বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানের যত কথা

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
  ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০
থাইরয়েড

থাইরয়েড গ্রন্থি বা থাইরয়েড হলো দুইটি লোব দ্বারা গঠিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যার অবস্থান গ্রীবাতে। পুরুষের এডাম'স এপলের ঠিক নিচে এর অবস্থান। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলো মেটাবলিক রেট ও প্রোটিন সিন্থেসিসকে প্রভাবিত করে। থাইরয়েড হরমোনের মধ্যে ট্রাইডোথাইরোনাইন (ঞ৩) ও থাইরক্সিন (ঞ৪) আয়োডিন ও টাইরোসিন দ্বারা গঠিত হয়। থাইরয়েড ক্যালসিটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন তৈরি করে- যা ক্যালসিয়াম হোমিওস্ট্যাসিসে অবদান রাখে।

থাইরয়েড কি?

থাইরয়েড হলো আমাদের একটি গ্রন্থি- যা আমাদের গলার সামনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে কিছু প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন আমাদের বিপাকসহ আরো বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন তৈরির জন্য এই গ্রন্থিটির প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়োডিনের দরকার হয়। ওই হরমোন আমাদের বিপাক ক্রিয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড গ্রন্থি সাধারণত দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে।

একটি হলো ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন (ঞ৩) এবং অন্যটি থাইরক্সিন (ঞ৪)।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্মের সময় এই গ্রন্থি ঠিকভাবে তৈরি না হলে কিংবা প্রয়োজনমতো হরমোন তৈরি করতে না পারলে বাচ্চাদের শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

আমাদের শরীরে যতটুকু হরমোন প্রয়োজন তার চেয়ে কম কিংবা বেশি পরিমাণে এই হরমোন তৈরি হলে তখন নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে এই হরমোন তৈরি হলে হাইপোথাইরয়ডিজম হতে পারে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে এই হরমোন উৎপন্ন হলে হাইপারথাইরয়ডিজম হতে পারে। উভয়ই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

এছাড়াও ওই গ্রন্থিতে আরো বিভিন্ন রকমের রোগ হতে পারে। সাধারণত বেশি হয় এমন কিছু রোগ নিয়ে আলোচনা করা যাক- হাইপোথাইরয়ডিজম, হাইপারথাইরয়ডিজম, গয়েটার, নডিউল, থাইরয়েড ক্যান্সার ও গ্রেভস ডিজিজ।

\হলক্ষণ:

\হ১. ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা

\হ২. কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা।

\হ৩. শুষ্ক ত্বক।

\হ৪. কোষ্ঠকাঠিন্য।

\হ৫. অল্পতেই শীত শীত লাগবে।

\হ৬. পেশি এবং বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হবে।

\হ৭. বিষণ্নতা থাকবে।

\হ৮. পালস রেট কম থাকতে পারে স্বাভাবিকের তুলনায়।

সমস্যার কারণ:

১.খাদ্যে আয়োডিনের অভাব থাকলে।

২. কোন ধরনের অটো ইমিউনি ডিসঅর্ডার হলে।

৩. থাইরয়েড অপারেশন হলে।

৪.রেডিয়েশন থেরাপি নিলে।

৫.কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন- লিথিয়াম, অ্যামিওডারোন।

৬. জন্মের সময় থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি না হওয়া।

৭. কিছু খাদ্য উপাদান বেশি পরিমাণে খাওয়া যেমন: বাঁধাকপি, ব্রকলি,পুঁইশাক, মিষ্টি আলু, মটরশুটি, কাসাভা, পিচফল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।

রোগ শনাক্তকরণ: থাইরয়েডের বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণে সাধারণত নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয় :

রক্ত পরীক্ষা : রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা যায়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত নিচের টেস্টগুলো করা হয় :

ঞযুৎড়রফ ংঃরসঁষধঃরহম যড়ৎসড়হব: এই পরীক্ষায় রক্তে ঞঝঐ-এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। রক্তে ঞঝঐ-এর মাত্রা কম হলে বুঝতে হবে হাইপারথাইরয়ডিজমে রোগী আক্রান্ত। আর বেশি হলে হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত।

ঞযুৎড়ীরহব যড়ৎসড়হব (ঞ৪): রক্তে উচ্চমাত্রার ঞ৪ এর উপস্থিতির অর্থ হাইপারথাইরয়ডিজম আর নিম্নমাত্রার ঞ৪ -এর উপস্থিতির অর্থ হাইপোরথাইরয়ডিজম।

ঞৎর-রড়ফড়ঃযুৎড়হরহব যড়ৎসড়হব(ঞ৩): রক্তে উচ্চমাত্রার ঞ৩-এর উপস্থিতির অর্থ হাইপারথাইরয়ডিজম আর নিম্নমাত্রার ঞ৩-এর উপস্থিতির অর্থ হাইপোথাইরয়ডিজম।

ঞঝঐ ৎবপবঢ়ঃড়ৎ ধহঃরনড়ফু (ঞঝও): রক্তে ঞঝও-এর উপস্থিতির অর্থ রোগী গ্রেভস রোগে আক্রান্ত। এই রোগে চোখের চারপাশ ফুলে উঠে।

অহঃর-ঃযুৎড়রফ ধহঃর-নড়ফু: রক্তে ধহঃরঃযুৎড়রফ ধহঃরনড়ফু-এর উপস্থিতির অর্থ রোগী ঐধংযরসড়ঃড়'ং এবং গ্রেভস রোগে আক্রান্ত। ঐধংযরসড়ঃড়'ং এমন এক রোগ যেখানে পুরো থাইরয়েড গ্রন্থিটিই ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়ে যায়।

এছাড়া আরো কিছু পরীক্ষা যেমন নিউক্লিয়ার থাইরয়েড স্ক্যান, থাইরয়েড আল্ট্রাসাউন্ড, কম্পিউটারাইজড এক্সিয়াল টোমোগ্রাফি স্ক্যান (ঈড়সঢ়ঁঃবৎরুবফ ধীরধষ :ড়সড়মৎধঢ়যু ংপধহ)-এর মতো কিছু পরীক্ষার সাহায্যে ও থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করা যায়।

সার্জারি : হাইপারথাইরয়ডিজম, গয়েটার এবং নডিউল কিংবা টিউমার হলে সেটির ক্ষেত্রে রোগের মাত্রা অনুযায়ী থাইরয়েড গ্রন্থির কিছু অংশ কিংবা পুরোটা কেটে ফেলতে হতে পারে অপারেশনের মাধ্যমে।

তবে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই গ্রন্থির অর্ধেক কেটে ফেললেও রোগী তার বাকি অর্ধেক দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তবে যাদের পুরো গ্রন্থিটি কেটে ফেলেতে হয় তাদের বাকি জীবন আলাদাভাবে বাহির থেকে প্রয়োজনীয় হরমোন গ্রহণ করতে হয়।

এছাড়া বিভিন্ন নিউক্লিয়ার মেডিসিন, তেজস্ক্রিয় আয়োডিন ব্যবহার করে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা নির্ধারণ করে চিকিৎসকরা পরবর্তী পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

সুতরাং কোনো লক্ষণ দেখলে সেটাকে অবহেলা না করে দ্রম্নত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর সুস্থ থাকতে বছরে অন্তত একবার রক্ত পরীক্ষা করে থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থা চেক করতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105860 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1