শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লঞ্চডুবি : ৩৩ লাশ উদ্ধার তলস্নাশি অভিযানের সমাপ্তি

কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা
  ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০
উদ্ধার তৎপরতা -ফাইল ছবি

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় দুই দিনে ৩৩ জনের লাশ উদ্ধারের পর তলস্নাশি অভিযানের সমাপ্তি টেনেছে বিআইডবিস্নউটিএ। নৌ-পরিবহণ খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, 'ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমএল মর্নিং বার্ডকে টেনে সদরঘাটের কুমিলস্না ডকইয়ার্ডের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভেতরে আর কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। বেলা আড়াইটায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।' এমএল মর্নিং বার্ড নামের ওই লঞ্চটি সোমবার সকালে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের দিকে আসছিল। শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গায় ময়ূর-২ নামের আরেকটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়। সোমবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে ৩০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেন। এছাড়া স্থানীয়রা আরও দুজনকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া মঙ্গলবার দুপুরে নদীতে ডুবে থাকা লঞ্চটির ভেতরে মর্নিং বার্ডের ইঞ্জিন গ্রিজার আশিক হোসেনের লাশ পান ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। এ নৌ দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে মোট ৩৩ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। আগে পাওয়া ৩২ জনের লাশ পরিচয় শনাক্তের পর সোমবারই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লঞ্চডুবির প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর রাত সোয়া ১০টার দিকে একজনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। এখনো কেউ নিখোঁজ রয়েছেন কি না- তা স্পষ্ট নয়। সোমবার রাতভর তলস্নাশির পর এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় আবার তলস্নাশি শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ এবং বিআইডবিস্নউটিএর কর্মীরাও এই অভিযানে অংশ নেন। নদীর ৬০-৭০ ফুট গভীরে উল্টে থাকা লঞ্চটি টেনে তুলতে ১১টি এয়ার লিফটিং ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এর একেকটি ব্যাগ ৮ টন ওজন তুলতে পারে। বিআইডবিস্নউটিএর ছোট উদ্ধারকারী জাহাজ দুরন্তও এ কাজে যুক্ত ছিল। সোমবার দুর্ঘটনার পর সদরঘাটের একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে পেছন দিকে চলতে থাকা ময়ূর ২-এর ধাক্কায় তুলনামূলকভাবে আকারে অনেক ছোট মর্নিং বার্ডকে মুহূর্তের মধ্যে বুড়িগঙ্গায় ডুবে যেতে দেখা যায়। সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর ওই ভিডিও দেখার কথা জানিয়ে নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার যে ধরন, তাতে তার মনে হয়েছে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি 'পরিকল্পিত'। এ দুর্ঘটনায় 'অবহেলাজনিত মৃতু্য' ঘটানোর অভিযোগ এনে ইতোমধ্যে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক, মাস্টারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নৌ-পুলিশ। নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং বিআইডবিস্নউটিএ'র পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ৭ জনকে আসামি করে মামলা বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক, মাস্টার, সুকানিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে নৌ-পুলিশ সদরঘাট থানার এসআই মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান মামলার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে