প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি...
সত্যিই আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। গুজব মনে হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো ব্যক্তিগত কাজ করেছি। এরপর পৌনে ১০টার দিকে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকতেই জানতে পেলাম আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবর। প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। ফেসবুকে তো অনেক সময় ভুয়া খবরও প্রকাশ পায়, কেউ হয়তো দুষ্টমি করছে এমনটা ভেবে বিষয়টা পাত্তা দেইনি। কিন্তু ফেসবুকে বারবার এই খবরটা দেখতে পেয়ে মনটা স্তব্ধ হয়ে গেল। পরে নিশ্চিত খবর পেয়ে অবাক হলাম। সকালে এই শোকের খবরটি আমাকে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ করে দিল। এখনো কেমন যেন বিশ্বাস হতে চাইছে না আইয়ুব বাচ্চু বেঁচে নেই।
মঞ্চে উঠলেই বদলে যেত পরিবেশ...
বলতে দ্বিধা নেই, তরুণ প্রজন্মের অত্যন্ত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। আমরা দেখেছি বাচ্চু মঞ্চে উঠলেই অন্যরকম এক উত্তেজনা বিরাজ করত। সব দশর্ক যেন উল্লাস-উচ্ছ¡াসে মেতে উঠতেন। প্রিয় শিল্পী গান আর সুরে টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উন্মাতাল হয়ে যেত দশর্ক-শ্রোতা। তার অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে। বাচ্চু মারা যাওয়ার পর সকাল থেকে সেই সব গানগুলো শুনছি আর স্মৃতি হাতড়াচ্ছি।
তিনি তো কেবল শিল্পীই ছিলেন না...
প্রত্যেকের মৃত্যু অবধারিত। সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে এটা ঠিক, তবে কিছু মানুষের চলে যাওয়াটা সত্যিই কষ্টের। এই মুহ‚তের্ আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়াটা অত্যন্ত কষ্টের। তিনি কেবল একজন সাধারণ শিল্পীই ছিলেন না। গুণী, কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। দেশীয় সংগীতাঙ্গনে তার অবদান অনেক। আধুনিক সংগীতাঙ্গনে তার অবদান ভোলার নয়। দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করেছেন। তিনি গাইতেন, লিখতেন আবার সুরও করতেন। তার প্রায় প্রতিটি গানই জনপ্রিয়। বাংলার গানকে জনপ্রিয় করে তোলতে তার যথেষ্ট অবদান ছিল।
সেই থেকে বন্ধত্ব আমাদের...
আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় আশির দশকে। ঢাকার শেরাটন হোটেলে একটি কনসাটর্ ছিল। সেখানে আমরা দুজনই গান গেয়েছিলাম। তখন থেকেই অমাদের পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব। দেশে, দেশের বাইরে বহু কনসাটের্ দুজনে গেয়েছি। নব্বই দশকে দুজনে প্রথম মিক্সড অ্যালবামে গান করি। এরপর তো বহু মিক্সড অ্যালবামে বাচ্চুর সঙ্গে গান করেছি। গানের বাইরেও আমরা সুযোগ পেলে আড্ডা দিতাম। অনেক মজা করতাম। বাচ্চুর সঙ্গে আর কখনো কোনো কনসাটের্ গাওয়া হবে না, কোথাও আড্ডাও জমবে না । স্মৃতি হয়েই থাকবে সংগীতের বাচ্চু।
খুব সাধারণ ছিলেন বাচ্চু...
বেঁচে থাকতে আমরা অনেকের দোষ-ত্রæটি নিয়ে সমালোচনা করি। কিন্তু মরে গেলে তখন আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। আইয়ুব বাচ্চু শুধু একজন সঙ্গীত শিল্পীই নন, সে একজন ভালোমনের মানুষ ছিলেন। অতি সাধারণ ছিলেন। তার সঙ্গে যাদের উঠাবসা ছিল তারাই বলতে পারবেন বাচ্চু কেমন লোক ছিলেন। সে খুব সহজেই একজনকে আপন করে নিতে পারতেন। গান দিয়ে যেমন শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিলেন, ব্যবহারেও তেমনটি ছিলেন। সহজ-সুলভ আচরণ ছিল তার।
বাচ্চু বেঁচে থাকুক যুগ যুগ...
তার অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আমার মনে হয় না এই শ্যূনতা পূরণ হবে। তবে নিজের জনপ্রিয় গান দিয়ে বাচ্চু বেঁচে থাকবেন ভক্তদের মাঝে। বাচ্চু বেঁচে থাকুক যুগ যুগ।