শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪১ বছর পর পাবনার পথে পথে স্বজনের খোঁজে

নতুনধারা
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৪৩
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিন্টো কাটর্সটেন সনিকের সঙ্গে তার স্ত্রী ডা. এনিটি হোলমি হেব Ñফাইল ছবি

যাযাদি ডেস্ক ছয় বছর বয়সে পাবনা থেকে হারিয়ে যাওয়া মিন্টো নামে এক ব্যক্তি ৪১ বছর পর ডেনমাকর্ থেকে এসে স্বজনদের খেঁাজে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হারানো মা-বাবাকে খুঁজে পাওয়ার কোনো সূত্র না থাকায় দীঘির্দন ধরে ছটফট করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, অবশেষে লিফলেট বিলি, প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সহযোগিতায় পাওয়ার আশায় এসে পড়েছেন। আর একমাত্র ভরসা হলো শৈশবের একটা ছবি। পাসপোটর্ অনুযায়ী মিন্টোর পুরো নাম মিন্টো কাটর্সটেন সনিক। ড্যানিশ নাগরিক তিনি। পেশায় চিত্রশিল্পী। মিন্টোর সঙ্গে এসেছেন তার স্ত্রী চিকিৎসক এনিটি হোলমি হেব। হারিয়ে যাওয়া সম্পকের্ মিন্টোর কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই। মিন্টো বলেন, ছয় বছর বয়সে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাট এলাকা থেকে হারিয়ে যান বলে তিনি শুনেছেন। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যান ঢাকার ঠাটারীবাজার এলাকার চৌধুরী কামরুল হুসাইন নামে এক ব্যক্তি। ‘কামরুল আমাকে রাজধানীর একটি শিশুসদনে আশ্রয় দেন বলে শুনেছি। সেখান থেকে ডেনমাকের্র পালক মা-বাবা নিয়ে যান। সেখানেই কাটে আমার শৈশব-কৈশোর।’ মিন্টো সেখানে বিত্তবৈভবের মধ্যে লেখাপড়া শিখে বড় হন বলে জানান। ডেনমাকের্র নাগরিক হোলমিকে বিয়ে করেন। সংসার জীবন শুরু হয়। এখন এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার। মিন্টো বলেন, ‘আগে তেমনটা উপলব্ধি না করলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করি। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে খুব দুবর্্যবহারও করতে থাকি। মাঝেমধ্যেই মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। কোনো কিছুই ভালো লাগে না। অবশেষে স্বজনদের সিদ্ধান্তে ছোটবেলার একটি ছবি অবলম্বন করেই ছুটে আসি।’ পাবনা শহরে একটি হোটেলে থেকে ১০ দিন ধরে শহরসহ নগরবাড়ি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। রাস্তায় রাস্তায়, দোকানে দোকানে বিলি করছেন লিফলেট। বাবা-মা বা যেকোনো একজন আত্মীয়স্বজনকে যদি পান! মিন্টু বাংলায় কথা বলতে না পারলেও বুকে হাত রেখে বাবা-মায়ের কথা বোঝাতে চান। তিনি বলেন, ‘ডেনমাকের্ আমার পালক বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছি। কিন্তু আমার অন্তর বারবার কেঁদে ওঠে হারানো মা-বাবা ও স্বজনদের জন্য। “মনে হয়, তাদের পেলেই জীবনটা পূণর্ হয়ে উঠবে। আমি চোখ বন্ধ করে একটি দীঘর্শ্বাস নিলেই আমার মনে হয় আমার সেই স্বজনদের গন্ধ পাচ্ছি। বাংলা ভাষা কানে আসলে অন্য রকম এক অনুভূতি হয় আমার মধ্যে; যা আমি প্রকাশ করতে পারছি না। কিন্তু আমি বাংলা ভাষায় স্বপ্ন দেখি। পরিবার ও শেকড় থাকা প্রত্যেকের জন্যই অতীব জরুরি। এসব ছাড়া মনের মধ্যে অন্যরকম কষ্ট হয়, যা অন্যদের বোঝানো যায় না।” পুলিশ মিন্টোকে সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শামিমা আকতার। তিনি বলেন, মিন্টো ইতোমধ্যেই সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার তা করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোরও মিন্টুর পাশে দঁাড়ানো দরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে