শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
করোনাভাইরাস

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেই নজর মানুষের

কোনো খাবার গ্রহণ করলে এবং ওষুধ সেবন করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, তার একটি তালিকাও প্রস্তুত করছেন অনেকে
হাসান মোলস্না
  ০৫ জুন ২০২০, ০০:০০

মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অন্যদিকে সাধারণ ছুটি বা অঘোষিত লকডাউন শেষ হওয়ায় ঘরে থাকারও আর উপায় নেই। সঙ্গত কারণে যেকোনো সময় করোনার থাবা নিজের ওপরে পড়ার আশঙ্কা করছে অধিকাংশ মানুষ। এজন্য নিজেকে বাঁচাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি সবাই নজর দিচ্ছে। কী কী কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে এবং কোনো খাবার গ্রহণ করলে এবং ওষুধ সেবন করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে তার একটি তালিকাও প্রস্তুত করছে অনেকে।

প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় প্রতিটি মানুষের বক্তব্য প্রায় একই। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ও ওষুধ দুই-ই এখনো অধরা। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানো ও মাস্ক-সাবান-স্যানিটাইজার ব্যবহার করে অসুখের সঙ্গে লড়াই করা ছাড়া এই মুহূর্তে কোনো বিকল্প পথও খোলা নেই।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে আজ বা কাল আক্রান্ত হতেই হবে ধরে নিয়েই সচেতনতার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই বেশিরভাগ

মানুষের খাবারের তালিকায় এসেছে পরিবর্তন। শরীরচর্চার পাশাপাশি খাবারের তালিকায় এমন কিছু খাবার, যা শরীরকে মজবুত করার পাশাপাশি রোগবালাই প্রতিরোধও করবে তা রাখছেন। চিকিৎসক ও গবেষকরা মতামত অনুযায়ী অনিদ্রা, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান সব কিছুই রোগ প্রতিরোধ কমিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। এজন্য এসব অভ্যাসও ত্যাগ করতে শুরু করেছেন অনেকে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাব্য যেসব ওষুধের নাম আসছে তাও সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে অনেক চিকিৎসক ও গবেষক উকুন ও খোসপাঁচরার ওষুধে করোনা দমনের দাবি করায় নির্দিষ্ট কয়েকটি ওষুধ মজুত করতে শুরু করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খাবার তালিকায় সবার আগে থাকছে তেতো খাবার। ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে নিম পাতা, নয়তো উচ্ছের ব্যবহার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কারণ এসবের অ্যান্টিভাইরাল উপাদান শরীরকে মজবুত রাখে ও বাতাসে ভেসে বেড়ানো রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। এর বাইরে শরীর গড়তে ও যে পুষ্টিগুণ শরীরকে ভিতর থেকে মজবুত করে এসব খাবার প্রতিদিনের তালিকায় রাখার চেষ্টা করছেন মানুষ। মাছ, মাংস, সয়াবিন, মসুর ডাল, ডিমের মতো প্রোটিনজাতীয় খাবার প্রতিদিন সর্বস্তরের মানুষের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। তবে যে যার সাধ্যমতো খাবার তালিকায় এসব রাখার চেষ্টা করছেন।

এদিকে ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার মতো প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে রান্নায় আয়ুর্বেদ নির্দেশিত কিছু খাবারে ব্যবহার বেড়ে গেছে। মসলাপাতি হিসেবে পরিচিত লবঙ্গ-দারুচিনি-কাঁচা হলুদের ব্যবহার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসক ও গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী রান্নায় লবঙ্গ ও দারুচিনির ব্যবহার অন্য যেকোনো সময়ে তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এসবের ব্যবহার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মহামারির বিরুদ্ধে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।

