মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
আগুনে ৫ রোগীর মৃতু্য

ইউনাইটেডে নামমাত্র অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা

বুধবার রাতে হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগলে একটি কক্ষে তাদের মৃতু্য হয়
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ মে ২০২০, ০০:০০
ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের পর বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন -ফোকাস বাংলা

প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নামমাত্র অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে চলছে রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল।

বুধবার রাতে হাসপাতালটির আঙ্গিনায় করোনা ইউনিটে অগ্নিকান্ডে পাঁচ রোগীর মৃতু্যর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নানা অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত দল।

তদন্ত দলেরই এক সদস্য জানিয়েছেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ২৪ ঘণ্টা একজনের থাকার কথা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় কেউই ছিলেন না। কে, কী কাজ করবে তাও নির্ধারণ করা ছিল না। এছাড়া হাসপাতালে ১১টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও তার আটটিরই মেয়াদ এক মাস আগে শেষ হয়ে গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা বলেছিলেন।

বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগলে একটি কক্ষে পাঁচ রোগীর মৃতু্য হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবদুল আহাদ।

অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে একটি

কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন ফায়ার ব্রিগেড ট্রেনিং সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবুল চক্রবর্তী, উপ-সহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ এবং বারিধারার জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন

শেষে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, এই হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্বে এক কর্মকর্তা আছেন; কিন্তু তিনি ঘটনার সময় বাসায় ছিলেন।

'ওই কর্মকর্তা বাসায় ছিলেন, ফলে সেখানে আমাদের বলার কিছু নেই, কিন্তু উনি তো ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের জন্য একটি দল গঠন করে দেবেন। উনাদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখে আমরা মন্তব্য করেছি যে, হাসপাতালের ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট নামমাত্র; কাজে কেউ ছিল না।'

হাসপাতালে কতজনের অগ্নিনির্বাপক দল রয়েছে জানতে চাইলে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, 'আমিও তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম; কিন্তু কিছুই বলতে পারে না। নতুন স্থাপিত বর্ধিত অংশেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না। মূল ভবনেরও ১১টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের আটটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক মাস আগেই।'

ফায়ার হাইড্রেন্ট ছিল কিন্তু সেটির মুখ খুলে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না আগুন লাগার পর। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে তা করেছে বলে জানান দেবাশীষ।

অগ্নিকান্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পুরোটাতেই বৈদু্যতিক লাইন দেওয়া। কোনো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না, কারণ নেগেটিভ প্রেসারের এসি ছিল; কয়েকটা এসি ছিল। এসিগুলোর ছবি তোলা হয়েছে এবং বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সবগুলো বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে কোথা থেকে আগুন লেগেছিল।'

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'এটা একটা টিনশেড। বর্ধিত অংশটি ওপরে টিন দিয়ে তার নিচে সিলিং করা হয়েছে। আর বেড়া দেওয়া হয়েছে পারটেক্স ও গস্নাস দিয়ে। এসব পদার্থ সহজেই জ্বলে।'

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'গাফিলতি বলতে চাচ্ছি না। এত মানুষ কেন মরলো? ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা কী ছিল, কী নেই? অগ্নিকান্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি, কী কী প্রয়োজন ছিল আর কী কী আছে, কী কী ছিল না, তা তদন্ত প্রতিবেদনে দিয়ে দেব।'

এদিকে নিহত পাঁচজনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবদুল আহাদ।

আর এ ঘটনায় গুলশান থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অপমৃতু্য মামলা দায়ের করেছে।

দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শুরুতে ইউনাইটেডে করোনাভাইরাসের রোগীদের ভর্তি করা না হলেও মাসখানেক আগে ভর্তি শুরু হয়েছিল।

এজন্য হাসপাতালের নিচে প্রাঙ্গণের একাংশে 'তাঁবু' খাটিয়ে করোনাভাইরাস ইউনিট স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডা. সেগুফা আনোয়ার রাতে বলেছিলেন, 'শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা তাদের। রোগীদের উদ্ধার করতে না পারার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করে তিনি বলেন, আগুন লাগার সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল, বিদু্যৎ চমকাচ্ছিল। তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আইসোলেশন ইউনিটে থাকা রোগীদের বাইরে বের করা যায়নি।'

পুলিশ উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী রাতে বলেন, 'সেখানে এসি ছিল এবং এসির স্পার্ক থেকে দ্রম্নত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এখানে যেসব উপাদান ছিল, সবই দাহ্য পদার্থ। এখানে স্যানিটাইজার ছিল, সেগুলোও দাহ্য পদার্থ। সে কারণে খুব অল্প সময়ে আগুন একটা বড় রূপ নেয় এবং পাঁচজন রোগী মৃতু্যবরণ করেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100581 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1