শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইট হাউসের কাছে বিক্ষোভ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যায় উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠানোর হুমকি ট্রাম্পের শিকাগোতে অজ্ঞাত ২ জন নিহত কারফিউ ভেঙে রাস্তায় বিক্ষোভ ৪০ জন বিক্ষোভকারী আটক
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ জুন ২০২০, ০০:০০
আমেরিকার আটলান্টায় পুলিশের টিয়ার গ্যাস ছোড়ার পরও অবিচল এক বিক্ষোভকারী -ইন্টারনেট

কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় সোমবার (১ জুন) ৭ম দিনের মতো বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ৪০টি শহরে কঠোর কারফিউ জারি করার পরও তা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা। এদিনও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এদিকে বিক্ষোভ সহিংসতা দমনে সেনা পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসসহ বিভিন্ন এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরতদের ওপর পুলিশকে টিয়ার গ্যাস ছুড়তে দেখা গেছে। মিনেসোটা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে বেশ ক'জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিক্ষোভ চলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আর শিকাগোর সিসেরো এলাকায় দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। শহরের মুখপাত্র রে হানানিয়া জানিয়েছেন, সিসেরোর বাইরে থেকে আসা দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকান্ড চালিয়েছে। তবে নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।

পুলিশি হেফাজতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল পুরো যুক্তরাষ্ট্র। টানা সাত দিন ধরে শহরে শহরে চলছে বিক্ষোভ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পাশাপাশি পুলিশি দমনের বিপরীতে চলছে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষ। ওয়াশিংটন, ডিসি ছাড়াও অন্তত ২৩টি অঙ্গরাজ্যে সক্রিয় রয়েছেন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। তবে কারফিউ জারি আর বিশেষ বাহিনী নামিয়েও লোকজনকে রাস্তা থেকে সরানো যাচ্ছে না। মৃতু্যর আগে ফ্লয়েডের বলে যাওয়া শেষ শব্দগুলোকে স্স্নোগান হিসেবে ব্যবহার করছেন অনেক শহরের বিক্ষোভকারীরা।

সিএনএন- প্রতিবেদক ড্যান সিমন জানিয়েছেন, সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে কারফিউ শুরুর আগেই বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ করছিল বলে উলেস্নখ করেন সিমন। তবে টুইটারে দেওয়া বিবৃতিতে ওকল্যান্ডের পুলিশ বিভাগ দাবি করে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভঙ্গ করেছে। ৪০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করার কথা জানিয়েছে তারা।

মিনেসোটার সেন্ট পলের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যরা সোমবার রাতে অন্তত ৬৬ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিন বিক্ষোভকারীরা মিছিল করতে করতে গভর্নর ম্যানশন থেকে ক্যাপিটলের দিকে এগিয়ে যায়। তবে রাত ১০ টায় কারফিউ কার্যকর হওয়ার পরও কিছু বিক্ষোভকারীর অবস্থানস্থল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভরতদের সরিয়ে দিতে সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে দেখা গেছে। অন্তত একটি হেলিকপ্টার বিক্ষোভকারীদের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ধূলো উড়াচ্ছিল।

হোয়াইট হাউস এলাকায়ও চলেছে বিক্ষোভ। সোমবার হোয়াইট হাউসের কাছে বিক্ষোভরতদের সরিয়ে দিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

এদিকে নিউইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট হচ্ছে উলেস্নখ করে সোমবার বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানান গভর্নর বিল দে বস্নাসিও। তিনি জানান, অনেকে বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে লুটপাট করছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, অন্যকে আঘাত করছে। তবে তার বিবৃতির পর সোমবার রাতেও অনেক দোকানের জানালার কাচ ভেঙে লুটপাট হয়েছে।

এদিকে রোববার রাতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ফেডারেল পুলিশের চালানো দমন-পীড়নকে 'লজ্জাজনক' বলে উলেস্নখ করেছেন ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বৌসের। টুইটারে তিনি লিখেছেন, 'আমি সন্ধ্যা ৭টা থেকে কারফিউ জারি করেছিলাম। কিন্তু তার ২৫ মিনিট আগেই কোনোরকমের উসকানি ছাড়াই হোয়াইট হাউসের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরতদের ওপর পুলিশ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এ ধরনের কর্মকান্ড ওয়াশিংটন পুলিশ বিভাগের কাজকে কঠিন করে তুলবে। এটা লজ্জাজনক।'

স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে ফিরে নিরাপদে থাকার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন মুরিয়েল। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পুলিশ-বিক্ষোভকারী মুখোমুখি অবস্থান সত্ত্বেও কিছু এলাকায় আবার পরস্পরের সংহতিও দেখা গেছে। আটলান্টা, ডেনভার ও নিউইয়র্কে পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের জড়িয়ে ধরতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার হাঁটু গেড়ে বসে ফ্লয়েডকে স্মরণ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছেন।

সেনা পাঠানোর হুমকি ট্রাম্পের

এদিকে বিক্ষোভ দমাতে চাপের মুখে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন পটভূমিতে বিক্ষোভকারীদের হঠাতে সেনা পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।

তিনি বলেছেন, শহরের কর্তৃপক্ষ যদি বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় অথবা ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করে তাহলে তিনি নিজেই তাদের হয়ে সমস্যার দ্রম্নত সমাধান করে দেবেন।

তিনি বলেন, 'আমি ভারি অস্ত্র সজ্জিত হাজার হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছি। তারা দাঙ্গা, লুটপাট, ভাঙচুর, হামলা ও সম্পদের যথেচ্ছ ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করবে।'

হোয়াইট হাউসে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, 'জর্জ ফ্লয়েডের নৃশংস মৃতু্যতে মার্কিন নাগরিকরা বিতৃষ্ণ হয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা তার স্মৃতিকে যেন নষ্ট না করে দেয়।'

তিনি যখন এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন ভেসে আসছিল বিক্ষোভের শব্দ। পুলিশ সে সময় হোয়াইট হাউসের কাছেই একটি পার্কে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে সরিয়ে দেয়। রোববার কাছেই একটি গির্জা পুড়িয়ে দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। কারফিউ ও অন্যান্য কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন বিক্ষোভে মদদ দিচ্ছে 'পেশাদার নৈরাজ্যবাদী' ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গোষ্ঠী অ্যান্টিফা। অ্যান্টিফা গোষ্ঠীকে তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিক্ষোভে মদদদানকারীদের 'গুরুতর অপরাধের জন্য দন্ডভোগ করতে হবে।' বক্তব্য শেষে পুড়িয়ে দেওয়া গির্জার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন ডোনাল্ট ট্রাম্প।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101129 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1