শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার প্রকোপ প্রতিদিন লোকসান কোটি টাকা!

বিনোদন রিপোর্ট
  ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
'বিশ্ব সুন্দরী' ছবির একটি দৃশ্য। ছবিটি গত সপ্তাহে মুক্তির কথা ছিল

বিশ্বজুড়ে গ্রাস করা করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে স্থবির চলচ্চিত্র, নাটক ও অডিওবাজার। শুটিং, ডাবিং, এডিটিং এবং কনসার্ট। পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীও স্থগিত। করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সতর্ককতার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশীয় বিনোদনের সবচেয়ে বড় দুটি মাধ্যম। সব ধরনের শুটিং বন্ধ থাকায় কার্যত বিপাকে পড়েছে চলচ্চিত্র ও নাটক-সংশ্লিষ্টরা। ফলে দুটি মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিদিন কমপেক্ষ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।

গত ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ। হল বন্ধ থাকায় চলচ্চিত্রও প্রদর্শন করা হচ্ছে না। হল মালিকদেরও আয়-রোজগার বন্ধ। তবে হল বন্ধ রাখা হলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে হল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। তাতে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেশি দিন এ রকম চললে হলমালিকদের লোকসান বহন করা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাবমতে সিনেপেস্নক্স, বস্নকবাস্টার সিনেমাস বাদে বর্তমানে নিয়মিত ছবি প্রদর্শিত হয়, এমন সিনেমা হলের সংখ্যা প্রায় ৮০। এসব হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা হাজারখানেক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিদু্যৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হচ্ছে হলমালিকদের। এতে প্রতিদিনই লোকসান গুনছেন তারা। সব মিলিয়ে ছোট-বড় হল থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।

এদিকে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বলাকা সিনেমা হলে দৈনিক ১৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেসে ১০ হাজার টাকা এবং যশোরের মণিহার সিনেমা হলে দৈনিক ১৬ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে হল মালিকদের। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হলমালিক লোক ছাঁটাইয়ের চিন্তাও করছেন। ফলে সংকট আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় প্রদর্শক সিমিতি সরকারকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

একই চিত্র নাট্যপাড়ায়। প্রায় ১৬ দিন ধরে নাটকের শুটিং বন্ধ আছে। সাধারণত এ সময়টাকে নাটকের পিক আওয়ার বা মৌসুম বলা হয়। ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে এ সময় পাঁচ শতাধিক নাটক নির্মাণ হয়। কখনো কখনো সংখ্যা হাজার ছুঁয়ে ফেলে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় এ মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না। চিত্রনাট্য ও অভিনয়শিল্পীর শিডিউল নেওয়া থাকলেও মাঠে গড়াচ্ছে না শুটিং। ফলে নাট্যাঙ্গন সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। শিল্পী থেকে শুরু করে নির্মাতা, প্রযোজক, ক্যামেরার পেছনের মানুষগুলোকে বেকার করে দিয়েছে এই করোনা। ছোট পর্দাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সময় নির্মাতা, শিল্পী, প্রযোজকসহ কলাকুশলীদের কাজের ব্যস্ততায় দম ফেলার সময় থাকে না। প্রতি মাসে ছোট পর্দায় ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হলে এই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যায়। তাই এই মুহূর্তে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টির বেশি একক, ধারাবাহিক নাটকের শুটিং হওয়ার কথা। কিন্তু সেগুলো বন্ধ আছে। ফলে প্রতিদিন দিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখের বেশি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।'

অনেকেই আবার এ পরিস্থিতিতে ঈদ নাটকের কাজ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ছোট পর্দার অভিনেতা জোভান আহমেদ বলেন, 'এ পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ঈদ উপলক্ষে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ধরেই নিয়েছি, এবার কোনো কাজ করা হবে না। যদিও হয়, সেটার সংখ্যা খুবই কম হবে। আবার শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে করতে গিয়ে, ভালো কাজও হবে না।'

একই কথা বলেছেন দেশের অন্যতম দর্শকপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমার বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকের ফুটেজ শেষ। ফলে ধারাবাহিকগুলো প্রচার বন্ধ থাকবে, অথবা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ পুনঃপ্রচার করবে। পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক না হলে, সবাই বিপাকে পড়ব। হয়তো আমার মতো কয়েকজন শিল্পী তিন-চার মাস না করে বেঁচে থাকতে পারবে। তবে স্বল্প আয়ে শিল্পীরা কিভাবে বাঁচবে?'

এদিকে শুটিং বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছেন শুটিং হাউসে কর্তৃপক্ষও। শুটিংবাড়ি মালিকদের সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, 'আমরা খুব বিপদে আছি ভাই। আমাদের শুটিং হাউসগুলোর প্রতিদিন দুই লাখের বেশি টাকা লোকসান হচ্ছে।' তিনি আরও জানান, 'ঢাকায় ২০ থেকে ২২টি শুটিংবাড়িতে শুটিং বন্ধ আছে। এসব বাড়িতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমাদের বাড়িগুলো মূলত ভাড়া নেওয়া। কীভাবে ভাড়া দেব বুঝতে পারছি না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95593 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1