শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় শোবিজে বেকারত্ব বাড়ছে

মাসুদুর রহমান
  ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০
নাটকের দৃশ্য ধারণ করছেন এক চিত্রগ্রাহক

করোনার প্রভাব পড়েছে শোবিজ অঙ্গনেও। জবুথবু হয়ে পড়েছে নাটক-সিনেমা ও সংগীতাঙ্গন। দীর্ঘদিন স্থবিরতার পর সাবধানতা অবলম্বন করে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হলেও গতি ফেরেনি বিনোদনের কোনো স্থানে। এখনো গৃহবন্দি রয়েছেন অনেকে। হাতে নেই কাজ। কাজের অভাবে বেকার হয়ে পড়ছেন শোবিজের লোক। জীবনের তাগিদে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন অন্য পথ। গত মাস থেকে নাটকের শুটিং শুরু হলেও কাজে ফেরেনি অনেকে। একটি শুটিং ইউনিট মানে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা। কিন্তু এ দুর্যোগ সময়ে ঝুঁকি কমাতে নির্মাতারা শুটিং করছেন অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে। অনেক নির্মাতা প্রয়োজনের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ শিল্পী এবং কলাকুশলী নিয়ে কাজ করছেন। এতে নাট্যাঙ্গনে বেকারত্ব বাড়ছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, কেউ একজন ক্যামেরা সহকারী নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সেটে নেই মেকআপম্যান বা ট্রলিচালক, প্রয়োজন না হলে প্রধান চরিত্রের বাইরে তেমন কোনো শিল্পীকে ডাকাও হচ্ছে না সেখানে। কমে যাচ্ছে পরিচালকের সহকারীর সংখ্যাও। একটি নাটকে যেখানে ৩০ জনের বেশি কলাকুশলী নিয়ে কাজ হতো, সেই সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৯ থেকে ১০ জনে।

করোনার কারণে গল্পেও আসছে পরিবর্তন। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অল্প শিল্পী নিয়ে কীভাবে শুটিং করা যায়, সেই চেষ্টা করছেন সবাই। এতে দুই থেকে তিনজন অভিনয়শিল্পী দিয়েই নাটক তৈরি করছেন নির্মাতারা। ছাঁটাই হচ্ছে পার্শ্ব চরিত্র। পারতপক্ষে বয়স্ক শিল্পীদের রাখা হচ্ছে না। ফেলে দেওয়া হচ্ছে কম্বাইন্ড দৃশ্য। অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম বলেন, 'শিল্পীদের বেকারত্ব নিয়ে চিন্তিত। একদিকে নাটক কম তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সবাই ছোট টিম নিয়ে কাজ করছেন। অনেক শিল্পী বেকার হয়ে পড়েছেন। যারা কাজ পাচ্ছেন না, তারা একদমই পাবেন না। নির্দিষ্ট কিছু শিল্পীর ওপর চাপ পড়বে। কিন্তু এটা করা নির্মাতাদের উচিত হবে না।'

ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, 'আমি নিজেও কম্প্রোমাইজ করে শুটিং করি না। শিল্পী, কলাকুশলী, নাট্যকারদের মতো নির্মাতাদেরও কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে।' বেকারত্বের ঝুঁকিতে আছেন মেকআপ শিল্পীরা। অনেক তারকা নিজেই বাসা থেকে মেকআপ নিয়ে আসছেন। মেকআপম্যান সমিতির সভাপতি বাবুল জানান, 'ইউনিটে মেকআপম্যান, মেকআপ সহকারী রাখা হচ্ছে না। আমাদের দুর্ভাগ্য।' প্রডাকশনেও থাকছে কম লোক।

পরিস্থিতি নিয়ে নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, 'বেকারত্ব নিয়ে আমরা মহাসংকটে পড়ে গেলাম। এখন সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কোনো কুলকিনারা দেখতে পাচ্ছি না।' সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, করোনায় গল্প বলার ধরন বদলাতে হবে। কেবল ঘরকেন্দ্রিক গল্পের নাটক থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। বেকারত্বের পাশাপাশি এও এক নতুন কাজে ফেরার সাহস করছেন না পরিচালকরা। বন্ধ রয়েছে সিনেমার কাজ। ঈদে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বছর শুরুতে কয়েকটি সিনেমা কাজ শুরু করলে করোনায় বন্ধ হয়ে যায় ছবিগুলোর কাজ। করোনায় আটকে থাকা ছবিগুলোর কাজ ফের কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ছবি শূন্যতায় পার হয়েছে রোজার ঈদ। একই চিত্র দেখা যাবে কোরবানির ঈদেও। প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সিনেমা হল। এসব প্রেক্ষাগৃহে কাজ করতেন হাজার হাজার কর্মী। তাদের অনেকে অবৈতনিক ছুটিতে, কেউ কেউ চাকরিও হারিয়েছেন। টিকে থাকা হলকর্মীরা চাকরি হারানোর আতঙ্কে আছেন। করোনায় বেকারত্বের হিংস্র থাবা পড়েছে সংগীতাঙ্গনে।

দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চের বাইরে রয়েছেন কনসার্ট শিল্পীরা। টিভি চ্যানেল থেকেও আগের মতো ডাক পড়ছেনা। অডিও কোম্পানিগুলো গান প্রকাশ বন্ধ রেখেছে কিংবা কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে নতুন গান থেকে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে এসেছে অনেকটাই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির শিল্পীরা একেবারেই বেকার হয়ে পড়েছেন। তবে ঘরে বসে অনেকেই গানে সচল থাকার চেষ্টা করলেও মারাত্মক বিপদে পেড়েছেন মিউজিশিয়ানরা। প্রোগ্রাম না থাকায় জীবিকার তাগিদে অনেকেই ভিন্ন পথ দেখছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মিউজিশিয়ান আম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। তার মতো কেউ কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105659 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1