চিকিৎসকদের মতে, অনেকটা সময় পেট খালি থাকার পর এক কোয়া রসুন খেলে এর রস সহজে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে পারে বেশি পরিমাণে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ঠাসা এই সবজি রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখে। কিছু ভাইরাস ও সংক্রমণজনিত অসুখ যেমন ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি ইত্যাদি প্রতিরোধে এই সবজির ভূমিকা অনেক। শ্লেষ্মাজনিত অসুখ রুখতে কাজে আসা রসুন শরীরের রোগ প্রতিরোধের দেয়ালকেও মজবুত করে। প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ঠাসা রসুনের অনেক কার্যকরী দিক থাকায় এর ব্যবহারও বেড়েছে।

গবেষক ও চিকিৎসকদের মত অনুযায়ী ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে, শরীরকে স্বাভাবিক শক্তির জোগান দিতে ও ভিটামিন সি-খনিজের উপাদান যাতে ঘাটতি না পড়ে সেসবের দিকেও এই সময় নজর দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই প্রতিদিন সাধ্য অনুযায়ী অন্তত ১০০ গ্রাম ওজনের যেকোনো ফল খাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে ভিটামিন সি যুক্ত ফল লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, জাম্বুরার বিক্রি বহুগুণ বেড়েছে। এর বাইরে টক দইয়ের ফারমেন্টেড এনজাইম খাবার হজমের জন্য ভীষণ উপযোগী। এজন্য যারা পারছেন তারা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখছেন টক দই। পর্যাপ্ত পানি পান করার ব্যাপারে আগে মানুষের অনীহা থাকলেও করোনার সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত পানি পানের দিকে মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ শরীরে পানির ভাগ কমলে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, তেমনই ডিহাইড্রেশন থেকে হওয়া নানা সমস্যায় শরীর সহজেই ভাইরাসের শিকার হয়।

রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুয়ায়ী ভিটামিন সি ও ডি'র ব্যবহার অনেক গুণে বেড়েছে। ভিটামিন সি'র প্রাকৃতিক উৎস টক জাতীয় ফল, যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, জাম্বুরা যারা থেকে পারছেন না তারা বাজারে ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় তা দিনে ১-২ বার খাচ্ছেন। ভিটামিন ডি'র প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে সূর্যরশ্মি, যা অনেকে কাজে লাগাচ্ছেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শরীরের কিছু অংশ উন্মুক্ত করে (যেমন মুখমন্ডল, হাত বা ঘাড় ইত্যাদি) ভিটামিন ডি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিমের কুসুম, মাছের তেল, ওমেগা, গরুর কলিজা, চিজ এগুলো রাখছেন খাবারের তালিকায়।

অনেক চিকিৎসক ও গবেষক উকুন ও খোসপাঁচরার ওষুধে করোনা দমনের দাবি করায় সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ওষুধ মজুত করতে শুরু করেছেন অনেকে। বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম উকুন কিংবা খোসপাঁচড়ার ব্যবহৃত ওষুধ করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার বিষয়টি দাবি করার পরে তার নির্দেশিত ওষুধ সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করছেন অধিকাংশ মানুষ। তারেক আলমের দাবি হচ্ছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পজিটিভ রোগীর ওপর উকুন কিংবা খোসপাঁচড়ার ব্যবহৃত ওষুধ ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন প্রয়োগে অল্প সময়ে সুস্থ হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। এই ওষুধ দুটি ব্যবহারের ফলে করোনা আক্রান্ত কোভিড-১৯ পজিটিভ মোট রোগীর ৮০ শতাংশকে তিন থেকে চার দিনে সুস্থ করা সম্ভব। আর প্রথম চার দিনে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ওষুধ সেবনের পর নমুনা পরীক্ষায় প্রথম নেগেটিভ আসে। আর এই ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

এদিকে ফ্লু বা সর্দি-কাশি উপসর্গে জিংকের বেশ উপকারিতা রয়েছে। এজন্য বাজারে লজেন্স আকারে জিংক সাপিস্নমেন্টের বিক্রিও বহুগুণে বেড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101344 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1