শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদের অভিমত

দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অনিবার্য

হাসান মোলস্না
  ০৭ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
ডা. বেনজির আহমেদ

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বর্তমান অপরিকল্পিত অবস্থা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও দ্বিতীয়বার করোনার বড় ধরনের ঢেউ লাগা অনিবার্য।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে করোনার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে যায়যায়দিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ডা. বেনজির। সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে নিম্নমুখী করার কোনো উদ্যোগ নেই। সংগত কারণে এর তীব্রতা বৃদ্ধি না পাওয়ারও কোনো কারণ নেই। এখন যা দরকার তার কিছুই হচ্ছে না। কারা আক্রান্ত হচ্ছে তা অনুসন্ধান হচ্ছে না। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আলাদা করারও কোনো ব্যবস্থা নেই। যতটা পরীক্ষা হওয়া দরকার ছিল তা হচ্ছে না। বরং কমেছে। লকডাউনও হচ্ছে না। যেসব দেশ এর সংক্রমণ নির্মূলে সফল হয়েছে তারা এসব উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র উন্নত দেশ হলেও তাদেরও উদাসীনতা ছিল। এজন্য দ্বিতীয়বারে তাদের বড় ধরনের আঘাত এসেছে। আমরাও একই রাস্তায় হাঁটছি।

ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, কার্যকরী উদ্যোগের ঘাটতির কারণেই দেশে

করোনাভাইরাস দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও নিম্নগামী হচ্ছে না। অন্যদিকে চীন খুব কম সময়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। চীন থেকেই করোনাভাইরাসের শুরু হয়। চীনের আগে কোনো দেশেতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়নি। চীনের কোনো অভিজ্ঞতাই না থাকার পরও তারা খুব কম সময়েই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। চীন ট্রেসিং, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন এবং লকডাউনের মতো কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ায় তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া সঠিকভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই কাজগুলো সঠিকভাবে করতে না পারার কারণেই বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

করোনাভাইরাস বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের চিত্রটা হয়তো যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ভারতের মতো হতে পারে। কিছুদিন করোনাভাইরাস দম ধরে থেকে আবারও ঊর্ধ্বগতিতে যেতে পারে। করোনাভাইরাসের সেকেন্ডারি একটা ওয়েব আসতে পারে। কারণ ট্রেসিং, আইসোলেটেড, কোয়ারেন্টিন, আইডেন্টিফাই- এগুলোর কোনোটাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। অন্যদিকে লোকজনের মাস্ক পরা কমে যাচ্ছে, অফিস-আদালত খুলে যাচ্ছে, পরিবহণও চলছে। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে করোনাভাইরাস যদি নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে, সংক্রমণের ক্ষমতা কমিয়ে না ফেলে, তাহলে বাংলাদেশ সেকেন্ডারি একটা ওয়েবের দিকে যাবে। করোনাভাইরাসের মতো একটা জীবাণু তো আর বসে থাকবে না।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের করণীয় প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের সাবেক এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এখন সব থেকে জরুরি হলো করোনাভাইরাসের হট স্পটগুলোতে অনুসন্ধান চালানো, কারা ওইসব স্পটের লোকজনের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের ট্রেস করা। এখন জরুরিভিত্তিতে এন্টিজেন কিট দিয়ে দ্রম্নত করোনাভাইরাস শনাক্তের ব্যবস্থা করা। বাড়িতে বসেই যেন ১৫ মিনিটের মধ্যেই করোনা আক্রান্তদের শনাক্ত করা যায়। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রম্নত আইসোলেটেড করার ব্যবস্থা করা। ঠিক একইভাবে যারা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিন করা। মানুষের চলাচল সীমিত করা। ঠিক যেমনটা আমরা পূর্ব রাজাবাজার ও ওয়ারীতে করেছি। এগুলোর কোনোটাই তো এখন হচ্ছে না। এর বাইরে সংক্রমণ কমাতে দেশব্যাপী পেশাজীবীদের দিয়ে ৫ থেকে ৭শ বিশেষ টিম করা। এসব টিম কার্যকরী করতে সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া ও জাতীয় ডায়লগ করার মাধ্যমে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। তা নাহলে ভয়াবহতা আরও বাড়বে। কমার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107985 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1