ছোটবেলায় অভিনয় করে শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেও গান গেয়েই তার পরিচয়। এখন গানের মানুষ হিসেবেই সবাই তাকে চেনেন। শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও রয়েছে তার বেশ পরিচিতি। যদিও ছোটবেলায় অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। বলা হচ্ছে, দেশের সুখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীরের কথা। দেখতে দেখতে ক্যারিয়ারের ৩৫ বছর স্পর্শ করলেন এ তারকা। এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিতও তিনি। বলেন, ৩৫টি বছর চারটিখানি কথা নয়, শুধু শ্রোতা ও ভক্তদের ভালোবাসার কারণেই এত বড় লম্বা পথ পাড়ি দিতে পেরেছি। এ জন্য আমার সব ভক্ত-অনুরাগীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের ভালোবাসাতেই আমি আঁখি আলমগীর হয়েছি। এভাবেই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সুরের মুগ্ধতা ছড়িয়ে ভক্তদের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই।'
আঁখি আলমগীর ১৯৭৪ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলমগীর একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা এবং মা খোশনূর আলমগীর একজন গীতিকার। আঁখি আলমগীর ১৯৮৪ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত 'ভাত দে' চলচ্চিত্রে কিশোরী জরি চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। অভিনয়ে জগতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাবার ইচ্ছাতেই আর অভিনয় করা হয়নি। আঁখি বলেন, 'বাবা তখন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক। সারাদিন শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বাড়ি ফিরতেন অনেক রাত করে। বাসায় ফিরেই আমাদের খোঁজখবর নিতেন। তিনি চলচ্চিত্রের অভিনেতা হলেও চাননি আমি অভিনয় করি। তার ইচ্ছাতেই আমার অভিনয় ছেড়ে গান করা। যদিও ছোটবেলা থেকেই আমার গানের প্রতি আগ্রহ ছিল।'
আঁখি আলমগীর প্রথম চলচ্চিত্রে পেস্ন-ব্যাক করেন 'বিদ্রোহী বধূ' (১৯৯৪ সাল) চলচ্চিত্রে। তখন তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। ১৯৯৬ সালে আঁখি আলমগীর আলাউদ্দিন আলীর সুরে 'সত্যের মৃতু্য নেই' চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন। এ পর্যন্ত তার ১৯টি গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে তার প্রথম গানের অ্যালবাম 'প্রথম কলি' প্রকাশিত হয়। পরের বছর তার সাড়া জাগানো 'বিষের কাঁটা' অ্যালবামটিও প্রকাশিত হয়। ওই অ্যালবামের 'বন্ধু আমার রসিয়া' ও 'পিরীতি বিষের কাঁটা' গান দুটি শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০ বছর পর তিনি বাংলা ঢোলের ব্যানারে আলাউদ্দিন আলীর সুরে 'বৈশাখী মেলা' গানে কণ্ঠ দেন। তার সাথে এ গানে আরও ৩২ জন নৃত্যশিল্পী অংশ নেন। ভিডিওটি পরিচালনা করেন আশিকুর রহমান। এছাড়া তিনি কবির বকুল রচিত এবং শওকত আলী ইমন সুরকৃত 'ফালগুনে কৃষ্ণচূড়া' গানে কণ্ঠ দেন। তিনি তার বাবা আলমগীর পরিচালিত 'একটি সিনেমার গল্প' চলচ্চিত্রের জন্য গাজী মাজহারুল আনোয়ার রচিত 'গল্প কথার ওই কল্পলোক জানি' শিরোনামের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটি সুর করেছেন রুনা লায়লা। এটি রুনার প্রথম সুরারোপিত গান। এ গানে কণ্ঠ দিয়ে ২০১৮ সালের সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন আঁখি। গানের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার অনুভূতি নিয়ে তিনি বলেন, 'এমন একটি প্রাপ্তি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এমন পুরস্কার গানের প্রতি আমার দায়িত্ববোধকে আরও বাড়িয়ে দিল। আগামী ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার অপেক্ষায় আছি আমি। সত্যি বলতে কী, ওই মুহূর্তের তর সইছে না।'
শুরুতে ক্লাসিক্যাল শিখলেও দর্শকপ্রিয়তার কথা ভেবেই জনপ্রিয় ধারার গান করেন এ কণ্ঠশিল্পী। এখন বিভিন্ন স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। দেশে ও দেশের বাইরে নিয়মিত গান করছেন তিনি। এখনকার গান নিয়ে তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে কী, বাংলা গানের মান নিয়ে কথা বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। আমি শুধু জানি, একটা গানকে কীভাবে মমতা দিয়ে গাইতে হয়। এর বেশি কিছু নয়। ভালো গান, মন্দ গান বিচার করার দায়িত্ব শ্রোতাদের।'