প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো
ত-প্রত্যয়ান্ত অব্যয় (সংস্কৃত তস্)
ত-প্রত্যয়ান্ত অব্যয় বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন : ধর্মত বলছি। দুর্ভাগ্যবশত পরীক্ষায় ফেল করেছি। অন্তত তোমার যাওয়া উচিত। জ্ঞানত মিথ্যা বলিনি।
একই অব্যয় শব্দের বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার
১. আর
পুনরাবৃত্তির অর্থে : ও দিকে আর যাব না।
নির্দেশ অর্থে : বল, আর কী চাও?
নিরাশায়: সে দিন কি আর আসবে?
বাক্যালঙ্কারে: আর কি বাজবে বাঁশি?
২. ও
সংযোগ অর্থে : করিম ও রহিম দুই ভাই।
সম্ভাবনায়: আজ বৃষ্টি হতেও পারে।
তুলনায়: ওকে বলা যা, না বলাও তা।
স্বীকৃতি জ্ঞাপনে : খেতে যাবে? গেলেও হয়।
হতাশা জ্ঞাপনে: এত চেষ্টাতেও হলো না।
৩. কি/কী
জিজ্ঞাসায়: তুমি কি বাড়ি যাচ্ছ?
বিরক্তি প্রকাশে: কী বিপদ, লোকটা যে পিছু ছাড়ে না।
সাকুল্য অর্থে : কি আমির কি ফকির, একদিন সকলকেই যেতে হবে।
বিড়ম্বনা প্রকাশে: তোমাকে নিয়ে কী মুশকিলেই না পড়লাম।
৪. না
নিষেধ অর্থে : এখন যেও না।
বিকল্প প্রকাশে : তিনি যাবেন, না হয় আমি যাব।
আদর প্রকাশে বা অনুরোধে: আর একটি মিষ্টি খাও না খোকা। আর একটা গান গাও না।
সম্ভাবনায়: তিনি নাকি ঢাকায় যাবেন।
বিস্ময়ে: কী করেই না দিন কাটাচ্ছ।
তুলনায়: ছেলে তো না, যেন একটা হিটলার।
৫. যেন
উপমায় : মুখ যেন পদ্মফুল।
প্রার্থনায় : খোদা যেন তোমার মঙ্গল করেন।
তুলনায় : ইস্, ঠান্ডা, যেন বরফ।
অনুমানে : লোকটা যেন আমার পরিচিত মনে হলো।
সতর্ককরণে : সাবধানে চল, যেন পা পিছলে না পড়।
ব্যঙ্গ প্রকাশে : ছেলে তো নয় যেন ননীর পুতুল।
ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা, প্রকরণ ও গঠন
১. কবির বই পড়ছে।
২. তোমরা আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। 'পড়ছে' ও 'দেবে' পদ দুটো দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝাচ্ছে বলে এরা ক্রিয়াপদ। যে পদের দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোনো পুরুষ কর্তৃক নির্দিষ্ট কালে কোনো কার্যের সংঘটন বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। ওপরের প্রথম উদাহরণে নাম পুরুষ 'কবির' কর্তৃক বর্তমান কালে 'পড়া' কার্যের সংঘটন প্রকাশ করছে। দ্বিতীয় উদাহরণে মধ্যম পুরুষ, 'তোমরা' ভবিষ্যৎ ক্রিয়া সংঘটনের সম্ভাবনা প্রকাশ করছে।
বিবিধ অর্থে ক্রিয়াপদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন :
১. ভাবপ্রকাশ ক্রিয়া : ভাবপ্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়াপদ ২ প্রকার। যেমন : সমাপিকা ক্রিয়া, অসমাপিকা ক্রিয়া।
২. বিবিধ : অন্যান্যভাবে ক্রিয়াপদ ৬ প্রকার। যেমন : অকর্মক, সকর্মক দ্বিকর্মক, প্রযোজক ক্রিয়া, যৌগিক ক্রিয়া, মিশ্র ক্রিয়া।
ক্রিয়াপদের গঠন
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। যেমন : 'পড়ছে'-পড় 'ধাতু'+'ছে' বিভক্তি।
সকল ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা
১. ক্রিয়া : যে শব্দ দিয়ে কাজ বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে।
২. অনুক্ত ক্রিয়া : যে বাক্যে ক্রিয়া উহ্য থাকে তাকে অনুক্ত ক্রিয়া বলে।
৩. সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া বাক্যকে সমাপ্ত করে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
৪. অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া বাক্যকে সমাপ্ত করতে পারে না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
৫. সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্মপদ থাকে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।
৬. অকর্মক ক্রিয়া : যে বাক্যে কোনো কর্মপদ থাকে না তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।
৭. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।
৮. সমধাতুজ/ধাত্বর্থক : যে বাক্যে ক্রিয়া ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে তৈরি তাকে সমধাতুজ/ধাত্বর্থক কর্ম বলে।
৯. প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া প্রযোজনা করে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।
১০. নামধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে আ-প্রত্যয়যোগে গঠিত ধাতুকে নামধাতু বলে।
১১. যৌগিক ক্রিয়া: সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে গঠিত বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশক ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে।
১২. মিশ্র ক্রিয়া : বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর, হ, দে, পা, যা, কা, গা, ছাড়, ধর, মার ইত্যাদি ধাতু দিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে মিশ্র ক্রিয়া বলে।