মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে ঘরে বাড়ছে রোগী

হাসপাতালে করোনা সংক্রমণের ভয়
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

আতঙ্ক, সংক্রমণের ভয়, চিকিৎসা না পাওয়া আর ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতায় হাসপাতালমুখী হচ্ছে না মানুষ। ফলে ঘরে ঘরে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, বিশেষায়িত হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। আগে যেখানে একটি শয্যার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেখানে বেড ফাঁকা পড়ে আছে।

জানা গেছে, সংক্রমণের ভয়ে লিভারের সমস্যা, কিডনি সমস্যা, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারছেন না হাসপাতালে গিয়ে। সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিদিনের একটু একটু হঠাৎ অসুস্থতা।

চিকিৎসকরা বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত রোগী সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন না। এর নেপথ্যে করোনার পরীক্ষা, হাসপাতালে সংক্রমণের ভয়, যাতায়াতে পরিবহণ সমস্যাসহ নানা কারণ বিদ্যমান। তবে বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মার্চের পর সাধারণ রোগী কমে গিয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে রোগী বাড়ছে, যদিও সেটা খুবই কম, বলার মতো নয়।

চিকিৎসকরা আরও বলেন, 'রোগীরা যেমন হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তেমনি করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় হাসপাতালে যেতেও চাচ্ছেন না। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি না হতে পারা, স্বাস্থ্যকর্মীদের উলেস্নখযোগ্য হারে আক্রান্ত হওয়া- এসব রোগীর মধ্যে ভয় ধরিয়েছে, আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। যার কারণে হাসপাতালে রোগী কমেছে।'

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, 'শুধু মনের জোরে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী হাসপাতালে আসছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন। নয়তো হাসপাতাল তো সংক্রমণের উৎস হয়ে উঠেছে শুরু থেকেই।' তবে এজন্য ট্রায়াজ সিস্টেম না থাকা, রোগীর তথ্য গোপন, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবকে কারণ হিসেবে বলেন তিনি। এছাড়া চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের খবরে হাসপাতালগুলোর প্রতি রোগীদের ভীতি তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'শুরু থেকেই হাসপাতালগুলোতে আমরা ট্রায়াজ (কোভিড সন্দেহভাজন রোগী বাছাই প্রক্রিয়া) শুরু করার কথা বলেছিলাম। এর মাধ্যমে যদি সব হাসপাতালে কোভিড-নন কোভিড বাছাই করা যেত তাহলে হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণের এত ভয় থাকত না। এখন সেটা না হওয়ার ফলে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগী সবার মনেই আতঙ্ক কাজ করে, যার কারণে রোগীরা হাসপাতালে আসতে চাচ্ছেন না।' খুব সহসা এ অবস্থা কাটবে না বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'সরকারিভাবে এর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।'

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. কে এম মামুন মোর্শেদ বলেন, 'আগে প্রতিদিন বহির্বিভাগে তিন থেকে চার হাজার রোগী হতো, এখন সেটা হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০-এর মতো। অর্থাৎ ছয় ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।' রোগী না আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'হাসপাতাল তো করোনার আখড়া। চিকিৎসকসহ অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু এখন জরুরি হচ্ছে, ভয়টা কাটানো।'

তিনি আরও বলেন, 'মানুষ ভয়ে হাসপাতালে আসছেন না, দ্বিতীয়ত অনেকেই সরকারি হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকা ছেড়েছেন। তবে গত ৮ জুলাই থেকে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা একটু একটু করে বাড়ছে।'

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, 'সরকারি এ বিশেষায়িত হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। আগে যেখানে একটা শয্যার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেখানে বেড ফাঁকা পড়ে আছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট দরকার হয়, যেটা আসলে এখন একটা হয়রানির বিষয়, যোগাযোগও সমস্যা একই সঙ্গে। অনেক রোগীই মুভ করতে পারছেন না। তবে সবচেয়ে বড় ভয় মানসিক, হাসপাতাল থেকে করোনা সংক্রমণের ভয়।'

'হাসপাতালে গেলে করোনায় আক্রান্ত হতে হবে- এই ভয় রয়েছে এবং হচ্ছেও অনেকে' মন্তব্য করে ডা. গুলজার বলেন, 'আগে করোনা পজিটিভ না হলেও অনেক রোগী পেয়েছি যারা ভর্তি হওয়ার পর পজিটিভ হয়েছেন এবং সেটা কীভাবে হয়েছেন সেই কন্টাক্ট ট্রেসিংও করতে পারছি না। একই সঙ্গে হাসপাতালে রোগীদের করোনা পরীক্ষা হলেও তার সঙ্গে যারা থাকছেন (অ্যাটেনডেন্স) তাদের তো আর করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। তাদের অনেকেও তো ক্যারিয়ার হতে পারেন। নানাভাবেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105925 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1