসব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে। যেমন : চন্দ্র >চন্দ>চাঁদ, কর্ণ>কন্ন>কান, কৃষ্ণ>কেষ্ট>কালো ইত্যাদি।

৪. দেশি শব্দ : যেসব শব্দ পৈতৃকসূত্রে অনার্য সম্প্রদায় থেকে পাওয়া গেছে সেসব শব্দকে দেশি শব্দ বলে। যেমন : ঢাক, ডাব, কুলা, ঢেঁকি ইত্যাদি।

৫. বিদেশি শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত এবং খাঁটি বাংলা ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা থেকে গ্রহণ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে সেসব শব্দকে এককথায় বিদেশি শব্দ বলে। যেমন : আইন, আদালত, অফিস, রিকশা, লুঙ্গি ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ২। শব্দ কাকে বলে? অর্থগত বিচারে শব্দ কত প্রকার? আলোচনা কর।

উত্তর : অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। অর্থগত দিক থেকে বাংলা শব্দ তিন প্রকার।

যথা:

১. যৌগিক শব্দ

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ

৩. যোগরূঢ় শব্দ

১. যৌগিক শব্দ : যেসব শব্দের অর্থ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থ অনুযায়ী হয়, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন : চল্‌ + অন্ত = চলন্ত ( অর্থ : চলছে), রেশম + ই = রেশমি (যা রেশম থেকে জাত) ইত্যাদি।

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ : যেসব শব্দের অর্থ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থ অনুযায়ী না হয়ে অন্য কোনো অর্থের দিকে ইঙ্গিত করে, সেগুলোকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন : হাত + ই = হাতি (মূল অর্থ : যার হাত আছে, কিন্তু তা না বুঝিয়ে একটি প্রাণীকে বোঝাচ্ছে), তেমনি 'পাঞ্জাবি' শব্দ দিয়ে পাঞ্জাব প্রদেশের অধিবাসী না বুঝিয়ে একটি জামাবিশেষকে বোঝাচ্ছে।

৩. যোগরূঢ় শব্দ : যেসব সমাস নিষ্পন্ন শব্দ তার সমাস্যমান পদের কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে ভিন্ন কোনো অর্থের দিকে ইঙ্গিত করে, সেসব শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন : 'রাজপুত' শব্দ দিয়ে 'রাজার পুত্র' না বুঝিয়ে একটি 'জাতি বিশেষ'কে বোঝানো হচ্ছে। তদ্রূপ 'পঙ্কজ' শব্দ দিয়ে (পঙ্কে তথা কাদায় যা জন্মে, তা না বুঝিয়ে) পদ্ম ফুলকে বোঝাচ্ছে।

প্রশ্ন: ৩। শব্দ গঠন কী? শব্দ গঠনের উপায়গুলো লেখ।

উত্তর : উপসর্গ, প্রত্যয়, সন্ধি ও সমাস ইত্যাদির সাহায্যে নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে এক কথায় শব্দ গঠন বলে। গঠনের দিক থেকে শব্দ দুই প্রকার। যথা : মৌলিক শব্দ ও সাধিত শব্দ। মৌলিক শব্দগুলো স্বাভাবিকভাবেই গঠিত হয়ে থাকে। আর সাধিত শব্দগুলো নিম্নোক্ত উপায়ে গঠন করা যায়।

১। উপসর্র্গযোগে : মৌলিক শব্দ বা কৃদন্ত শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন : বি + হার = বিহার, আ + হার = আহার, উপ + হার = উপহার ইত্যাদি।

২। প্রত্যয়যোগে : মূল শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয়যোগেও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন : মনু + অ = মানব, ভাঙ্‌ + অন = ভাঙন, পাঠ্‌ + অক = পাঠক ইত্যাদি।

৩। সন্ধির সাহায্যে : সন্ধির মাধ্যমেও নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন : হিম + আলয় = হিমালয়, নৈ + ইক = নাবিক ইত্যাদি।

৪। সমাসের সাহায্যে : সমাসের সাহায্যেও নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন : রাজার নীতি = রাজনীতি, জায়া ও পতি = দম্পতি ইত্যাদি।

৫। পদ পরিবর্তনের মাধ্যমে : পদ পরিবর্তনের মাধ্যমেও নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন : মানব (বিশেষ্য)- মানবিক (বিশেষণ), দিন (বিশেষ্য)- দৈনিক (বিশেষণ) ইত্যাদি।

৬। শব্দ দ্বিরুক্তি, পদ দ্বিরুক্তি, ধনাত্মক শব্দ, বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন, বাক্য সংকোচন ইত্যাদির মাধ্যমেও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন : রাশি রাশি, পদে পদে, ঝন্‌ ঝনা ঝন্‌ ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ৪। 'উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে' উক্তিটি আলোচনা কর।

উত্তর : অর্থহীন অথচ অর্থদ্যোতক যেসব অব্যয় নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দের আগে বসে শব্দগুলোর অর্থ সংকোচন, প্রসারণ বা অন্য কোনো পরিবর্তন সাধন করে থাকে, তাদের বাংলায় উপসর্গ বলে। যেমন : আগমন, পরিদর্শন, উপবন ইত্যাদি।

উপসর্গের কোন অর্থবাচকতা নেই, অর্থদ্যোতকতা আছে মাত্র। এগুলো নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে যদি স্বাধীনভাবে থাকে, তাহলে এদের কোনো অর্থ হয় না। আর যদি নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দ কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত হয়, তবেই এগুলো আশ্রিত শব্দকে অবলম্বন করে বিশেষ বিশেষ অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন : বি + হার = বিহার, আ + হার = আহার, উপ + হার = উপহার ইত্যাদি।

তবে বাংলায় 'অতি' ও 'প্রতি' এ দুটো উপসর্গ কখনো কখনো স্বাধীনভাবেও প্রয়োগ হতে পারে। যেমন : অতি লোভে তাঁতি নষ্ট, মাথাপ্রতি এক টাকা করে দাও ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ৫। নিচের উপসর্গগুলো দিয়ে শব্দ গঠন করে, তা বাক্যে প্রয়োগ দেখাও।

অ, আ, প্রতি, প্র, অতি, অনু, বি, পরি, উপ, সু, নি ইত্যাদি।

উত্তর :

অ + চল = অচল, গাড়িটি অচল

আ + মরণ = আমরণ, আমরণ মানুষের সেবা করে যাব।

প্রতি + দিন = প্রতিদিন, প্রতিদিন আমি প্রার্থনা করি।

প্র + নাম = প্রণাম, গুরুজনকে প্রণাম কর।

অতি + রিক্ত = অতিরিক্ত, অতিরিক্ত কোনো কাজ ভালো নয়।

অনু + রোধ = অনুরোধ, সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।

বি + হার = বিহার, রাজা গেলেন বিহারে।

পরি + ভ্রমণ = পরিভ্রমণ, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করা উচিত।

উপ + গ্রহ = উপগ্রহ, চাঁদ একটি উপগ্রহ।

সু + পথ = সুপথ, সত্য বল সুপথে চল।

নি + খুঁত = নিখুঁত, কাজটি একদম নিখুঁত।

(এভাবে প্রতিটি উপসর্গ দিয়ে কাজ করতে পার।)

প্রশ্ন: ৬। নিঃ অথবা দুঃ উপসর্গের সঙ্গে সন্ধিতে বিসর্গ অক্ষুণ্ন রেখে পাঁচটি শব্দ তৈরি কর।

উত্তর : দুঃ উপসর্গের সঙ্গে সন্ধিতে বিসর্গ অক্ষুণ্ন রয়েছে এমন পাঁচটি শব্দ হচ্ছে-

দুঃ + শাসন = দুঃশাসন, দুঃ + সাধ্য = দুঃসাধ্য, দুঃ + স্বপ্ন = দুঃস্বপ্ন, দুঃ + সংবাদ = দুঃসংবাদ, দুঃ + সাহস = দুঃসাহস

নিঃ উপসর্গের সঙ্গে সন্ধিতে বিসর্গ অক্ষুণ্ন রয়েছে এমন পাঁচটি শব্দ হচ্ছে-

নিঃ + শেষ = নিঃশেষ, নিঃ + স্বার্থ = নিঃস্বার্থ, নিঃ + শর্ত = নিঃশর্ত, নিঃ + সঙ্গ = নিঃসঙ্গ, নিঃ + শ্বাস = নিঃশ্বাস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105859 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1